চট্টগ্রাম কর্ণফুলীতে চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের নির্বাচন ১৫ জুন। এ নির্বাচনে বিএনপি দল মাঠে যেমন নেই, তেমন ভোটেও নীরব। কিন্তু তাঁরা ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান নিয়ে আছে। যদিও শক্তিশালী দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা সক্রিয় আছেন। সাধারণ লোকজন রয়েছে নিরপেক্ষভাব নিয়ে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী এক, কিন্তু যত কথা বলুক না কেন? তাঁদের নেতারা এখনো নানা দ্ব›েদ্ব বিভক্ত।
ইভিএম পদ্ধতিতে এই ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ভোটের এই সমীকরণের বাইরে আরেকটি পক্ষ প্রশাসন। ভীতি ও ঝুঁকির আলোচনা সামনে আসছে একই স‚ত্রে। ফলে নির্বাচনে ভোটের চিত্র কী হবে তার জন্য শেষ মুহ‚র্ত পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে। অনেকের চোখ আবার ২৬ তারিখ মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিকে।
রবিবার দিনভর চরপাথরঘাটা এলাকার স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সুধীসমাজ, প্রার্থীদের ঘনিষ্ঠজন এবং নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে, নীরব ভোটারদের হাতেই রয়েছে ছাবের হাজীর ভাগ্য! তিনি দুবারের চেয়ারম্যান আনাচে কানাচে ভোট ব্যাংক। কিন্তু সঠিক ভাবে ভোটারকে জাগিয়ে তুলতে মাঠে তিনি তেমন সক্রিয় নন।
অপরদিকে, নৌকার প্রার্থীর দম ফেলানোর সময় নেই। প্রচার প্রচারণা ও মানুষের দ্বারে দ্বারে ভোট প্রার্থনা করছেন তিনি। নৌকা পাওয়ায় পর থেকেই মোঃ সেলিম হক মাঠে প্রচুর সময় দিচ্ছেন। সেদিক হতে পিছিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজী ছাবের আহমদ। যদিও তিনি অসুস্থ বলে খবর পাওয়া যায়।
ওদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে জয়ী হওয়ার মতো জোয়ার তুলতে পারছেন কি না সে প্রশ্ন থাকছে। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন। বহিরাগতদের এলাকায় আনার সম্ভাবনাও করেছেন। আশঙ্কা জানিয়েছেন ভোটের আগের দিন গ্রেপ্তার ও ভয়ভীতিমুক্ত থাকবে কি না, তা নিয়ে। ভোটের আগের রাতের পরিবেশ নিয়েও চলছে নানা আলোচনা।
অন্যদিকে, নৌকার প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সেলিম হকের পক্ষে আওয়ামী যুব লীগের সকল পদপ্রত্যাশী নেতাদের সরব উপস্থিতি, নৌকার প্রার্থীর উঠোন বৈঠকের বিপরীতে হাজী ছাবের এর কর্মীসমর্থকদের ‘আওয়াজ’ তুলনাম‚লক কম। বিএনপি প্রকাশ্যে না থাকায় অনেকেই প্রকাশ্যে নেই। ভোটের আগ্রহও কম নারী ভোটারদের।
তবে চরপাথরঘাটা ১নং ওয়ার্ডের সেলিম ও আবদুল হক নামে দুজন সাধারণ ভোটার প্রতিবেদককে বলেন, ‘চরপাথরঘাটার চেয়ারম্যান হাজী ছাবের আহমদ খুব শিক্ষিত না হলেও একজন ভালো জনপ্রতিনিধি। অনেক জায়গায় চেয়ারম্যানের ছেলে এবং আত্বীয় স্বজনেরাও চেয়ারম্যান হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে কিন্তু হাজী ছাবের আহমদের কোন ছেলে বা আত্বীয়রা সাধারণ মানুষকে চেয়ারম্যানের ক্ষমতা বলে জাহির করেনি। এলাকায় কাউকে হয়রানি করেনি। এমনকি নিজেকে কখনো চেয়ারম্যানের ছেলে বলেও অহংকার করে পরিচয় দেননি। এরা নিতান্তই ব্যবসামুখী।’
তাঁরা বলেন, ‘যদি নৌকার প্রার্থী সেলিম হকের কথা বলেন। তাহলে বলব উনি একজন তরুণ সামাজিক সংগঠক, কখনো মেম্বার বা জনপ্রতিনিধি ছিলেন না। আবার শুধু সমাজ নয়, ইউনিয়নেও সৃষ্টিশীল কিছু করার ক্ষমতা ও জ্ঞান, বুদ্ধি সেলিম হকের রয়েছে। আমরা আশা করি তিনি নির্বাচিত হলেও আমরা সেটা পাব। কিন্তু উনার পিছনের লোকজন গুলো যেন পরে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করতে না পারে। সে বিষয়টি উনাকে বুঝতে হবে।’
জানা গেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভোট ব্যাংক হিসেবে রয়েছে এলাকার খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের ভোট। এর বাইরে তাঁর মাথার ওপর পরিবারের বড় ভাই শেখ সাহেবের ‘ছায়া’ রয়েছে। যিনি একজন দানশীল প্রবীণ আওয়ামী লীগ। এলাকায় তাঁর অনেক সুনাম। ফলে, এই ভোট ব্যাংক কেন্দ্রে আনতে পারলে হাজী ছাবের আহমদের ভোটের হিসাব পাল্টেও যেতে পারে।
সুষ্ঠ ভোট নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আব্বাস নামে স্বতন্ত্রপ্রার্থীর এক কর্মী বলেন, ‘নেতাকর্মীদের বাড়িতে তল্লাশি ও এজেন্টদের হুমকি দিলেও আমরা মাঠ ছাড়ব না। আমরা নির্বাচনে থাকব। তবে ২৬ তারিখ যদি আমাদের প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহারে করেন। তাহলে ভিন্ন কথা।’
ভোটের মাঠে ভিন্ন বিশ্লেষণও আছে। অনেকেই বলছেন, ইসির প্রধান কমিশনারের বাড়ি চট্টগ্রামে। সুতরাং নির্বাচনে অনিয়ম হলে কাউকে ছাড় দেবেন না। আবার কারো কারো বক্তব্য হচ্ছে, বিএনপি মাঠে থাকলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বেপরোয়া থাকত। এখন তিন প্রার্থীই আওয়ামী লীগ নেতা। সুতরাং প্রশাসন নিরপেক্ষ হলে জনগণ ভোটের আমেজ পাবেন। নয়তো জৌলুস হারাবে নির্বাচন।’
আর//দৈনিক দেশতথ্য//২২ মে-২০২২

Discussion about this post