ফজলুল হক, কালিয়াকৈর : গাজীপুরের কালিয়াকৈরে নারী অজ্ঞান পার্টি, নারী গরু চোরসহ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- জামালপুরের ইসলামপুর থানার চিনারচর নামাপাড়া এলাকার মৃত জাবেদ আলীর ছেলে শহর আলী (৪৩), একই জেলার সরিষাবাড়ী থানার গোপালঞ্জহাট এলাকার সোনা মিয়ার ছেলে মুকুল মিয়া (৪২), নোয়াখালীর সেনবাগ থানার জামালপুর এলাকার মৃত ছায়েদ আলীর ছেলে নুর ইসলাম (৪৫), নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁও থানার বাইশটেঙগী বরাব বাজার এলাকার শহর আলীর স্ত্রী মানছুরা আক্তার জিমি (৩০), কালিয়াকৈর উপজেলার টানকালিয়াকৈর এলাকার সোলাইমান হোসেন, তার স্ত্রী রোজিনা বেগম ও তার ছোট ভাই সামিউল।
এলাকাবাসী ও পুলিশের প্রেস ব্রিফিং সূত্রে জানা গেছে, কোরবানী ঈদকে টার্গেট নিয়ে অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, ছিনতাই, গরু চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধ চক্র মাথাচরা দিয়ে উঠে সবচেয়ে বেশি। আসন্ন এবার ঈদেও তার ব্যক্তয় ঘটছে না। কিন্তু কালিয়াকৈর থানার ওসি আকবর আলী খানের নেতৃত্বে এসব অপরাধীদের দমনে কোরবানী ঈদকে টার্গেট নিয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উপজেলার চন্দ্রা ফ্লাইওভারের নিচ থেকে মুলহোতা শহর আলী, নুর ইসলাম, মুকুল মিয়া ও মুনছুরা আক্তার জিমি নামে চারজন অজ্ঞান পার্টির সদস্যকে গ্রেপ্তার করে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে চেতনানাশক হালুয়ার পোটলা, ঘুমের ট্যাবলেট ও ১৩টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। পরে এসআই (নিঃ) মনিরুজ্জামান পিপিএম বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় কালিয়াকৈর থানায় প্রেস ব্রিফিং করেন গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কালিয়াকৈর-শ্রীপুর সার্কেল) আজমীর হোসেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন- কালিয়াকৈর থানার ওসি আকবর আলী খানসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা। ওই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ঈদকে টার্গেট করে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা সক্রিয় হলেও নির্বিঘ্ন ঈদ উদযানে পুলিশও তৎপর আছে। গ্রেপ্তারকৃত অজ্ঞান পার্টি চক্ররা পূর্ব পুরুষ থেকে এ কাজে জড়িত। তাদের নামে বিভিন্ন জেলার থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া থেকে মহাসড়কে চলাচলরত যাত্রীবাহী বাস টার্গেট করে। পরে অজ্ঞান পার্টি চক্রের ৭/৮ জন সদস্য ওই বাসে যাত্রীভেসে উঠে। এসময় তারা নানা কৌশলে যাত্রীদেরকে তাদের তৈরি হালুয়া খাওয়ান। এটা খেয়ে যাত্রীরা অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাদের টাকা-পয়সা, স্বর্ণাংকার, মোবাইলসহ সর্বস্ব লুটে নেয় চক্রটি। ওই চক্রের সবচেয়ে বেশি টার্গেট থাকে গরু ব্যবসায়ী। তবে অপরিচিত কারো কাছ থেকে কিছু না খাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
অপর দিকে ঈদকে টার্গেট করে বিভিন্ন এলাকায় গভীর রাঁতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে চোর চক্র। শুধু রাতেই নয়, দিনে-দুপুরেও গরু চুরির ঘটনা ঘটছে। গত ৩০ মে বিকেলে টানকালিয়াকৈর এলাকার জাকির হোসেনের একটি গরু বাড়ির পাশ থেকে চুরি করা হয়। অনেক খোঁজাখোজি করে পাশের হাঠুরিয়াচালা এলাকায় ওই গরুসহ তিন চোরকে আটক করে। পরে আটককৃত সোলাইমান হোসেন, তার স্ত্রী রোজিনা বেগম ও তার ছোট ভাই সামিউলকে পুলিশে সোপর্দ করে এলাকাবাসী। গত বুধবার দুপুরে মহাসড়কের গোয়ালবাথান এলাকায় রেলওভার ব্রিজের পাশ থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ফারইস্ট লিমিটেড নামে পোশাক কারখানার চার লাখ ৩৭ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন লুট করে ছিনতাইকারীরা। এ ঘটনায় ওই কারখানার চিফ একাউন্টস অফিসার আজিজুল হক বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ করেন। তিনি ব্যাংক এশিয়া কালিয়াকৈর শাখা হতে টাকা তোলে কারখানায় যাওয়ার পথে ওই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
এসব বিষয়ে প্রেস বিফিংয়ে গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজমীর হোসেন বলেন, ব্যাংক থেকে টাকা তোলার পর ছিনতাই
হলে অনেকে থানায় অভিযোগ করে না। তবে ৫ লাখ টাকার বেশি টাকা উঠালে পুলিশকে অবগত করার জন্য ব্যাংগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। গরু চুরি রোধে বিভিন্ন সড়কে কমিটি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ কমিটিকে আমাদের বিট পুলিশ অফিসার তদারকি করবেন। ঈদকে টার্গেট করে সব অপরাধ দমনে কাজ করছে পুলিশ।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//