সুদীপ্ত শাহীন, লালমনিরহাট ।।নদীর দুই পাড়ে হাজারো মানুষের আনাগোনা শুরু হয় সকাল হতে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা নদীর দুই পাড়ে লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। নদীর দুই পাড়ে তিলধারণের ঠাঁই নেই। নদীর দুই পাড়ে শতবর্ষী রেলসেতুটিও মানুষের ভীড়ে নুয়ে পড়ার উপক্রম। রেলসেতুটির সবখানে মানুষ আর মানুষ। উৎসব মুখর পরিবেশে নৌকা বাইচ দেখতে এই উপচে পড়া ভীর ।
এমনই মনোমুগ্ধকর পরিবেশে লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা নদীর রেল ও সড়ক সেতুর মাঝে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার দিনব্যাপী চলে। শেষ হয় রবিবার সন্ধ্যায়। প্রতিযোগিতায় স্থানীয় ও বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মাঝি মাল্লাদের ৯টি দল নানা রংগের, নানা নির্মাণ কৌশলের নৌকা নিয়ে প্রতিযোগিতায় আসে। এই দৃশ্য দেখে মনে হয় এ এক চিরচেনা বাংলার ঐতিহ্যের স্বারক তিস্তা পাড়ের মানুষের । হাজার বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে উত্তরের মানুষ।
লালমনিরহাট সদর ও রংপুরের কাউনিয়ায় বিনোদনের তেমন কোনো জায়গা নেই। তিস্তা নদীর সড়ক সেতু ও ঐতিহাসিক শতবছরের পুরোন রেল সেতুটি দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষনিয় হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন এখানে নদী পাড়ে হাজারও মানুসের ঢল নামে। সম্প্রতি এখানে সড়ক সেতু নির্মানের পর সেতুর কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের থাকার জায়গার পরিত্যাক্ত কোযাটার ও ফাঁকা জায়গায় একটি মিনি পার্ক নির্মাণ করেছে ব্যক্তিগত উদ্যোগে। জায়গাটি সরকারের কাছে লিজ নিয়ে এই পার্কটি করেছে।
পর্যটকদের টানতে স্থানীয় কিছু বিনোদন প্রিয় মানুষ প্রতি বছর নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। নদী পাড়ের মানুষকে বিনোদন দেয়াই প্রধান উদ্দেশ্য। এর পাশাপাশি ঐতিহ্য রক্ষাও হয়ে থাকে।
প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জনকারী একাত্তরের সৈনিক নৌকাবাইচ দলকে একটি ষাঁড়, দ্বিতীয় স্থানে থাকা বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেস নৌকাবাইচ দলকে একটি গাভি এবং তৃতীয় স্থান অধিকারী অগ্নি তুফান দলকে একটি খাসি প্রতিযোগিতায় পুরস্কার হিসেবে উপহার দেয়া হয়। এই উপহার দেয়ার উপকরণটিও বহু পুরো রিতি মেনে দেয়া হয়েছে। কৃষকের দৈনন্দিন উপকরণ ও গৃহপালিত পশু দিয়ে দিয়ে এই উপহার এখানে শত বছর ধরে স্থান পেয়ে এসেছে। তবে ৮০’র দশকে টেলিভিন, বাইসাইকেল ও রেডিও উপহার দেয়া হয়েছিল। সেটা করা হয়েছিল জনগণকে সচেতন করার জন্য। সেই সময় টিভি ও রেডিওতে বিনোদন ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করা হতো। তা হতে গ্রামের মানুষ শিক্ষা ও সচেতন হয়ে যেত। মানুষ সেই সময় মাসে একবার রাতে দলবেঁধে বাংলা ছায়া ছবি সহ নানা অনুষ্ঠান দেখত। সাইকেল যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতীক হিসেবে দেয়া হত।
তিস্তা রেলসেতু পাড়ে সন্ধ্যায় নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এ সময় আয়োজকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা গ্রামীণ ঐতিহ্য নৌকাবাইচ খেলার বেশি বেশি আয়োজন করবেন। এতে মানুষের মন ভালো থাকবে। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি, আগামীতে আরও বড় পরিসরে এই প্রতিযোগিতা করা হোক। মরহুম হযরত আলী স্মৃতি সংসদ আয়োজিত ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা এই অঞ্চলের মানুষের প্রানের প্রতিযোগীতা হয়ে উঠুক।
বিশেষ অতিথি ছিলেন রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আবদুল আলীম মাহমুদ, পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও হারাগাছ পৌরসভার সাবেক মেয়র হাকিবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ও কোম্পানি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার আব্দুল হাকিম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও শহীদবাগ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান, কাউনিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোরুল ইসলাম মায়া ও বালাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আনছার আলী প্রমুখ।
আর//দৈনিক দেশতথ্য//১৩ সেপ্টেম্বর-২০২২

Discussion about this post