নেছারাবাদ(পিরোজপুর)সংবাদদাতা: পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার মিয়ারহাট বন্দরের কালিবাড়ী খালমুখে জমে ওঠেছে ঐতিহ্যবাহী ভাসমান তরমুজের হাট। এ বছর চাহিদার তুলনায় তরমুজের কম ফলনে বেশি দামে হাসি ফুটেছে ব্যবসায়ি ও চাষিদের মুখে।বৃহস্পতিবার দুপুরে তরমুজের হাট ঘুরে এমনটা জানাগেছে ব্যবসায়িদের কাছ থেকে। ব্যবসায়িরা জানান, হাটে আসা যে বড় তরমুজ গেল বছরও দাম ছিল ২৫০-২৭০ টাকা। সেই তরমজু এবছর বিক্রি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায়। ব্যবসায়িরা বলছেন এমনিতে রোজা, তার উপরে ওষ্ঠাগত গরমের কারনে তরমুজের চাহিদা বেশি। যে কারনে চাহিদার তুলনায় কম ফলনে তরমুজের দাম অনেকটা বেশি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে খাল ঘুরে দেখা যায় ট্রলার ভর্তি ঠাসা তরমুজ। যে কেউ দেখলে মনে হনে যেন তরমুজের রাজ্য। খালের যতদূর চোখ যায় কেবল তরমুজ আর তরমুজ। চৈত্রর মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে ভরা জৈষ্ঠ্য মাস পর্যন্ত সপ্তাহে দু’দিন চলে তরমুজ বেচাকেনা। ব্যস্ততম ওই খালে অসংখ্য তরমুজভর্তি ট্রলার থাকে। যে কারনে হাটের সময় খাল দিয়ে অন্যকোন ট্রলার বা নৌকা যেতে পেরুতে কষ্টকর হয়ে পড়ে। প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার দু’দিন বসে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ভাসমান তরমুজের হাট। হাটে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তরমুজ বিকিকিনি।
স্থানীয়রা জানান, দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে ব্যবসায়ি ও চাষীরা তরমুজ এনে শতমুলে বিক্রি করেন এ হাটে। ব্যবসায়িরা চাষীদের কাছ থেকে তরমুজের ক্ষেত কিনে এনে আকার ও সাইজ অনুযায়ি বিক্রি করেন শত মুলে। অত্র উপজেলা সহ পাশ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলার লোকেরা ট্রলার ভর্তি শত শত তরমুজ কিনে চালান করেন রাজধানি সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। একইসাথে অনেক খুচরা ও পাইক্রারি বিক্রেতারা এখান থেকে তরমুজ কিনে বিক্রি করেন উপজেলার বিভিন্ন হাটে বাজারে। তরমুজের আকারনুযায়ি ৬০ টাকা থেকে ৩২০ টাকা পর্যন্ত প্রতি পিস তরমুজ বিক্রি হয়।
পাশ্ববর্তী নাজিরপুর উপজেলার গাওখালি বাজার থেকে ট্রলার নিয়ে তরমুজ কিনতে আসছিলেন আব্দুল হালিম(৪২)। তিনি হাটে এসে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘোরাঘুড়ি করেন তরমুজ কেনার জন্য। তিনি বলেন,গত বারের তুলনায় এ বছর ফলন কম হওয়ায় তরমুজের দাম বেশি। হাটে বড় সাইজের একশত তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ত্রিশ হাজার টাকায়। তাতে প্রতি পিস তরমুজের দাম পড়ে ৩ শত টাকা। তিনি বলেন তিনশত টাকার একটি তরমুজ কিনে বাজারে নেওয়া পর্যন্ত সেই তরমুজটির প্রতি খরচ পড়ে আরো চল্লিশ টাকা। তারপর সেই তরমুজ কয়টাকায় বিক্রি করতে হয়?
উপজেলার জগৎপট্টি গ্রামের তরমুজ ব্যবসায়ি মোস্তফা জামাল(৪৪) জানান, তিনি সহ তারা পাচজনে হাট থেকে তরমুজ কিনে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে পাঠান। এখান থেকে শত হিসাবে প্রতিটি বড় তরমুজ তিনশত বিশ টাকায় শত হিসেবে কিনে প্রতি ট্রলারে ৭-৮ হাজার তরমুজ পাঠান কুমিল্লায়। প্রতি ট্রলারে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা তার খরচ হয়। খরচপাতি বাদ দিয়ে প্রতিট্রিপে কিছুটা লাভ হয়। তবে তিনি বলেন এবছর তরমুজের ফলন একটু কম হওয়ায় চাষীরা বেশি লাভবান হচ্ছেন।
পটুয়াখালির মুনসিরহাট থেকে হাটে ট্রলার ভর্তি তরমুজ নিয়ে আসা মো: আলমগীর জানান, তারা জানান, চাষীদের কাছ থেকে এক কানি(তিন বিঘা) জমির তরমুজ কিনেন সাড়ে ছয় লাখ থেকে সাত লাখ টাকায়। তিনি আরো বলেন, এক কানি জমিতে ২ হাজার ৫ শত থেকে ৩ হাজার ৫ শত তরমুজ পাওয়া যায়।
হাটে আসা মলুহার গ্রামের আড়ৎদার আবুল কালাম(৬৮) জানান, ব্যবসায়িরা দক্ষিণাঞ্চলের জেলা পটুয়াখালি, বরগুনা,ভোলা, কলাপাড়া,মহিপুর,মুনসিরহাট,রাঙাবালি,তালতলি,গলাচিপা,কালাইয়া প্রভৃতি এলাকা থেকে তরমুজের ক্ষেত কিনে ট্রলার ভরে তরমুজ নিয়ে আসেন এখানে। তারা মৌসুমের শুরুতে ক্ষেতে তরমুজের গুটি দেখে ক্ষেতমুলে তরমুজ কিনেন। তরমুজ বড় হলে মৌসুমে শুরু থেকেই তারা ট্রলার ভরে তরমুজ এনে বিক্রি করেন অত্র উপজেলা সহ বিভিন্ন উপজেলার হাটে।
সোহাগদল গ্রামের তরমুজ ব্যবসায়ি আব্দুল মন্নান(৬৫) বলেন, শত বছর ধরে মিয়ারহাটের কালিবাড়ি খালে ভাসমান তরমুজের হাট বসছে। প্রতি হাটে ৬০ লাখ টাকা থেকে কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হয় এখানে। ব্যবসায়িরা জানান, তরমুজের হাটে চাষী ও ও বেপারিরা ইচ্ছেনিযায়ি মাল কিনতে বা বেচতে পারেন। এখানে কোন ডিন্ডিকেট নেই। হাটের পরিবেশ সুষ্ঠ রাখতে বন্দর কমিটি তাদের সর্বাত্মক নিরাপত্তা দিচ্ছেন।

Discussion about this post