Print Date & Time : 10 May 2025 Saturday 11:37 pm

নারায়ণগঞ্জে এবার কোরবানির টার্গেট ১ লাখ ২৯ হাজার গবাদিপশু

কোরবানির মাধ্যমেই ত্যাগের মহিমায় বলিয়ান হওয়ার উৎকৃষ্ট সময়। যাকে স্থানীয় ভাষায় কোরবানির ঈদও বলা হয়ে থাকে। অনেকেই এবার কোরবানি দেয়া না দেয়া নিয়ে হতাশার দোলাচলে দুলছেন। সবেমাত্র করোনাকাল গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে চলছে স্থবিরতা। তবুও অনেকেই কোরবানির প্রস্তুতী নিয়ে ফেলেছেন। কিনবেন পছন্দের গরু। আজকাল বিভিন্ন খামারেই গরু কিনে রেখে দেয়া যায়। ঈদের আগের দিন অথবা দু’দিন আগে কোরবানিদাতা খামার থেকে গরুটি নিয়ে আসেন।

গত কয়েক বছর ধরে প্রাচ্যেরডান্ডি নারায়ণগঞ্জ শহরে চালু হয়েছে ‘অনলাইন খামার’। নারায়ণগঞ্জ জেলায় এ বছরের কোরবানির টার্গেট ১ লাখ ২৯ হাজার ৪৫০ টি। চামড়া সংগ্রহের টার্গেট ১ লাখ ২৫ হাজার পিস। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় কোরবানির টার্গেট ৪০ হাজার ১২০ টি। বন্দর উপজেলায় ২০ হাজার ১০০ টি। রূপগঞ্জ উপজেলায় ২০ হাজার ৫০ টি, আড়াইহাজার উপজেলায় ২৩ হাজার ৫১০ টি এবং সোনারগাঁ উপজেলায় কোরবানির টার্গেট ২৫ হাজার ৬৭০ টি। বিশেষায়িত খামার ছাড়াও সাধারণ খামার ও কৃষকরা বাড়িতে গবাদিপশু পালন করে কোরবানির জন্য তৈরী করছে।

এদিকে নারায়ণগঞ্জে বিশেষভাবে ২৪৯৫ টি খামারে গবাদি পশুর মাংস উৎপাদনে হৃষ্টপুষ্ট করা হয়েছে ১৯ হাজার ১০২ টি গবাদি পশু। সদর উপজেলায় ৩২৩ টি খামারে হৃষ্টপুষ্টকরণ করা হয়েছে ৫ হাজার ২২৫ টি গবাদি পশু। বন্দর উপজেলায় ৪০৭টি খামারে হৃষ্টপুষ্টকরণ করা হয়েছে ২ হাজার ৫৫৮ টি গবাদি পশু। রূপগঞ্জ উপজেলায় ২২০ টি খামারে ৩ হাজার ৬৩৬ টি। আড়াইহাজার উপজেলায় ৫৬১ টি খামারে ৩ হাজার ৯৯৩ টি ও সোনারগাঁ উপজেলায় ৯৮৪ টি খামারে হৃষ্টপুষ্টকরণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৬৬১ টি গবাদিপশু।

অনলাইন খামারের মাধ্যমে গত বছর ২০২১ সালে ১০০ কোটি টাকার কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছিল বলে জানালেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা বাসনা আখতার। তাঁরমতে, নারায়ণগঞ্জ জেলায় ৩৩ টি অনলাইন খামার রয়েছে। গতবার জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ছিল ১ লাখ। কোরবানির পশু উৎপাদন হয়েছিল দেড়লাখ। ৩৩ টি অনলাইন খামারের ১০০ কোটি টাকার পশু বিক্রি হয়েছিল। শেষ মূহুর্তে এসে খোলা হাটেও পশু বিক্রি জমে উঠেছিল।

তাঁরমতে, জেলায় ৭০/৮০ টি হাট বসতে পারে বলে আলোচনা চলছে। অনলাইন খামারগুলোতে বিদেশের মত উন্নত সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান। কোরবানিদাতা চাইলে পশু জবাই করে তাঁর বাড়িতে মাংস পৌঁছে দেয়া যায়। কোরবানির দ্বিতীয় দিনেও তা সম্ভব। খামারীরা আশা করছেন তাদের সব গরু বিক্রি হয়ে যাবে। প্রতিদিনই কোরবানিদাতারা অনলাইন খামারে পশু দেখছেন ও বুকিং দিচ্ছেন।

এদিকে, ২০২১ সালে সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলায় দিনব্যাপি প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী মেলা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের আয়োজনে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্পের সহযোগিতায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রদর্শনীতে বিভিন্ন স্টলে বিভিন্ন ধরনের গরু, ছাগল, ভেড়া, হাস, মুরগি সহ গবাদিপশুর প্রদর্শন করা হয়। সমাপণী অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। দেশে পশু উৎপাদন বাড়াতেই প্রতিবছর প্রদর্শণীর আয়োজন করা হয়।

জানাগেছে, ২০২০ সালে করোনার মধ্যে দিয়েই সকল জল্পনা-কল্পনা ও আশঙ্কা কাটিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবেই উদযাপিত হয়েছিল পবিত্র ঈদুল আযহা। শেষ পর্যন্ত পশুর টান পড়ে গিয়েছিল। হাটগুলোতে পশুর বেচাকেনা ভাল হয়েছিল। কোরাবানীর সংখ্যা খুব একটা হেরফের হয়নি। ১ লাখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

