পরীমণিদের নিয়ে যার যা ইচ্ছে হচ্ছে তাই বলে ও লিখে চলেছেন। এতে নারী সমাজের কি হচ্ছে, জেন্ডার এব ইউজ হচ্ছে কিনা তা নিয়ে নেই কারো বিন্দু মাত্র মাত্রা বোধ। সম্প্রতি এক বাম নেতা টক শোতে গিয়ে নারীদের “রাতের রাণী আখ্যা দিয়েছেন।
বাম, প্রগতিশীল রাজনীতির মোড়ক জড়িয়ে কেউ নারীদের প্রতি এমন শব্দ ব্যবহার করলে তা মেনে নেয়ার কোনো যুক্তিই নেই। কথিত ওই কবিতার জন্য ক্ষমা না চাইলে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর কবিতা দিয়েই তাকে বলতে বাধ্য হবো- ‘যৌনকর্মীকে তবু বিশ্বাস করা যায়, তার মতো বাম রাজনীতিককে নয়’।
এই বাম নেতা হয়তো জানেন না তারা যেমন দাবী আদায়ের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেন নারীরাও তাদের আত্ম সন্মানের জন্য তেমনটিই করে আসছেন। এক পরীমণির জন্য তাদের ত্যাগ বৃথা যেতে পারেনা। ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত একটি বই আছে। বইটির নাম ‘আমাদের শরীর, আমার নিজের’ (আওয়ার বডিজ, আওয়ারসেলভস)। প্রকাশিত বইটি পৃথিবীর নারী স্বাধীনতায় বৈপ্লবিক চিন্তার জন্ম দিয়েছিল। এই বই লিখেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন নারী। ওই নারীরা ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ও বিপ্লবী চিন্তাধারার। সে সময়ে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের সমাজে পুরুষতান্ত্রিকতা, পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইরত ছিলেন।
এই বইটি ছিলো নি:সন্দেহে বৈপ্লবিক, দ্ব্যর্থহীন ও আন্তরিক। প্রকাশিত হওয়ার অল্পদিন পরই ৩৩টি ভাষায় তা অনুদিত হয়। সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। সত্তরের দশকের শেষ দিকে ‘ইভানজেলিক্যাল’ বা মৌলবাদী এক খ্রিষ্টান বইটিকে ‘অশ্লীল, আবর্জনা’ অ্যাখ্যা দেন। বইটিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গ্রন্থাগারে নিষিদ্ধের দাবি জানান। তাঁর দাবি মেনে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু প্রতিষ্ঠান বইটিকে নিষিদ্ধও করে।
বইটি ছিলো নারীদের যৌনজীবন, যৌনতা, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের বিষয়ে তথ্য, আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ উৎস। ওই সময়কে যদিও বলা হচ্ছিলো ‘নারীদের যৌনতার মুক্তির যুগ’ কিন্তু তখনো অসংখ্য নারীই নিজের শরীর সম্পর্কে খুব কমই জানতেন।
যৌনস্বাস্থ্যের বিষয়েও তাদের খুব কমই জানা ছিলো। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের বাজারে তখন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি আসতে শুরু করে। তবে সন্তান জন্ম দেয়া, না দেয়ার বিষয়ে তখনো পুরুষের সিদ্ধান্তই ছিলো মূখ্য।
পুঁজিবাদী, রক্ষণশীল সমাজে নারীর ব্যক্তিগত, যৌন স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় সমাজতন্ত্রের সংগ্রাম, অবদান জানতে উপরের ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো তুলনামূলক অগ্রসর সমাজের চিত্রই তখন ছিলো এমন! সেখানে বাংলাদেশের মতো “মৌলবাদ প্রভাবিত” সমাজে গত শতাব্দিতে বামদের সংগ্রাম, আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়া কতো কঠিন ছিল তা খুব সহজেই অনুমেয়।
ইতিহাস বলছে, পুঁজিবাদকে সমাজতান্ত্রিক নারীবাদ এমনভাবে চ্যালেঞ্জ করেছিলো যে, একটা নতুন আলোচনার শুরু হয়। আর তা নারীদের মর্যাদা পৃথিবীজুড়ে নতুন এক অবস্থানে নিয়ে যায়।
এ দেশের বামনেতা (বাসদ), টিভি টকশোর অতিথি এক বাম নেতা পুলিশি সুরে পরীমনিসহ সম্প্রতি গ্রেপ্তার মডেলদেরকে ‘রাতের রাণী’ বলে কবিতা লেখা শুধু বিস্ময়েরই নয়, চরম নিন্দনীয়ও বটে।
প্রগতিশীল কোনো নেতার জন্য নারীদের সন্মানে ঘা দেওয়া এ ধরনের শব্দ স্পষ্টই বেমানান। নারী বিষয়ক পুঁজিবাদী শ্রেণির এসব শব্দ মৌলবাদ, রক্ষণশীলতা মিশ্রিত সমাজে সুড়সুড়ি জাগানোতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। শব্দগুলো কোনো আধা বা পুরোবৃদ্ধ পুরুষের ভেতরে ভীমরতি জাগালে তা হবে নিতান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়।
এই বইটির লিঙ্ক:
https://hollis.harvard.edu/primo-explore/search?tab=everything&search_scope=everything&vid=HVD2&lang=en_US&mode=basic&offset=0&query=lsr01,contains,010270479
লেখক: জাতীয় পর্যায়ের সাংবাদিক। লেখাটি সম্পাদনা করেছে দৈনিক দেশতথ্যের ঢাকা ডেস্ক।

Discussion about this post