কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: দেশের পল্লী বিদ্যুৎ খাতকে দুর্নীতি, অনিয়ম ও শোষণ থেকে মুক্ত করার দাবিতে কুষ্টিয়ায় উত্তাল হয়ে উঠেছেন কর্মকর্তারা।
গত বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকালে কুষ্টিয়ার বারখাদা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি প্রাঙ্গণে দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এক বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
তারা চার দফা দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ঘোষণা দেন এবং বলেন, ু৪৮ বছর ধরে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো আমাদের শোষণ করে আসছে। এখন আর সহ্য করা হবে না।”
চার দফা মূল দাবি
১. বিদ্যুৎ বিভাগের গঠিত দুটি কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ, চুক্তিভিত্তিক মিটার রিডার, লাইনশ্রমিক, বিলিং সহকারীদের নিয়মিতকরণ এবং অন্যায়ভাবে বরখাস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুনর্বহাল।
২. ১৭ আগস্ট থেকে হয়রানি মূলকভাবে বরখাস্তকৃতদের আদেশ বাতিল করে পূর্বের কর্মস্থলে ফেরত পাঠানো।
৩. জরুরি সেবায় নিয়োজিত লাইন-ক্রুদের কর্মঘণ্টা নির্ধারণ এবং আন্দোলনকালীন বঞ্চিত পাঁচজন কর্মীর যোগদানের ব্যবস্থা।
৪. দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ।
বক্তাদের অভিযোগ সমাবেশে বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
মাত্র তিন মাসে সাড়ে ৬ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গণবদলি করা হয়েছে। এটা ইতিহাসে নজিরবিহীন। এর ফলে মাঠপর্যায়ে কাজের গতি ভেঙে পড়েছে।
তারা জানান, হঠাৎ বদলির কারণে লাইন চিনতে না পারায় এবং মানসিক হতাশায় শুধু গত এক মাসেই সাতজন লাইন-ম্যান দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এ ঘটনাকে তারা “প্রশাসনিক অবহেলার কারণে অকাল মৃত্যু” বলে আখ্যা দেন।
বক্তারা আরও বলেন, আমাদের দাবি বাস্তবায়নে ২৪ জুলাই গঠিত কমিটি ১০ দিনের মধ্যে সমাধানের সুপারিশ করেছিল। বিদ্যুৎ বিভাগ বারবার তাগাদা দিলেও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) তা মানছে না। এটা ইচ্ছাকৃত অবহেলা।
দুর্নীতি ও নিম্নমানের মালামাল সরবরাহ বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, বোর্ড সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে নিম্নমানের সরঞ্জাম সরবরাহ করছে। নন-স্ট্যান্ডার্ড বৈদ্যুতিক লাইন ও অবকাঠামো নির্মাণের কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ গ্রাহকরা।
গ্রাহকরা বিদ্যুতের সমস্যায় ভোগেন, কিন্তু দোষ চাপানো হয় মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের ঘাড়ে। অথচ বোর্ডের কোনো জবাবদিহিতা নেই বলেন এক সমিতির কর্মকর্তা।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি দেশের গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের মূল ভরসা। বর্তমানে প্রায় ৭ কোটি গ্রাহক এই খাতের ওপর নির্ভরশীল। তবে আরইবির কেন্দ্রীয় কর্তৃত্ব, রাজনৈতিক দলবাজি ও অযোগ্য কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তে এই খাত চরম সংকটে পড়েছে।
এর আগে ২০২৩ ও ২০২৪ সালেও একই ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলন হলেও সমাধানের আশ্বাস দিয়ে তা থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এবার আন্দোলনকারীরা জানান, দাবি আদায় না হলে তারা দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের অবস্থান কর্মসূচি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের হুঁশিয়ারি দেবেন।