Print Date & Time : 28 July 2025 Monday 10:08 pm

নদীপাড়ের গ্রাম ও সরকারি সম্পদ বাঁচাতে বালির ইজারা বাতিলের দাবি  

নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারি আবাসন,ব্রিজ,ইকোপার্ক ও বাজার সহ নদীপাড়ের গ্রাম বাঁচাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কতৃক নিলামকৃত বালির ইজারা বাতিলের দাবিতে জেলা বালি ও মাটি ব্যাবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের নিকট একটি লিখিত আবেদন করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান। 

গত (১৩ মার্চ) কুষ্টিয়া কুমারখালীর ১ নং কয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হোসেন ইউনিয়ন পরিষদের প্যাডে ইউনিয়নবাসীর পক্ষ হয়ে তার নিজ নামীয় সীল দ্বারা স্বাক্ষরিত এই আবেদনটি দাখিল করেন। আবেদনের অনুলিপি  কুষ্টিয়া পওর সার্কেল বাপাউবোর ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও  কুষ্টিয়া পওর বিভাগ বাপাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এবং বাপাউবোর ভেড়ামারা ড্রেজার বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরও দেওয়া হয়েছে।

লিখিত আবেদন সুত্রে জানা যায়, গত ১৪ /০২/২০২৪ ইং তারিখে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড কতৃক  কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলাধীন রায়ডাঙ্গা ও কয়া মৌজায় গড়াই নদী থেকে ড্রেজিংকৃত বালি বিক্রয় করে অপসারনের জন্য উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। যার স্মারক নম্বর নিপ্রকু/পি-৪/২৫৯০। ইজারা দেওয়া স্থান থেকে ড্রেজিংকৃত বালি অপসারন করলে কয়া আবাসন ও কয়া ব্রীজ হুমকির সম্মুখীন হবে বলে  ইউপি চেয়ারম্যান উল্লেখ করেছেন আবেদনে। কয়া ইকোপার্ক ও কয়া বাজার নদী গর্ভে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও বালি উত্তোলনের ফলে রায়ডাঙ্গা হতে ঘোড়াইঘাট পর্যন্ত বেরিবাধ(নদীরক্ষা বাধ) ক্ষতিসাধন হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। তাই তিনি জনস্বার্থে ড্রেজিংকৃত বালির (পানি উন্নয়ন বোর্ড কতৃক) ইজারা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। 

কয়া গ্রামের স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, 
কয়া ইউনিয়নের পুরোটাই গড়াই নদীর কোল ঘেষে। এখানে নদী ভাঙ্গন রোধের লক্ষ্যে নদীরক্ষা বাধ করেছে সরকার। বাধের সাথেই নদী খননের অনেক বালি থাকার কারনে এখন নদীভাঙ্গনের অনেক ঝুকিকম। যদি এখান থেকে বালি অপসারন করা হয় তাহলে নদীর তোখর স্রোতের কারনে নদীরক্ষা বাধ ভাঙ্গনের সম্মুখীন হতে পারে। এছাড়াও ঘোড়াইঘাট থেকে শুরু করে কয়া গ্রাম পর্যন্ত নদীপাড়ের সাধারন মানুষ আতংকের মাঝে জীবন কাটাবে। অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়বে নদীপারের সরকারি আবাসন,ইকোপার্ক, বাজার সহ ব্রিজ। বর্তমানে গড়াই রেলব্রিজের বিভিন্ন জায়গায় মেইন স্ট্রাকচারের লোহায় জং ধরে মরিচা পড়েছে। ভেঙ্গে পরে গিয়েছে নাট, বোল্ট। এই ঝুকিপূর্ণ ব্রিজটির নিচ থেকে বালি সরে গেলে এটিও বড়  দূর্ঘটনার মধ্যে পরতে পারে। তাই ড্রেজিংয়ের বালি অপসারন না করার দাবি জানাচ্ছি। 
কয়া আবাসনের সভাপতি আজিবর জানান, নদী থেকে বালি অপসারণ করলে আমাদের তো ক্ষতি হয়ই। তো আমাদের এটা বলে লাভ নেই। ডিসি সাহেব সেদিন আসলো দেখেশুনে গেলো। সে যখন আমাদের কিছু বলল না আপনার নিষেধ করেন বাধা দেন। উনিই অনুমতি দিয়েছেন আবার উনিই পরিদর্শন করে গেলো সেখানে আমাদের মতো লোকের কি বলার আছে বলেন। যেখানে বালির  টেন্ডার দিয়েছে আমার আবাসন থেকে ১০০ গজ দূরে।আবাসনের পাশ দিয়েই বালির গাড়ি যাচ্ছে। এখানে আমার বলার কিছু নাই আমি বলে পিতলের ট্যাবলেট আজকাল উঠেছে সন্ত্রাসীর হাতে ওদের সম্মুখীন হতে আমি রাজি নই।কারণ হচ্ছে ডিসি সাহেব, ইউএনও সাহেব, এসিল্যান্ড সাহেব তারা নিজে থেকে এগুলোর অনুমতি দিয়ে গেলো তো আমরা বাধা দিয়ে কি করব বলেন । বালুরঘাটটি বন্ধ হলে ভালো হয়। আবাসনে মোট ২৭৪ টা পরিবার থাকে। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহীন জানান, কোটি কোটি টাকা খরচ করে সরকার নদীরক্ষা বাধ দিয়েছে। এই বালি যদি সরে যাই নদীরক্ষা বাধের সমস্যা হবে। আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে আর যে জায়গায় বালিকাটার পরিকল্পনা করছে সেটা হচ্ছে তিন নম্বর ওয়ার্ড গট্টিয়া মৌজা। যারা বালি কাটছে তাদের ডাক আছে কয়া মৌজা ও রায়ডাঙ্গা মৌজায়। আর ঘাটটা করছে কিন্তু গট্টিয়া মৌজায়। আমাদের এখানে কয়াবাজার আছে,ইকো পার্ক আছে , আবাসন আছে। আমাদের এদিকে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বাধটা দিছে সেগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাবে । এগুলা রক্ষার্থে এই বালির ঘাটটা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। 

