Print Date & Time : 10 May 2025 Saturday 5:42 pm

পাইকগাছায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই সূর্য বিবির লাশ দাফন

যশোরের কেশবপুরে সতীনের মেয়ের বাড়ীতে বেড়াতে গিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া সূর্য বিবির (৬২) লাশ ময়না তদন্ত ছাড়াই বুধবার দুপুরে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনিতে স্বামীর বাড়িতে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

সূর্য বিবির ভ্রাতুষ্পুত্র পার্শ্ববর্তী রেজাকপুর গ্রামের রহিম সরদার জানান, তার ফুফুর মৃত্যুর খবরে বুধবার সকালে তাদের বাড়িতে গেলে তারা তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। তিনি আরো দাবি করেন, তার ফুফু নি:সন্তান ছিলেন। পিতার রেখে যাওয়া প্রায় ১০ কাঠা জমির আয়-ব্যায় তার ফুফা আফছার শেখ ওরফে মৌলভি ভোগজাত করতেন। মৃত্যুর আগে ঐ জমি তার ফুফার অন্য পক্ষের ছেলে-মেয়েদের নামে লিখে দিতে তাকে নানাভাবে চাপ দিতে থাকে। এতে রাজি না হওয়ায় মূলত তাকে তার সতীনের মেয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দিলে সেখানে মঙ্গলবার সকালে ঝুলন্ত অবস্থায় লাশ উদ্ধার হয়।

এর আগে গত শুক্রবার ( ১৯ আগস্ট) সূর্য বিবিকে যশোরের কেশবপুরের গৌরিঘোনা ইউনিয়নের ভেরচি গ্রামে তার সতীনের মেয়ে পলি বেগমের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর সোমবার (২২ আগস্ট) আফছার শেখ ওরফে মৌলভি মেয়ের বাড়িতে স্ত্রীকে দেখতে গিয়ে পরের দিন প্রত্যুষে ফের নিজ বাড়ি পাইকগাছার কাশিমনগরে চলে আসে। দুপুরে স্ত্রী সূর্য বিবির মৃত্যুর খবরে ফের ভেরচি যান তিনি বলে দাবি করেন।

খবর পেয়ে সরেজমিনে ঘটনাস্থল কেশবপুরের গৌরিঘোনার ভেরচি গ্রামের ওমর আলী খাঁর ছেলে আতিয়ার খাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঝুলন্ত অবস্থায় সূর্য বিবির লাশের একটি পা খাটের উপর এবং অপর পা চেয়ারের উপর লাগানো ছিল।

পারিবারিক সূত্র দাবি করছে, মেয়ের বাড়িতে সোমবার রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। পরের দিন মঙ্গলবার সকাল আনুমানিক ১০ টার দিকে ঘুম থেকে উঠতে দেরি দেখে ঘরের জানালা দিয়ে তার ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ দেখতে পান তারা। খবর পেয়ে কেশবপুরের ভেরচি ক্যাম্পের পুলিশ সন্ধ্যার আগে ঘটনাস্থলে পৌছে তার মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট শেষে ময়না তদন্তের জন্য লাশ নিয়ে প্রথমত ক্যাম্পে নেয়। তবে সেখানে ঘন্টা দু’য়েক পর ময়না তদন্ত ছাড়াই স্বজনদের কাছে তার লাশ হস্তান্তর করে।

এদিকে সূর্যর এক ভাইপো রহিম সরদার জানান, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে দিয়ে আত্নহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। মূলত, তার ফুফু সূর্য বিবির সাথে তার সতীনের ছেলে-মেয়েদের নামীয় জমি-জমা লিখে দেওয়া নিয়ে মতবিরোধ চলে আসছিল। যাতে রাজী না হওয়ায় পরিকল্পিতভাবে তার ফুফুকে সতীনের মেয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে ১৯ আগস্ট শুক্রবার নিহত সূর্য বিবিকে তার সতীনের মেয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে ২২ আগস্ট সোমবার আফছার সেখানে যায় এবং পরের দিন ২৩ আগস্ট সকালে স্ত্রীকে সেখানে রেখে নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। এর কিছুক্ষণ পর নাকি তাকে খবর দেওয়া হয় তার স্ত্রী আত্নহত্যা করেছে।

নিহতের স্বজনদের প্রশ্ন, পারিবারিক কোন সমস্যা হলে তাকে পিত্রালয়ে না পাঠিয়ে কেন সতীনের মেয়ের বাড়িতে পাঠানো হলো? তাছাড়া ৩ দিন পর আফছার মেয়ের বাড়িতে গেলেও তাকে না নিয়ে পরের দিন সকালে একা কেন বাড়িতে ফিরে অসলো আর সেদিন সকালেই কেন তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার হল? কি এমন ঘটনা ঘটেছিল রাতে যে সকালে তাকে আতœহত্যা করতে হলো? তাদের দাবি, সকালে আফছার স্ত্রীকে স্বাভাবিক অবস্থায় দেখে বাড়িতে ফেরে। যদি তার কথা সত্য হয় তাহলে মূহুর্তেই কি এমন ঘটনা ঘটেছিল যে, তাকে আত্নহত্যা করতে বাধ্য হতে হলো? দাফনের আগে গোসলের সময় তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোলা যখমের চিহ্ন ছিল বলে জানায় নিহতের ভাইপো রহিম।

ধারণা করা হচ্ছে, রাতেই তার মৃত্যু নিশ্চত করে লাশ ঝুলিয়ে দিয়ে আত্নহত্যা বলে চালিয়ে দিতে সোমবার সকালে আফছারের বাড়ি ফিরে আসার বিষয়টি ছিল নাটক।

এছাড়া মৃত্যুর আগে ২০/০৪/২২ তারিখে সূর্য বিবি কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর স্বামী আফছার ওরফে মৌলভির বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করেন যে, তার স্বামী তার ঘরের দরজা ভেঙ্গে নগদ ৭০ হাজার টাকা, জমির দলিল, রেকর্ড ও তার জাতীয় পরিচয়পত্র চুরি করে নিয়েছে। যা ফেরৎ পেতে তিনি ঐ অভিযোগপত্র দাখিল করেন। যা বিচারাধীন রয়েছে। এরই মধ্যে তার রহস্যজনক আত্নহত্যার ঘটনা ঘটলো।

সর্বশেষ খবর পয়ে স্থানীয় ভেরচি পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধারের পর সুরোতহাল রিপোর্ট শেষে লাশ ময়না তদন্তের জন্য নিলেও কেন ময়না তদন্ত ছাড়াই রাতেই তার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করলো? ইত্যাদি নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে স্বজনসহ সচেতন এলাকাবাসীর মনে।

এব্যাপারে কেশবপুরের ভেরচি পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মাইনুর জানান, পরিবারের কারো কোন প্রকার অভিযোগ নাথাকায় লাশ তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এবি//দৈনিক দেশতথ্য//আগস্ট ২৪,২০২২//