ডেস্ক রিপোর্ট:
নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় থাকা অন্যতম একটি বিশ্ববিদ্যালয়। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রফেসর আবু ইউসুফ মোঃ আব্দুল্লাহ এর নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি অনন্য অবস্থানে দাঁড়িয়েছে।
দেনাপাওনা বুঝে নিয়ে স্বত্বহীন হওয়া সাবেক ট্রাস্টি এই ইউনিভার্সিটি জবরদখল করতে মরিয়া।
তারা গত ০৮ আগস্ট ২০২৪ শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিয়ে নর্দান ইউনিভার্সিটিতে হামলা চালাতে আসে। এসময় শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় জনগণ তাদের অপচেষ্টা রুখে দেয়। এরপর সেনাবাহিনী চলে আসলে তারা পালিয়ে যায়।
এরপর থেকে তারা মিথ্যা-বানোয়াট ও বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
এপ্রসঙ্গে, ট্রাস্ট এর সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, আমি নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর বোর্ড অব ট্রাস্টির প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। দীর্ঘ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছি। আইবিএ এর পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছি।
যারা নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার ও মিথ্যাচার করছে তারা কুচক্রী।
একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে দেশকে কিছু দেয়ার অভিপ্রায়ে ৭ (সাত) জন মিলে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজি (আইবিএটি) নামের একটি ট্রাস্ট গঠন করি। চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করি।
এই ট্রাস্ট এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল-সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি।
নিজস্ব বিনিয়োগ না থাকায় প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার মতো সংগতি আমাদের ছিল না। তাই বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হই। পরবর্তীতে ওই ঋণ সুদ-সহ বিপুল অংকে পরিণত হয়। সেই ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় আমরা ঋণখেলাপি হয়ে যায়।
এ সময় ট্রাস্ট এর কতিপয় সদস্যের অনৈতিক কার্যক্রমে আমাদের ঐক্য বিপর্যস্ত হয়ে যায়। অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে নাজুক করে দেয়।
এমতাবস্থায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর মাধ্যমে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মানের আদেশ জারি হয়। আমরা স্থায়ী ক্যাম্পাস করতে না পারায় ইউজিসি থেকে নিষেধাজ্ঞা আসে। একই সাথে নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ভর্তির বিষয়ে আসে নিষেধাজ্ঞা। মেডিকেল কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মানেরও নির্দেশনা দেয়া হয়। আর্থিক সংকটের কারনে স্থায়ী ক্যাম্পাস কিংবা মেডিকেল কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মান করা সম্ভব ছিল না। ফলে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে এই দু’টি প্রতিষ্ঠান।
ঋণ খেলাপির দায়, স্থায়ী ক্যম্পাস ও একাডেমিক ভবন করতে না পারা নিয়ে আমরা প্রতিষ্ঠান চালাতে ব্যর্থ হই।
সর্বাত্বক অচলাবস্থা কাটিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ অক্ষুণ্ণ রাখার লক্ষ্যে উপায় খুঁজতে শুরু করি। এই লক্ষ্য বিবেচনায় স্বচ্ছল কোন ব্যক্তির কাছে প্রতিষ্ঠান হস্তান্তর করার জন্য সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এই বিষয় নিয়ে অনেকের সাথে আলোচনা করি। ভঙ্গুর এই প্রতিষ্ঠানে তেমন কেউ সম্পৃক্ত হতে তখন সম্মত হয়নি।
নিরুপায় হয়ে আমার প্রাক্তন ছাত্র ও সহকর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ মোঃ আব্দুল্লাহর কাছে যায়। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অনুরোধ করি। তিনি অনুরোধ গ্রহণ করতে সন্মত হন।
অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ মোঃ আব্দুল্লাহ ট্রাস্ট এর নামে থাকা সকল ঋণ পরিশোধ করেন। ট্রাস্ট এর প্রাক্তন সদস্যরা সম্মানি এবং পারিশ্রমিক দাবি করলে তিনি তাও পরিশোধ করেন।