সূত্রমতে, নারায়ণগঞ্জ জেলায় ২০২১ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলায় কোরবানির টার্গেট ১ লাখ। চামড়া সংগ্রহের টার্গেটও ১ লাখ। শেষ পর্যন্ত এই টার্গেটও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ২০২১ সালে জেলায় পশু কোরবানি দেয়া হয়েছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৬৩৯ টি। চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার পিস। ২০২০ সালে সরকারিভাবে ১ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের টার্গেট ছিল। সেবারের টার্গেট পূরণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বাসনা আখতার।

২০২০ সালে জেলায় মোট ৯৯ হাজার ৯৬৩ টি চামড়া সংগ্রহ হয়েছিল। এর মধ্যে গাভী/বকনা ছিল ১১ হাজার ৫৭০ টি, ষাড়/বলদ ৪৯ হাজার ১৬৯ টি ও মহিষ ৩৪৭ টি, ছাগল ৪১ হাজার ৩৫২ টি, ভেড়া ৭ হাজার ৫০৫ টি ও উট-দুম্বা ২০ টি। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় গাভী/বকনা জবাই হয়েছিল ১৩১০ টি, ষাড়/বলদ ৮৫৯৫ টি, মহিষ ৫৫টি, ছাগল ১০৪১২ টি ও ভেড়া ২৩৩৫ টি। বন্দর উপজেলায় জবাই করা হয়েছিল গাভী/বকনা ৬৫১৫ টি, ষাড়/বলদ ৭১২৪ টি, মহিষ ১৫ টি, ছাগল ২৫১৫ টি ও ভেড়া ১০৯ টি। সোনারগাঁও উপজেলায় জবাই হয়েছিল গাভী/বকনা ১০৭০ টি, ষাড়/বলদ ৭৯৮০ টি, মহিষ ৯৫ টি, ছাগল ১০৪৪৫ টি ও ভেড়া ১৩২২ টি। রূপগঞ্জ উপজেলায় জবাই হয়েছিল গাভী/বকনা ১১২০ টি, ষাড়/বলদ ৭৪১০ টি, মহিষ ৫০ টি, ছাগল ৯৮৯০ টি ও ভেড়া ২০৫৯ টি। আড়াইহাজার উপজেলায় জবাই হয়েছিল গাভী/বকনা ২০৫৫ টি, ষাড়/বলদ ৮০৬০ টি, মহিষ ১৩২ টি, ছাগল ৮০৯০ টি ও ভেড়া ১৬৮০ টি।

দ্বিগুবাবুরবাজারে মাংসপট্টিতে এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের চামড়া ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, গতবার ২০২০ সালে জেলায় এক লাখ দশ হাজার পিস পশুর চামড়া সংগৃহীত হয়েছিল। চামড়ার কারবারে লোকসান হয়নি। সেবার চামড়ার দাম উঠেছিল সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা।

৫০০ টাকার চামড়া সংরক্ষণ করতে ১০০ টাকার লবণ লাগে। মোটামুটি ৮০০ টাকা দরে চামড়া বিক্রি করতে পারলে লাভ হবে। মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কারনে ২০১৯ সালে লোকসান গুণতে হয়েছিল। ২০২০ সালে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা মাঠে নামেনি। জেলায় প্রকৃত চামড়া ব্যবসায়ীর সংখ্যা ২০০ জন। এবার প্রকৃত ব্যবসায়ীরাই মাঠে ছিলেন। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ঠিকমত চামড়া কিনতে পারেনা বিধায় লোকসান খেতে হয়। যা ২০২০ সালে হয়নি।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলায় ২০১৯ মার খেয়েছিল চামড়া ব্যবসায়ীরা। তবে এ বছর (২০২২ সাল) কোরবানির পশু বিক্রির টার্গেট ১ লাখ ২৯ হাজার। টার্গেট ছাড়িয়ে যেতে পারে। ২০ সালে চামড়ার দাম ছিল স্থিতিশীল। জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বাসনা আখতার বলেছেন, ২০১৯ সালের কারণ গুলি চিহ্নিত করে আমরা এ বছর প্রতিটি উপজেলায় চামড়া সংগ্রহকারী কসাই ও তাদের সহযোগীদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলাম। যাতে সঠিক পদ্ধতীতে চামড়া সংগ্রহ করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নামমাত্র মূল্যে কোরবানির পশুর চামড়া ক্রয়-বিক্রয়ে বাংলাদেশে ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছিল ২০১৯ সালে। ২০২০ সালেও ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ৬০০ টাকায় গরুর চামড়ার দরে হতবাক হয়েছে পশু কোরবানিদাতা ও দেশের সাধারণ মানুষ। আর প্রকৃতমূল্য না পাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের এতিম, দুস্থ মানুষ ও লাখ লাখ দরিদ্র শিক্ষার্থী।

সরকার নির্ধারিত মূল্যকে তোয়াক্কা না করে মওসুমি ব্যবসায়ীরা নামমাত্র দামে পশু কোরবানিকারীদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া কিনেছে। এ দিকে চামড়ার দাম কমে যাওয়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজি ছিল বলে মন্তব্য করেছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। আর বিভিন্ন এতিমখানা ও মাদরাসার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বিভিন্ন খাতের মতো এখানেও লুটপাট করে খাওয়ার জন্যই কাঁচা চামড়ার মূল্য নিয়ে খেলছে।

২০১৯ সালে কমদামে বিক্রি না করে কোরবানির পশুর কয়েক হাজার চামড়া সড়কে ফেলে দিয়েছিল নারায়ণগঞ্জের মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। পরের বছর ২০২০ সালে সেই চিত্র দেখা যায়নি। তবে চামড়ার দাম করোনার কারনে পড়ে গিয়েছে। ২০২১ সালে চামড়ার দাম ছিল মোটামুটি। দেখাযাক ২০২২ সালে কি হয়!

দৈনিক দেশতথ্য//এল//