Print Date & Time : 11 May 2025 Sunday 1:38 am

সাড়ে তিন ঘন্টার মধ্যে ঢাকায় পৌঁছাচ্ছে কুড়িয়ানার পেয়ারা

 পিরোজপুরের নেছারাবাদের কুড়িয়ানার পেয়ারা আগে বার ঘন্টার পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকায় পৌঁছাতো। এখন সাড়ে তিন ঘন্টায় যাচ্ছে ঢাকায়। ফলে পেয়ারায় নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন চাষী ও ব্যবসায়ীরা।

নোয়াখালীর বাবুল মিয়া ১২ বছর ধরে পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানায় পেয়ারার ব্যবসা করেন। পেয়ারা মৌসুমে ট্রলার ভরে ক্যারেটে করে পেয়ারা পাঠান নোয়াখালিতে। আড়তে সেই পেয়ারা পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করেন তার লোক। চাষীদের কাছ থেকে পেয়ারা কিনতে তার তেমন বেগ পোহাতে হতোনা। ৩৪০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা মন দরে তিনি পেয়ারা কিনতেন।

বাবুল মিয়া বলেন, প্রতি সোম ও শুক্রবার বসে পেয়ারার হাট।  এ বছর পেয়ারার দাম বেশি। গত সোমবার (১৮ জুলাই) ১০০-১৫০ টাকা বেশি দিয়ে আড়ৎদারের মাধ্যমে পেয়ারা কিনেছি। আমি ট্রলারে করে নোয়াখালিতে পেয়ারা পাঠায়। পদ্মা সেতু চালু হওয়াতে হাটে বেপারী বেশি আসছে। সবাই গাড়ীতে করে পেয়ারা কিনে সাড়ে তিন থেকে চার ঘন্টায় পেয়ারা পাঠাচ্ছেন রাজধানিতে। 

এ বছর বেপারির সংখ্যা বেশি হওয়ায় পেয়ারার দাম বেশি। একই কথা বলেন পেয়ারর আড়ৎদার সহিদ হোসেন(৪৫)। কুড়িয়ানার পেয়ারা নেছারাবাদ(স্বরূপকাঠি)উপজেলার ঐতিহ্য। আমি শত শত মন পেয়ারা কিনে দেই দূর-দূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়িদের। বাংলা আষাড় শ্রাবণ ও ভাদ্র এই তিন মাস পেয়ারার ভরা মৌসুম। পূর্বে এমন দিনও গেছে। ব্যবসায়িরা এখান থেকে গাড়ী বোঝাই করে যে পেয়ারা ঢাকায় পাঠাত। সেই পেয়ারা ঢাকায় পৌছাতে ১৬-১৭ ঘন্টাও লেগে যেত। এখন পদ্মা সেতু চালু হওয়াতে বিশেষ করে চাষীরা বেশি সুফল পেয়েছে। তারা এ বছর মন প্রতি পেয়ারায় ১০০-১৫০ টাকা বেশি পাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, তবে সেতুতে বিশেষকরে কাচামালে যদি সরকার একটু টোল কম নিত। তাহলে ব্যবসায়িরা একটু লাভবান হত।

কৃষি কর্মকর্তা চপল কৃষ্ণ নাথ জানান, আগে লঞ্চে করে কাচামাল ঢাকায় নেয়া হতো। যারা গাড়ীতে করে কাচামাল নিত তাদের পথে পথে খরচ দিতে হতো। ফেরী পারাপারে দুর্ভোগের সীমা ছিলনা। তাই ভরা মৌসুমেও পেয়ারার দাম চলত পানির দামে। একারনে চাষীরা পেয়ারা চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছিল। 

এ বছর পদ্মা সেতু চালু হওয়াতে পেয়ারা বিক্রিতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। উপজেলায় মোট ৬৬০ হেক্টর জমিতে পেয়ার চাষ রয়েছে। উপজেলার ২৪ টি গ্রামের চার হাজার লোক বিভিন্নভাবে পেয়ারা চাষে জড়িত। এর মধ্য উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়নের কুড়িয়ানা,ধলহার, আদমকাঠি, বাস্তকাঠি, জিন্দাকাঠি, আটঘর, ভঙ্কুরা, ব্রাক্ষ্মনকাঠি, হরিহরকাঠি, আদাবাড়ী, রাজাপুর ও আন্দাকুল বারটি গ্রামে উল্লেখযোগ্য পেয়ারা চাষ রয়েছে। 

আটঘর গ্রামের পেয়ারা চাষী রমেন মিস্ত্রী(৫০) বলেন, এ বছর উপযুক্ত বর্ষা না পাওয়ায় পেয়ারার আকার একটু ছোট হয়েছে। তবে এই প্রথম এ বছর পেয়ারার দাম ভাল পাচ্ছি। গেল বছরে এ সময়ে যে পেয়ারার মন বিক্রি করেছি ৩৪০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করেছি। সে পেয়ারা এখন মন বিক্রি হচ্ছে ৫২৫ থেকে ৫৫০ টাকায়। 

রমেন বলেন, পদ্মা সেতু হওয়াতে অনেক লোকও পেয়ারা ব্যবসায় নেমেছেন। তারা সকালে মাল কিনে বিকেলে ঢাকা রওয়ানা করে রাত ৯ টায় পৌছে। মাল বিক্রি করে সকালে রওয়ানা করে বিকেলে পৌছে আবার পেয়ারা কিনে সেই গাড়ীতে ঢাকায় যায়। যে কারনে পেয়ারার দাম বেশি। আমার ৫০ টি পেয়ারা কাধি আছে। প্রতি বছর দুই লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করতাম। এবছর দাম ভাল হওয়ায় সেই পেয়ারার কাধি থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা বেচার আশা রাখছি। তবে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু পার হতে পেয়ারার গাড়ীতে নাকি বেশি টোল দিতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো পেয়ারার দাম কিছুটা কমতে পারে। কারন ব্যবসায়িরা না আসলে আমরা বাচবোনা।

আটঘর কুড়িয়ানা  ইউপি চেয়ারম্যান মিঠুন হালদার বলেন, পেয়ারার আদিবাস ভূমি আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়ন। ২০০ বছর পূর্ব থেকে এখানকার বেশির ভাগ লোকজন পেয়ারা, আমড়া,লেবু চাষে জড়িত। এখানকার পেয়ারার পরিচিতি দেশ থেকে দেশের বাহিরে। একসময় এখানকার পেয়ারা চাষীরা খুবই র্দুদিনে ছিল। সেতুর টোল কমালে পেয়রা চাষী ও ব্যবসায়ি লাভবাবন হবে।

আর//দৈনিক দেশতথ্য//২২ জুলাই-২০২২//