Print Date & Time : 2 August 2025 Saturday 10:19 pm

পরীমনির পক্ষে বাড়ছে জনমত

প্রথম দিকে জনমত পরীমণির বিপক্ষে গেলেও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে তার পক্ষের মত। এখন বিভিন্ন মাধ্যমে তার পক্ষ নিয়ে লেখালেখি করছে কিছু মানুষ।  সম্প্রতি মফস্বল শহরের এক গৃহীনি তাকে নিয়ে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এই স্ট্যাটাসই প্রমান করে পরীমণির পক্ষে বাড়ছে জনমত।

আলোচিত নায়িকা পরীমনি এখন মেইন টক অবদি বাংলা বেল্ট। তাকে নিয়ে কোথায় না হচ্ছে আলোচনা কিংবা সমলোচনা। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে দেশের রথি মহারতিদের টেবিলেও তাকে নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা।

কেউ বলছেন এটা দুই পুলিশের বিবাদের জের। কেউ বলছেন তার মামলার আসামীর প্রতিশোধ পরায়ণ মনের বাজেটের জের। কেউ বলছেন অতি বাড়াবাড়ির জের। কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা তা কেবল সময়ই বলতে পারবে। তবে তাকে নিয়ে সোস্যাল মিডিয়াও চলছে নানা জনের নানা মতের আলোচনা।

গৃহবধূর দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসে পাকা কলাম লেখকদের চেয়েও বেশি তথ্য উপাত্ত দিয়েছেন। দৈনিক দেশতথ্য লেখকের পরিচয় ও খ্যাতির চেয়ে লেখাকে প্রাধান্য দেয়। পোস্টটি কপি পেস্ট হলেও দেশতথ্য সেটা অতি গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। কারণ এতে প্রতিফলিত হয়েছে সাধারণের মত। তার ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করা লেখাটি দৈনিক দেশতথ্যে প্রকাশ করা হলো।

‘‘আমার সকল ভালোবাসা পরীমনির জন্য। মানুষ খাল কেটে কুমীর আনে। আমি এই স্ট্যাটাস লিখছি। পরীমনিকে অকথ্য ভাষা গালি দিতে দিতে যারা বোর হয়ে গেছেন, তারা যেন একটু বৈচিত্রর জন্য আমাকে গালি দিতে পারেন।

আসেন, পরীমনি কে তাকে একটু চিনি।

পরীমনির আসল নাম স্মৃতি। ছোট বেলায় তার মা আগুনে পুড়ে মারা যায়। আগুনে পোড়ার সাথে সাথে সে মারা যায়নি । দীর্ঘ দুই মাস ভুগে- তারপর সে মারা গেছেন। এরপর মারা যায় পরীমনির বাবা। তাঁর মৃত্যুও স্বাভাবিক নয়। ব্যবসায়িক কারণে সে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হোন। অতএব বাংলা সিনেমার মতো পরীমনি খুব শৈশবে এতিম হয়ে যায়। পরীমনি পালিত হয় নানার সংসারে। মজার ব্যাপার কি জানেন? বরিশালের একটি স্কুল থেকে সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। এর আগে কেউ এই স্কুল থেকে বৃত্তি পায় নি। শুধু তাই নয়, এখন পর্যন্ত ওই স্কুল থেকে আর একজন শিক্ষার্থীও বৃত্তি পায়নি।

ঢাকা পোস্টের সাংবাদিকরা একটি ভালো কাজ করেছেন। তারা পরীমনির স্কুলের শিক্ষকদের সাথে কথা বলেছেন। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, তারা পরীমনিকে এখনো স্নেহ করেন। শৈশবে পরীমনি ছিলো নম্র, ভদ্র এবং সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা এক মেয়ে। এরপর যা হয়। পরীমনিকে বিয়ে দেয়া হয়-ওই গ্রামের একজনের সাথে। সেই সংসার দুই বছরের বেশি টেকেনি। না, যা ভাবছেন , তা নয়। সংসার পরীমনির কারণে ভাঙ্গেনি। স্বামী যৌতুকের জন্য দুই লাখ টাকা চেয়েছিলেন পরীমনির নানার কাছে। সে টাকা না দেয়া, সেই স্বামী পরিমনীকে তালাক দেন।

এই পর্যন্ত লেখাটি পড়ে একটু ভাবেন। একটি মেয়ের জীবনে এর চাইতে ভয়াবহ, ধারাবাহিক দূর্ঘটনায় পূর্ণ , অভিশপ্ত জীবন আর কী হতে পারে?

