Print Date & Time : 1 July 2025 Tuesday 11:39 pm

নাবালিকাকে বিয়ে করতে এসে ধোলাই খেলেন বৃদ্ধ খাদ্য কর্মকর্তা

২০২০ সালে ইসকে আব্দুল্লাহ এসএসসি পরীক্ষায় পরিদর্শকের কাজে এসে পরীক্ষার্থীর নাম্বার নিয়ে গড়ে তোলেন প্রেমের অসম সম্পর্ক। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ে ছেলে ও অসুস্থ্য স্ত্রীর নজর এড়িয়ে নাবালিকাকে বিয়ে করতে এসে বৃদ্ধ বয়সে ধোলাই খেলেন তিনি 

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় বাল্যবিয়ে করতে এসে জনতার হাতে ধোলাই খেয়েছেন ঠাকুরগাঁওর রাণী শংকৈল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইসকে আব্দুল্লাহ (৫৪)। গতকাল ৯আগস্ট মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের বড়াইকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। জনতার রোষানল থেকে ওই কর্মকর্তাকে উদ্ধার করেন রৌমারী সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালু।

স্থানীয়দের দাবি, প্রথম স্ত্রী’র ভূয়া অনুমতি সনদ ও কিশোরীকে ফুসলিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করতে আসায় ওই কর্মকর্তাকে গণধোলাই দেওয়া হয়েছে। ইসকে আব্দুলাহ দিনাজপুর সদরের সুইহারী(খালপাড়া) গ্রামের মৃত: হাফিজ উদ্দিনের ছেলে এবং তিনি ঠাকুরগাঁও জেলার রাণী শংকৈল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

শৌলমারী ইউনিয়নের ওয়ার্ড সদস্য ইউনূছ আলী বলেন, ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় শৌলমারী এমআর স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ইসকে আব্দুল্লাহ। এর সুবাদে এসএসসি পরীক্ষার্থীর সাথে কেন্দ্রে পরিচয় হয়।

এরপর শিক্ষার্থীর মোবাইল নম্বর নিয়ে কল দিয়ে গড়েন প্রেমের সম্পর্ক। সম্পর্ক গভীর হলে মঙ্গলবার (৯ আগষ্ট) সন্ধ্যার দিকে তিন সদস্যের বরযাত্রী নিয়ে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে উপস্থিত হন ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে।

তিনি প্রথম স্ত্রীর অনুমতির ভূয়া প্রত্যয়নপত্র নিয়ে দুই খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা কুড়িগ্রাম সদর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব হাসান এবং নাগেশ্বরী উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজেদুর রহমানকে হাজির হন।  সাথে আসলেও তারা বিয়ের সাক্ষী হতে রাজি হননি। তার কোনো স্বজনও সাথে আসেননি।

শিক্ষার্থীর বিয়ের বয়স না হওয়ায় তর্ক-বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এসময় স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত  হয়ে একপর্যায় তাকে গণধোলাই দেয়। এসময় জনতার রোষানল থেকে উদ্ধার করে অন্যত্র পাঠিয়ে দেন রৌমারী সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালু। 

রৌমারী সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালু বলেন, ওই কর্মকর্তা বিয়ে করতে এসে জনতার রোষানলে পড়েছেন। পরে বড় ধরনের দূর্ঘটনা এড়াতে ঘটনাস্থল থেকে তাদের উদ্ধার করে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।

অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তার স্ত্রী কামরুন আরার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,তাদের ঘরে দুই কন্যা ও এক ছেলে রয়েছে। এক মেয়ের বিয়েও দেওয়া হয়েছে। আরেক মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত। ছেলে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। তিনি আরও বলেন, তার স্বামী কিছু দিন ধরে দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য তাকে বিভিন্নভাবে চাপ দেন এবং বিয়েতে সম্মতি না দেওয়ায় তাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেন। এনিয়ে দিনাজপুর থানায় যৌতুক ও নারী নির্যাতন আইনে মামলা করা হয়েছে।

অভিযুক্ত রাণী শংকৈল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ইসকে আব্দুল্লাহ বলেন, আমার প্রথম স্ত্রীর দু’টি অপারেশনের কারনে সে শারীরিকভাবে অপারগ। ফলে আমি দ্বিতীয় বিয়ে করতে আসছি। মেয়ের বয়স কম, এটা আমার জানা ছিল না। তাই একটু হট্টগোল হয়েছে। (১০ আগষ্ট) বুধবার কোর্টের মাধ্যমে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করবেন বলেও জানান তিনি।

ওই কর্মকর্তার সঙ্গে বরযাত্রী হিসেবে আসা কুড়িগ্রাম সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব হাসান ও নাগেশ্বরী উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান বলেন,তিনি তাঁর এক আত্মীয়র বাড়িতে দাওয়াতের কথা বলে আমাদেরকে রৌমারীতে নিয়ে আসেন। পরে দেখি তিনি বিয়ে করার উদ্দেশ্যে এসেছেন। এসময় আমাদের দু’জনকেই বিয়ের সাক্ষী হতে বলেন। আমরা সরকারি কর্মকর্তা, বাল্য বিয়েতে সাক্ষী হতে রাজি না হওয়ায় স্থানীয়দের সাথে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এসময় রৌমারী সদর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালুর সহযোগিতায় আমরা ঘটনাস্থল থেকে সরে আসি।

ওই শিক্ষার্থীর বাবা বলেন,কুড়িগ্রাম সদরে ৩০শতক জমিতে বাড়ি করে দেবেন। ১০ভরি স্বর্ণাঙ্কারসহ মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে আমার কোমলমতি মেয়েকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এই সুবাদে তার প্রথম স্ত্রী’র ভূয়া অনুমতি সনদসহ দু’জন লোককে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে আসেন। এসময় গ্রামবাসীর সঙ্গে বাগবিতন্ডার একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়। 

এব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মনিরম্নল ইসলাম বলেন,রাণী শংকৈল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা দু’দিনের ছুটিতে রয়েছেন। এঘটনার বিষয়ে কিছুই জানেন বলে জানান  তিনি।

এবি//দৈনিক দেশতথ্য//আগস্ট ১০,২০২২//