বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া এর জন্য অনুকুল নয়। এতে বাতাশের সার্বক্ষনিক গতি লাগে ১৫-২০ কিলোমিটার। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর থাকতে হবে ৩ মিটারের বেশি। নারকেল ধরার উপযোগী হতে লাগে ২/৩ বছর। ফল দেয় মাত্র ৭ বছর। এর জীবনকাল ১০ বছর।
ইউটিউবে ভিয়েনামী নারিকেল বাগানের সুফল দেখে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন ঝিনাইদহের শতাধিক কৃষক। কৃষি বিভাগ বলেছিল ৩ বছরের মধ্য ফল ধরবে। ৫ বছরেও ফল ধরেনি। টাকা শ্রম ও জমির নূন্যতম আয় ফেরত পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। তাই অনেকেই ভিয়েতনামী নারকেল গাছের চারা কেটে জমি খালাস করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দেশতথ্যকে জানিয়েছে, জেলার ৬ উপজেলায় ভিয়েতনামী নারিকেল গাছ রয়েছে প্রায় ২১’শ। বাগানী ও কৃষক রয়েছে শতাধিক।
কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের আশরাফ হোসেন স্বপন, শিবনগরের সুরত আলী গাছে নারিকেল না আসায় গাছ কেটে ফেলেছেন। তবে একই উপজেলার ঘিঘাটি গ্রামের খলিলুর রহমানের একটি গাছে ৩০-৩৫টি নারিকেল ধরলেও পরিনত হতে হতে নারিকেল ফেটে যাচ্ছে। এছাড়া নারিকেলগুলো আকারে বেশ ছোট।
কালীগঞ্জ উপজেলার প্রবাসি শরিফুল সৌদিতে ছিলেন। সেখানে থাকা অবস্থায় তিনি টিভি ও ইউটিউব চ্যানেলে ভিয়েনামি নারিকেল নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। এরপর দেশে এসে মাগুরা হর্টিকালচার সেন্টার থেকে ৬০০ টাকা দরে ৪০টি নারিকেল চারা এনে বাগান করেছিলেন। ৪ বছরেও সেই বাগানে নারিকেল না আসায় তিনি অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। সেই ক্ষতি পূষাতে বাগান ফেলে রেখে আবারও বিদেশ চলে গেছেন।
সদর উপজেলার খাজুরা গ্রামের মকলেচুর রহমান জাহিদ জোয়ার্দ্দার বলেন, তিনি ঝিনাইদহ হর্টিলাচারের একটি প্রদর্শনী প্লটের আওতায় ৪০টি ভিয়েতনামি নারিকেলের গাছ লাগিয়েছেন। ৫ বছরে দুই-চারটি গাছে মোচা বের হলেও নারিকেল ধরেনি। তিনি বলেন, যখন প্রজেক্টটি দেয়া হয় তখন কোটি টাকার স্বপ্ন দেখানো হয় অথচ গাছে নারিকেল না আসায় এখন খোঁজ নেননা কেউ। হর্টিকালচার সেন্টারের তত্ত্বাবধানে পরিচর্যা করা হলেও গাছে নারিকেল না আসায় চরম ক্ষুব্ধ তিনি।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আজগর আলী বলেন, ভিয়েতনামী নারিকেল বাগান করতে প্রচুর পরিচর্যা করতে হয়। কৃষক ভাইয়েরা নিয়মিত পরিচর্যা করেন না বলে ফলন পাচ্ছেন না।
বারি’র সাবেক মহা পরিচালক ও নারকেল বিশেষজ্ঞ ড. নাজিউল ইসলাম দৈনিক দেশতথ্য প্রতিবেদককে বলেন, ভিযেতনামী নারকেল গাছের জন্য সর্বক্ষণ বাতাসের গতিবেগ থাকতে হবে ১৫-২০ কিলোমিটার। বাগানে ভুগর্ভস্থ পানির স্তর কমপক্ষে ৩ মিটারের নিচে থাকবে না। দিন রাতে তাপমাত্রার পার্থক্য থাকবে না। সমুদ্র উপকুলীয় দেশ গুলোতে এ প্রজাতির নারকেল চাষের জন্য অনুকুল আবহাওয়া থাকে। আমাদের দেশের আবহাওয়া ভিয়েতনামী নারকেল চাষের অনুকুল নয়। লাগানোর দু’আড়াই বছর পর ফল ধরে। কিন্তু ৭ বছর পর ফল ধরে না। গাছের জীবন কাল ১০ বছর। যারা বাগান করেছে, তারা ভুল করেছে বলে তিনি জানান।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//জুন ১৭,২০২২//