তখনো কিন্তু পরীমনির নাম স্মৃতি। যেহেতু স্মৃতির রূপ ছিলো, একই সাথে ছিলো এক সাগর দুঃখ। একজন রূপবতী দুখী মেয়ে, শিকারের জন্য এর চেয়ে ভালো হরিণ আর কী হতে পারে? কাজেই স্মৃতি ক্রমান্বয়ে পরীমনিতে পরিণত হয়।

একবারও জিজ্ঞাসা করেছেন, কারা স্মৃতিকে পরীমনি বানালো? পরীমনির নানার নাম, বাপের নাম পত্রিকাওয়ালারা ছবিসহ ছাপাচ্ছে। কিন্তু পরীমনির গডফাদারদের ক্ষেত্রে কেন পত্রিকাওয়ালারা লিখছে, ” জনৈক ব্যবসায়ী, জনৈক ব্যাংকার, জনৈক রাজনীতিবিদ, জনৈক আমলা, জনৈক পুলিশ কর্মকর্তা?

এই সমাজের জনৈকরা একজন স্মৃতিকে একটা ভালো সিনেমা দিতে পারতো। একটা ভালো গল্প দিতে পারতো। ভালো লেখাপড়ার সুযোগ দিতে পারতো। তা না করে, স্মৃতিকে তারা পরীমনি বানিয়েছেন, দেশ বিদেশে ঘুরিয়েছে। তাকে নিয়ে লোফালুফি করেছে। পরীমনির বাসায় যে মদের ভান্ডার , সেই মদ কি পরীমনি একাই খেতো? নাকি অন্য খদ্দের ছিলো? তারা কারা? পরীমনি কাদের জন্য এত মদ জমিয়েছিলো?

 

গালি না দিয়ে প্রশ্ন করতে শিখুন। গত কয়েকদিনে যেভাবে পশুর মতো আপনারা পরীমনিকে গালিগালাজ করছেন, কেউ কেউ পাথর ছুড়ে তাকে হত্যা করার দাবি জানাচ্ছেন, বিশ্বাস করুন, এটি একটি অসুখ। করোনার চেয়ে হাজার গুণ বড় ভাইরাস, যার নাম ঘৃণা।

আজকে শাহেদকে ঘৃণা করবেন, কাল হেলেনাকে ঘৃণা করবেন, পরশু পাপিয়াকে ঘৃণা তরশু করবেন পরীমনিকে। ঘৃনা করতে করতে আপনারা ভুলে যাবেন, দেশে ডেঙ্গু বাড়ছে। ডেঙ্গুতে শিশুরা মারা যাচ্ছে। অথচ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা খুব সহজ। খালি মশা মেরে ফেলতে হবে। ঘৃণা করতে করতে আপনারা ভুলে গেছেন, সিঙ্গাপুরের সবাই টিকা পেয়ে গেছেন, কিন্তু নয়া সিঙ্গাপুর বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এখনো টিকা পায়নি। ঘুণা করতে করতে আপনারা ভুলে গেছেন, দেশে সাবমেরিন আছেন, কিন্তু আইসিইউ নেই পর্যাপ্ত সংখ্যক।

আপনি ফেসবুক খুলবেন। পরীমনিকে গালি দিবেন, চয়নিকা চৌধুরিকে মম বলে টিজ করবেন। একটু ঘাড় ঘুরিয়ে তাকান। শোবার ঘরে আপনার বাবা কাশছেন,তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এই কাশি, এই শ্বাসকষ্ট তার প্রাপ্য না। তার দরকার সুচিকিৎসা, টিকা এবং অক্সিজেন।

বাবার পাশে গিয়ে বসুন। পরীমনি বা হেলেনা জাহাঙ্গীরে তার কিছু আসে যায় না। একশ পরীমনিকে ফাঁসি দিলেও তার কোনো আরাম হবে না।

তার দরকার একটি সংবেদনশীল সমাজ। সেই সমাজ গড়ার দায়িত্ব আপনার। তা হলে আপনি এবং পুরো দেশে ভালো থাকবে। (কপি পোষ্ “