সুরুজ আলী ভূইয়া। বয়স ৩৫ এর কোঠায়। পেশায় তিনি একজন জেলে হলেও লাল সবুজের পতাকা বিক্রি করে স্বস্তি পান। নদীতে মাছ ধরে কাটে তার সময়। পাশাপাশি মাছ বিক্রি করে সংসারের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তবে বছরের বিশেষ সময়ে কয়েক জেলা ঘুরে জাতীয় পতাকা বিক্রি করে থাকেন।
সারা দিন শহরের অলিগলি ঘুরে বিক্রি করেন লাল সবুজের জাতীয় পতাকা। জাতীয় দিবসগুলো বাদে কোনো দিন আয় ৩০০ টাকা, কোনো দিন ৫শ টাকা। তাই দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালিয়ে নেন তিনি। কুষ্টিয়া শহরের এনএস রোডের পৌর বাজারের সামনে কথা হয় সুরুজ আলী ভূইয়ার সাথে। পতাকা বিক্রি করে আনন্দ পান তিনি। কারণ এটি দেশের গর্ব। সুরুজ আলী ভূইয়া জানান, তার বাড়ি মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার চরকামারকন্দী এলাকায়।
অভাবের কারণে ঠিকভাবে লেখাপড়া করতে পারেননি। পড়াশোনা না জানায় চাকরি করতে পারেননি তিনি। পরে এলাকার নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে পতাকা বিক্রি করতে বের হন কয়েকজন মিলে। গেলো ৬বছর ধরে তিনি এই কুষ্টিয়া শহরে এসে আবাসিক হোটেলে ভাড়া থাকেন। কয়েকদিন ধরে শহর থেকে গ্রাম, পাড়া থেকে মহল্লার পথে ঘুরে ঘুরে পতাকা বিক্রি করেন। আবার বাড়ী ফিরে যাবেন বিজয় দিবসের পরদিন। তিনি বলেন, বিভিন্ন সাইজ ও দামের জাতীয় পতাকা বিক্রি করেন। বড় পতাকা ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, মাঝারি পতাকা ৫০-৬০ টাকা, ছোট পতাকা ২০ থেকে ৩০ টাকা এবং হাত পতাকা ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করেন। জাতীয় দিবসগুলোতে পতাকা ভালোই বিক্রি হয়। সে সময় পাঁচ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার পতাকা বিক্রি হয়। ছোট-বড় অনেকে বিজয় দিবসকে সামনে রেখে পতাকা কিনছেন। পৌরবাজারের ফল ব্যবসায়ী আজমেরী ফল ভান্ডার নামের এক দোকানী তার দোকানে পতাকা টাঙাবে বলে নতুন পতাকা কিনছেন। তারা জানান, বিজয় দিবসে নতুন পতাকা টাঙাবো বলেই ১৫০ টাকা দিয়ে পতাকা কিনলাম।
অন্য পেশায় থাকার পরও কেন তিনি পতাকা বিক্রির করেন- এমন প্রশ্নের জবাবে সুরুজ আলী ভূইয়া বলেন, অনেক রক্ত দিয়ে অর্জিত হয়েছে এই পতাকা। দেশ প্রেমের টানে সবার হাতে তুলে দিতে পতাকা বিক্রি করেন। আর এর থেকে আয় দিয়ে কোনো রকমে চালিয়ে নেন সংসার। তবে বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবস এলেই পাতাকা বিক্রি করেই সংসারে একটু বেশিই স্বচ্ছলতা আনা সম্ভব হয়। ফেরি করে পতাকা বিক্রি করতে দল বেঁধে চলে আসেন কুষ্টিয়ায়। এখানকার হোটেলে রাত্রীযাপন করেন। মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলায় ছুটে যান আলাদা টিম করে ভাগ ভাগ হয়ে। পতাকা বিক্রেতা সুরুজ আলী ভূইয়া অনেক কষ্টে অর্জিত লাল সবুজের পতাকার সম্মান দেওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
খালিদ সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩

Discussion about this post