চট্টগ্রামের শাহ আমানত সড়কের নতুন ব্রীজ থেকে মইজ্জ্যারটেক গণপরিবহনে যাত্রীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে
বলে অভিযোগ তোলেছেন সাধারণ যাত্রীরা।
এ সড়কে শুধু মাহিন্দ্রা গাড়ি বা টেম্পু নয় বাসেও আগের চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এরুটে নিয়ম নীতির কোন তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। প্রতিবাদ করলেই যাত্রীদের সাথে পরিবহন শ্রমিকরা দুর-ব্যবহার করা হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মহি উদ্দিন নামে এক যাত্রী বলেন, ‘নতুন ব্রিজের শহর কুল শহীদ বশরুজ্জামান
চত্বর থেকে ওপার মইজ্জ্যারটেক যেতেই ২০ টাকা ভাড়া লাগে। মাহিন্দ্রা
গাড়ির চালক-হেলপাররা কারো কথা মানছেন না। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের
(বিআরটিএ) ও এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ট্রাফিক পুলিশও অদৃশ্য কারণে
নীরব।’
নিয়মিত নতুন ব্রিজ সড়কে যাতায়াত করা চাকরিজীবি আলী আকরাম খাঁন বলেন,
‘নতুনব্রিজ থেকে দক্ষিণ পাড় মইজ্জ্যারটেকের ভাড়া ১০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ
করে দিয়েছেন। ৪ টা গাড়ীর ব্রিজ ভাড়া ফ্রী করে দিয়েছিলেন। শুধুমাত্র ওভার
ব্রিজ থেকে জনসাধারণের কষ্ট না হওয়ার জন্য। কিন্তু ওভারব্রিজ এ কোন গাড়ী
থাকে না। থাকলেও আর গলাকাটা ভাড়া আদায় করেন। অথচ নতুন ব্রিজ হতে পটিয়া
যেতে লাগে ২০ টাকা ভাড়া। আর আমরা ব্রিজের ওপার থেকে আসতে ২০ টাকা ভাড়া
গুনতে হয়। অনেক কর্মজীবি লোক আছে, এপার ওপার ভাড়া প্রতিদিন ৪০ টাকা খরচ
করে। মাসিক কত টাকা বেতন পায় গার্মেন্টস কর্মীরা? এসব কেউ দেখে না।’
সরজমিনে দেখা যায়, এই রুটে চলা মাহিন্দ্রা গাড়িতে উঠানামা ২০ টাকা হারে
ভাড়া নেয়া হচ্ছে। অথচ বিআরটিএর ভাড়া চার্টে সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা
নির্ধারণ করা আছে। এছাড়া এই রুটে চলা গাড়ি গুলোও সন্ধ্যার পর অতিরিক্ত
ভাড়া নিচ্ছে। তারাও মাহিন্দ্রা গাড়ির অনুসরণে ২০ টাকা হারে ভাড়া নেয়।
এদিকে গণপরিবহন শ্রমিকদের সিন্ডিকেটের কারণে যাত্রীরা জিম্মি হয়ে যাচ্ছে।
তারা বাধ্য হচ্ছে অতিরিক্তি ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে। এর প্রতিবাদ করলেই
যাত্রীদের গালগালি ও মাঝ পথে নামিয়ে দেয়ার মতো ঘটনা নিয়মিত ঘটছে।
শ্রী ধর দত্ত জানান, ‘কর্ণফুলী নদীর উপর তৃতীয় সেতু শাহ আমানত সেতু। এটি
নতুন ব্রিজ নামে সবার মুখে মুখে পরিচিত। এই নতুন ব্রিজটি দক্ষিণ
চট্টগ্রামের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু আজ পরিবহন সেক্টরের মালিক, চালক,
হেলপার এবং কর্মচারীদের কৃত্রিম সমস্যা সৃষ্টির কারণে সাধারণ জনগণকে
দুর্বিষহ দুর্ভোগ সইতে হচ্ছে। যাত্রীদের সময়ের অপচয়, টাকার অপচয়, মানসিক
যন্ত্রণা কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন ব্রিজকে যাত্রী ভোগান্তির প্রবেশদ্বার
বলে মনেহয়।’
অনেক যাত্রীরা জানান, ‘নতুন ব্রিজের এপার হতে ওপারে যেতে সময় লাগে মাত্র
৩ মিনিট কিন্তু ভাড়া নেয় ২০ টাকা। প্রায় সময় এসব মাহিন্দ্রা গাড়ি বা
টেম্পু গুলো উল্টো পথে আসে। ফলে নানা দুর্ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, এই রুটে
মাহিন্দ্রা গাড়ির কোন নির্দিষ্ট সংগঠন বা সমিতি নাই। এ সকল গাড়ি পেয়ারু
নামে একজন ব্যক্তি পরিচালনা করেন। তার প্রভাবে চালকরা তাদের নিজেদের মতো
করে ভাড়া নিচ্ছে। তার আরও জড়িত রয়েছে কর্ণফুলী এলাকার কিছু প্রভাবশালী
লোকজন। যাদের পকেটেও মাস শেষে একটা মোটা অঙ্কের টাকা পৌঁছে। কিন্তু
প্রশ্ন হলো এসব গাড়ির দুর্ঘটনার দায় ভার কে নিবে? কেননা, প্রায় সময় দেখা
যায় ১৩-১৪ বছরের কিশোররা মাহিন্দ্রা গাড়ি চালায়। যাদের কোন ড্রাইভিং
লাইসেন্স নেই। উল্টো পথে আসে।’
সিএমপি’র ট্রাফিক-দক্ষিণ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার এন এম নাসিরুদ্দিন ও
টিআই (প্রশাসন) অনিল বিকাশ চাকমা বলেন, ‘অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার কোন সুযোগ
নেই। শিগগরই নতুন ব্রিজের এপার ওপারে চালানো মাহিন্দ্রা গাড়ি ও টেম্পুর
বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি সড়কে চলাচলকারী ফিটনেসবিহীন গাড়ির
বিরুদ্ধেও অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
বিআরটিএ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী জানান,
‘বিষয়টি জেলা প্রশাসন থেকেও জানানো হয়েছে। যেহেতু যাত্রীদের হয়রানি করা
হচ্ছে। যাত্রীদের সাথে অমানবিক আচারণ করা হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। আমরা
অবশ্যই পদক্ষেপ নিব। যে সব কিশোর মাহিন্দ্রা গাড়ি চালায় বা যারা লাইসেন্স
বিহীন গাড়ি চালায় তাদের ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি(বিআরটিএ) চট্টগ্রাম এর মোটরযান
পরিদর্শক ইকবাল আহমেদ বলেন, ‘এ বিষয়ে গত মাসের জেলা আইন শৃঙ্খলা মিটিং-এ
ডিসি স্যার বলেছিলেন, মাইন্দ্রা ও টেম্পু গুলো নতুন ব্রিজের উল্টো পথে
আসে। এসব গাড়ির কোন কাগজপত্র ঠিক নাই। তখনই বিষয়টি বিআরটিএ ম্যাজিস্ট্রেট
ও ট্রাফিককে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান। আমরাও শিগগরই সে
ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ/

Discussion about this post