এরপর বিধি সম্মত ও আইনানুগ নিয়ম মেনে অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ মোঃ আব্দুল্লাহর নিকট ট্রাস্ট হস্তান্তর করা হয়। আই.বি.এ.টি ট্রাস্টের মেম্বাররা অঙ্গীকারনামা দিয়ে অব্যহতি নেন এবং সকল প্রকার দায় অধ্যাপক আবু ইউসুফ মোঃ আব্দুল্লাহ-কে দিয়ে তারা দায় থেকে মুক্ত হন।
অধ্যাপক আবু ইউসুফ মোঃ আব্দুল্লাহর অনুরোধে আমি এই ট্রাস্ট এর সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে এখনো আছি। ট্রাস্ট হস্তান্তর এর সকল দলিল, ঋণ পরিশোধের কাগজপত্র সংরক্ষিত আছে।
সাবেক ট্রাস্টিদের যে কয়েকজন অপপ্রচার চালাচ্ছেন তাদের পদত্যাগ পত্র, অঙ্গিকারনামা এবং তাদের দেনাপাওনা পরিশোধের সকল প্রমাণাদি আমাদের নিকট রয়েছে।
অধ্যাপক আবু ইউসুফ মোঃ আব্দুল্লাহ, ট্রাস্টের নামে থাকা ঋণ পরিশোধ থেকে শুরু করে আইনে অন্তর্ভুক্ত সকল প্রকার বিধি বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি দায়িত্বে থাকাবস্থায় মেডিকেল কলেজের জন্য নতুন ভবন ক্রয় করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় এর জমি ক্রয় করেছেন। স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করে ইউজিসি’র অনুমোদন-সহ অন্যান্য কর্মকান্ড করে যাচ্ছেন।
অধ্যাপক আবু ইউসুফ মোঃ আব্দুল্লাহর নিরলস প্রচেষ্টা এবং এক যুগেরও বেশি সময়ের ঐকান্তিক পরিশ্রমে এই ট্রাস্ট এবং এর আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে একটি সম্মানজনক অবস্থানে আছে। একের পর এক অর্জন নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশকে এক নতুন মাইলফলকে উন্নীত করেছে।
সম্প্রতি দেশের ঐতিহাসিক পটপরিবর্তনের পর গুটিকয়েক অসাধু প্রাক্তন ট্রাস্টি ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির তাগিদে অপপ্রচার করছেন। আমি তাদের মিথ্যাচারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ মোঃ আব্দুল্লাহ বলেন, আমি সকল আইন ও নিয়ম মেনে এই ট্রাস্ট এর দায়িত্ব নিয়েছি। পূর্ববর্তী সময়ে ট্রাস্ট -এর নামে থাকা সকল ঋণ এবং সদস্যদের দাবিকৃত সকল অর্থ পরিশোধ করেছি। এই সম্পর্কিত সকল প্রমাণাদি ও ডকুমেন্টস আমার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
আমি দায়িত্বে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে জমি কেনা থেকে শুরু করে সকল প্রকার উন্নয়ন নিশ্চিত করে যাচ্ছি। মেডিকেল কলেজের জন্য নতুন একাডেমিক ভবন ক্রয় করেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অর্থদন্ড দিয়ে দুটি ব্যাচের অনুমোদন নিয়েছি। বিগত সরকারের সময় আমাদের মেডিকেল কলেজটি নানান রাজনৈতিক বৈষম্যের শিকার হয়।
বর্তমানে একটি কুচক্রীমহল মিথ্যা-বানোয়াট, বিভ্রান্তিমূলক ও ভিত্তিহীন তথ্য অপপ্রচারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করার জন্য অনৈতিক সুযোগ সন্ধান করছেন।
এখানেই শেষ নয়, পূর্ববর্তী ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এবং ফাউন্ডার সদস্য মো : বোরহান উদ্দিন, মো: লুৎফুর রহমান এবং মোঃ আবু আহমেদ ২৭/০৭/২০১১ ইং তারিখে আইবিএটি ট্রাস্ট হইতে একযোগে পদত্যাগ করেন। সোলে সূত্রের রায় ডিগ্রির মাধ্যমে নিষ্কৃত নিষ্পত্তি কৃত বিষয় অস্বীকার করে দীর্ঘ ১২ বছর পর বহির্ভূতভাবে ট্রাস্টের শেয়ার হস্তান্তরের জন্য ২৭/০৯/২০১১ ইং তারিখে ১৭ জনের বিরুদ্ধে ঘোষণা মূলক ও চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা নির্মিত্তে দেওয়ানী মোকদ্দমা দায়ের করেন। যার নং ৮২০/ ২০১১।
পরবর্তীতে ওই মামলাটি বিবাদী গনের সাথে আপস মীমাংসার মাধ্যমে গত ১৩-১১- ২০১১ ইং তারিখে সোলেমূলে রায় ও ডিগ্রী হয়ে যায়।
এর ১২ বছর পরে সদস্যপদ পুনরায় দখলের অপচেষ্টায় ওই ব্যক্তিগণ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার দরখাস্ত করেন। যা খারিজ হয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়সহ ট্রাষ্টের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্ত করার এই সকল অপচেষ্টা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য //০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪//