করোনার কারণে গত ৩বছর ধরে লাভবান হতে পারেনি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার পিঞ্জুরী ইউনিয়নের সোনাখালী গ্রামের গরুর খামারীরা।
কিন্তু এ বছরের পরিস্থিতি ভিন্ন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় কোরবানির হাট বসার ১মাস আগে থেকেই এ গ্রামের খামারীদের খামারের গরু বিক্রি শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে এ বছর আগে থেকেই গরু বিক্রি শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন খামারীরা। অপরদিকে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর গরুর দাম ভালো পাচ্ছেন বলে এসব খামারীরা জানিয়েছেন।
সোনাখালী গ্রামটি কোটালীপাড়া উপজেলার বিল এলাকায় অবস্থিত। বছরের প্রায় ৯ মাস এ গ্রামটি জলমগ্ন থাকে। বর্ষার সময় এলাকায় কোনো কাজ থাকে না। তাই ওই গ্রামের মানুষ দশকের পর দশক ধরে হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশু পালন করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন। এই গ্রামের খামারের গরুগুলোকে প্রাকৃতিক ভাবে উৎপাদিত ঘাস খাওয়াইয়ে পালন করা হয়। যার জন্য এ গ্রামের খামারের গরুগুলোর কোটালীপাড়াসহ এর আশপাশের উপজেলায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
এ বছর এ গ্রামের শতাধিক ছোট বড় খামারে ৯শতাধিক গরু রয়েছে। এসব গরুর মধ্যে প্রায় ২শতাধিক গরু ইত্যেমধ্যেই বিক্রি হয়েছে বলে বিভিন্ন খামারের মালিকগণ জানিয়েছেন। যার ফলে খামারীদের মুখে মুখে বইছে আনন্দের হাসি।
সোনাখালী গ্রামের খামারী খবীর গাজী (৬০) বলেন, গত ৪০ বছর ধরে গরু পালন করছি। প্রতিবছর কোরবানি ঈদের আগে গরু বিক্রি করে আবার নতুন করে গরু ক্রয় করি। গত বছর কোরবানির ইদের পরে ৫লক্ষ টাকা দিয়ে ১০টি গরু ক্রয় করেছি। এই ১০টি গরু বিগত এক বছর ধরে লালন পালন করেছি। এরই মাঝে গরু ক্রয়ের জন্য কয়েকজন বেপারী আমার খামারে এসেছেন। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর গরুর চাহিদা বেশী মনে হচ্ছে।
খামারী সিদ্দিক গাজী (৫০) বলেন, প্রতি বছর আমরা প্রায় খামারীই খামারে বসে গরু বিক্রি করি। ঈদের কয়েকদিন আগে আমাদের এখানে গরু বিক্রি শুরু হয়। এ বছর প্রায় মাস খানেক আগে গরু বিক্রি শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কারণে বেপারীরা গরু কিনে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছেন। তাই এ বছর একটু আগে থেকেই গরু বিক্রি শুরু হয়েছে।
খামারী নুরুল ফকির (৪৫) বলেন, আমার খামারে ৪টি গরু ছিল। ইত্যেমধ্যে আমি ২টি গরু বিক্রি করেছি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর আমাদের একটু বেশী দামে গরু বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ হিসেবে খৈল, ভূষির দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করেন এই খামারী।
গরুর বেপারী সোহাগ শেখ বলেন, ফেরীতে সময় নষ্ট হওয়ার কারণে প্রতিবছর আমরা সোনাখালী গ্রাম থেকে গরু কিনে পদ্মার এ পাড়ের বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করতাম। এ দেশীয় গরুর রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। তাই আমরা অন্যান্য বছরের তুলনায় একটু বেশী দাম দিয়ে গরু কিনে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. পলাশ কুমার দাশ বলেন, সোনাখালী গ্রামের খামারীরা আমাদের কাজ থেকে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ নিয়ে গরু পালন করছেন। এখানকার অধিকাংশ গরুগুলোকে প্রাকৃতিক ভাবে লালন পালন করা হয়। এখানে রয়েছে ছোট বড় বিভিন্ন সাইজের দেশীয় প্রজাতির গরু। প্রতি বছরই এ গ্রামের খামারীরা গরু বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।
আর//দৈনিক দেশতথ্য//৪ জুলাই-২০২২//

Discussion about this post