বালির ইজারা বাতিলের আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে কয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী হোসেন বলেন,ইজারাদা দেওয়া বালি অপসারন করলে এলাকায় ব্যাপক প্রভাব পড়বে। আবাসনের উপরে প্রভাব পড়বে। তারপর রাস্তা গুলো ভেঙ্গে সব নষ্ট হয়ে যাবে। তারপর ড্রামটা চললে পারে ভেঙ্গে যাবে। কারণ যে রাস্তা সেটা তো ড্রাম ট্রাকের রাস্তা না। ১০ চাকার ড্রাম ট্রাক। রাস্তার উপরে উঠলে রাস্তা নষ্ট হয়ে যাবে। রাস্তা নষ্ট হলে আমার ইউনিয়নের মানুষ সাফারার হবে।  কয়া থেকে ঘোড়াইঘাটের পশ্চিম পর্যন্ত বস্তা দিয়ে নদী রক্ষা বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। যখন ওই বালি কাটবে তখন নদীরক্ষা বাঁধের উত্তর দিক থেকে বালি কাটবে। তাহলে উত্তর দিকে গর্ত থাকলো আর দক্ষিণ দিকে নদী আর দুইটার মাঝখানে নদীরক্ষা বাঁধ  থাকলো তাহলে তো এই বাঁধ থাকবে না। বাধ  তাহলে এমনিতেই ধসে পড়বে। বালি কাটতে কাটতে ডিপ করে চলে আসে এরা।  এক্সেবিটর দিয়ে  ডিপ করতে করতে চলে আসে।বালি কাটতে কাটতে  কয়াবাজার আর পার্ক একসাথে সেখানে যখন চলে আসবে তখন পানির ঢেউ লেগে কয়া বাজার আর পার্ক থাকবে না। এইসব রক্ষার জন্যই মূলত এই আবেদনটা আমার দেওয়া।  বালি অপসারন করতে গেলে  অনেক দিক দিয়ে ক্ষতি হবে রাস্তার ক্ষতি হবে, এলাকার ক্ষতি হবে, আবাসনের  ক্ষতি হবে, পার্কের ক্ষতি হবে, কয়াবাজারের ক্ষতি হবে,তাই আমার দাবি বালি অপসারন বন্ধ করা হোক। 

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমানের সাথে মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন , প্রথম কথা বালি অপসারন করলে চেয়ারম্যান যে অভিযোগগুলো দিয়েছে যেগুলোর ক্ষতি হবে সেগুলোর কোন সমস্যাই হবে না। সেকেন্ড কথা সরকারি কোষাগারে অনেক টাকায়  জমা হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা । সরকারি স্বার্থ আগে দেখতে হবে। আর ব্রিজ থেকে টেন্ডারকৃত বালুর দুরত্ব প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে। ড্রেজিংকৃত  বালুর সাথে রেল সেতুর কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এটাতো নদী ড্রেজ হচ্ছে না। ড্রেজিং করা যেই বালু আছে  সেটা অপসারন করা হবে। আর চেয়ারম্যানের যে অভিযোগটা ছিলো আমরা সেই চিঠি পেয়েছি আমরা চিঠির জবাব দিয়ে দেবো। 

বিষয়টি নিয়ে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোঃ এহেতেশাম রেজার সরকারি নাম্বারের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

খালিদ সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ২৩ মার্চ ২০২৪