নেছারাবাদে উপজেলা সহকারী পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে ডিজি অফিসের কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করাসহ নানা ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তিনি বয়স জন্মস্থান গোপন করে চাকুরী করে চাকুরী নিয়েছিলেন। তিনি ডিজি অফিসের কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করে ভুঁয়া চিঠি বানিয়ে নিজের স্থগিত হওয়া উচ্চতর বেতন স্কেলে বেতন ও ইনক্রিমেন্ট উত্তোলন করেছেন। একই ভাবে ভুয়া নিয়োগপত্র বানিয়ে বিভিন্ন জনকে চাকুরী দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি নিজ অফিসে চাকরি সংক্রান্ত তথ্যাদি জমা দেননি।
জানাগেছে, মো.হুমায়ুন কবির ১৯৬৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর জন্ম গ্রহন করেন। জন্মের পরে মাত্র ১৯৮৭ সালের ১ মার্চ টি,এফ,পি,এ পদে চাকুরীতে যোগদান করেন। সে অনুযায়ী তিনি ১৮ বছর ২ মাস তিন দিন বয়সে সরকারি চাকুরিতে যোগদান করেন। যা বাস্তবে সম্ভব নয়।
তার জন্মস্থান বরগুনা। তিনি চাকরি নিয়েছেন সিরাজগঞ্জ জেলার কোটা থেকে। ব্যাক্তিগত ডাটার তথ্য মতে তার স্থায়ী ঠিকানা বরিশালের কোতওয়ালী থানার ২৪ নংওয়ার্ডের (রূপাতলী) আব্দুল হামিদ খান সড়কে। তিনি ১৯৮৬ সালে এইচ এসসি পাশ করে ১৯৮৭ সালে চাকুরীতে যোগদান করেন। চাকরিরত অবস্থায় ১৯৮৯ সালে বিএ, ১৯৯২ সালে এমএ এবং ১৯৯৫ সালে এলএলবি পাশ করেন। যা নিয়ে তার খোদ কর্মস্থলে সহকর্মীদের মধ্য রয়েছে বিস্তর কানাগুষা।
এসব বিষয়ে খোজ নিতে বরিশাল বিভাগীয় কর্মকর্তার নির্দেশে তার চাকুরি সংক্রান্ত তথ্যাদি ও যাবতীয় কাগজপত্রাদি প্রেরনের তথ্যাদি চেয়ে মেডিকেল অফিসার (এমসিইচ-এফপি) ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়ীত্ব) ডা. মো. গিয়াসউদ্দিন খান বরাবর চিঠি দিলেও হুমায়ূন কবির কোন কাগজপত্র জমা দেননি।
এ বিষয়ে ডা. গিয়াসউদ্দিন খান বলেন, উপজেলা সহকারী পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কাই করেন না। আমি বর্তমানে অবসরে গিয়েছি। সুতরাং এখন আর কি বলব?
জানাযায়, হুমাউন কবির গোপালগঞ্জে চাকুরিরত সময়ে তার স্থগিত হওয়া উচ্চতর বেতন স্কেল ও ইনক্রিমেন্ট ডিজি অফিসের কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করেন। পরে ভুঁয়া চিঠি তৈরি করে উপজেলা হিসাবরক্ষন অফিস থেকে টাকা উত্তোলন করেন। ওই চিঠি সঠিক নয় মর্মে ডিজি অফিস থেকে বার্তা পেয়ে হিসাব রক্ষন অফিস থেকে টাকা ফেরত দিতে বললে তিনি উত্তোলন করা টাকা ফেরত দেন। বিষয়টি উপজেলা হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা মো. আব্দুল হালিম বিষয়টি নিশ্চিত করেন ।
অফিসসূত্রে জানাগেছে, তার অপকর্মের বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ আবু বকর ছিদ্দিক গত ২৪ ফেব্রুয়ারী তদন্ত করেছেন। এছাড়াও ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে ভান্ডারিয়া উপজেলার গৌরিপুরে ফার্মাসিষ্ট পদে মো. শহিদুল ইসলাম, কাউখালী উপজেলার সয়না রঘুনাথপুরে ফার্মাসিষ্ট পদে শাহানাজ আক্তার ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসে অফিস সহায়ক পদে মো. আসাদুল আলম এবং গৌরনদী উপজেলায় ফার্মাসিষ্ট পদে মো.মাহাবুবুর রহমানকে চাকুরী দেন। এরা সকলেই হুমায়ুন কবিরের নিজ এলাকার বাসিন্দা। অভিযোগ রয়েছে ওই ব্যাক্তিদের কাগজপত্রও তিনি তৈরি করে দিয়েছেন।
এ সব অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য স্থানীয় সাংবাদিকরা ৩ দিন তার অফিসে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ৪র্থ দিনে অফিসে গেলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার জন্য তারিখ দিয়েও সেদিন ব্যক্তিগত ছুটির কথা বলে অফিসে আসেননি। এমনকি পরে তাকে বহুবার ফোন দিয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি। পরে তার ফোনে একাধিকবার ফোন দিলে কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, আমি ছুটিতে আছি।
তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সমুহের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার নিজ জেলা বরগুনা, লেখাপড়া করেছি সিরাজগঞ্জ থেকে। সে কারনে সিরাজগঞ্জ জেলা কোটায় চাকুরী পেয়েছি। ব্যাক্তিগত ডাটায় স্থায়ী ঠিকানা বরিশাল শহরে কেন? এমন এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন আমার বরিশালে বাড়ী রয়েছে। পরে তার জন্ম তারিখ, চাকুরীতে যোগদানের তারিখসহ বাকি অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পরে কথা বলনেন বলে লাইন কেটে দিয়ে আর কথা বলেননি।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়ীত্ব) জহর বালা নলেন, তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ। যাহা নিয়ে আমরা অফিসে বিব্রতকর অবস্থায় আছি।
এ বিষয়ে পিরোজপুরের উপ-পরিচালক দীলিপ কুমার দাসের সাথে কথা বললে, তিনি জানান, লোকটি কোন কথা শোনেন না বলে উপজেলা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। অফিসিয়াল নির্দেশ মানতে কর্মকর্তা কর্মচারীগন বাধ্য। কিন্ত তার বিষয়টি এখনো বুঝে উঠতে পারছি না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে এবং এগুলোর পর্যায়ক্রমে তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//১১ মার্চ, ২০২২//