Print Date & Time : 25 August 2025 Monday 12:38 am

পাইকগাছায় ধান কর্তনে কম্বাইন হারভেস্টার

শেখ নাদীর শাহ্,পাইকগাছা(খুলনা): পাইকগাছায় প্রদর্শনী ব্লকে সমলয় পদ্ধতিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে বোরো ধান রোপন করতে না পারলেও কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে শস্য কর্তনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করেছে কৃষি অধিদপ্তর।

কৃষিখাতে সরকারের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূদুর প্রসারী কর্ম পরিকল্পনার অংশ হিসেবে একের পর এক কর্মযজ্ঞ শুরু হলেও উপজেলায় নানা সংকটে দৃশ্যত আলোর মুখ দেখছেনা এসব প্রকল্প। বিশেষ করে রবি মৌসুমের কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচীর আওতায় সমলয় পদ্ধতিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে বোরো ধান রোপন কার্যক্রম সম্পূর্ণ ব্যার্থ হয়। শুরুতে বীজতলা তৈরিতে জার্মিনেশন-ট্রে ও পলিথিন ব্লকে চারা উৎপাদন হলেও মেশিনে চারা রোপন করতে না পেরে কৃষকরা বাধ্য হয়ে শ্রমিক নিয়ে সেই সনাতন পদ্ধতিতে চারা রোপন করেন।

পাইকগাছা কৃষি অধিদপ্তর চলতি বোরো মৌসুমে কৃষি প্রনোদনা কর্মসূচীর আওতায় উপজেলার কপোতাক্ষ তীরবর্তী হরিঢালী ইউনিয়নের সোনাতনকাটি এলাকায় ৫০ একর জমি চিহ্নিত করে সেখানকার ৫২ জন কৃষককে সমলয় বোরো আবাদের আওতায় নেয়।

কর্মসূচীর আওতায় ১৮ ডিসেম্বর ২১’ চিহ্নিত ব্লকে প্রায় আড়াই হাজার জার্মিনেশন ট্রে ও বিকল্প পলিথিন বেডে বীজতলা তৈরির পর ১৮ জানুয়ারী ২২’ থেকে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে চারা রোপনের শুভ উদ্ভোধন করে। তবে এ পদ্ধতিতে চারা রোপনের উপযুক্ত মাটির অভাবে শুরতেই দেখা দেয় নানা বিপত্তি। এ পদ্ধতির জন্য বেলে-দোআঁশ মাটির প্রয়োজন হলেও সেখানকার মাটি ভিন্ন। একারনেই রাইসট্রান্সপ্লাটারের মাধ্যমে চারা রোপন সম্ভব হয়নি বলে ঐসময় দাবি করে কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এ পরিস্থিতিতে কৃষি অধিদপ্তর থেকে তখন কৃষকদেরে বীজতলা থেকে চারা সংগ্রহ ও জমিতে চারা রোপনের জন্য শ্রমিক খরচ বাবদ বিঘা প্রতি ১ হাজার ২ শ’ টাকা হারে বহন করার ঘোষণা দেওয়া হয়।

ব্লকের সংশ্লিষ্ট কৃষক মো: জামিরুল ইসলাম গাজী সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সেখানে তাদের ৪ বিঘা জমি রয়েছে। কৃষি কর্মকর্তাদের কথায় তিনিও সমলয়ে সায় দিয়েছিলেন। তাদেরকে বলা হয়, এ পদ্ধতির আবাদে সনাতন পদ্ধতি থেকে অর্থ এবং সময় দু’টোই সাশ্রয় হবে। শুধুমাত্র কৃষকদের পক্ষে নাঙ্গল ও সেচ খরচ বহন করতে হবে বাকি খরচ কৃষি অফিস থেকেই বহন করা হবে।

কৃষকরা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে বোরোর আবাদ করতে আগাছা পরিষ্কার, পরিচর্যা বাদে তাদের খরচ হয়েছিল, রোপনের জন্য শ্রমিক বাবদ ২ হাজার, বীজতলা থেকে চারা সংগ্রহ করতে ৫ শ’ ও চাষের জন্য নাঙ্গল খরচ বাবদ ১ হাজার টাকাসহ সর্বমোট সাড়ে ৩ হাজার টাকা। যদিও কৃষি অফিস থেকে তাদেরকে বিঘা প্রতি ১ হাজার ২ শ’টাকা হারে সরবরাহের কথা বলা হয়েছিল। প্রকল্পে ব্লকটিতে সাড়ে ৪ হাজার জার্মিনেশন ট্রে প্রদানের কথা থাকলেও আড়াই হাজার ট্রে-প্রদান করা হয়।

এব্যাপারে ব্লকের আরেক কৃষক জি,এম আব্দুস সাত্তার জানান, ওই বিলে তার ৯০ শতক জমি রয়েছে। সমলয় আবাদে বীজতলা তৈরী করতে তাদের ৫০ একর জমির জন্য ৩ শ’কেজি এসএল-৮এইচ (বোরো হাইব্রিড) জাতের বীজ সরবরাহ করা হয়। এছাড়া একর প্রতি ৫০ কেজি এমওপি ও ৬০ কেজি ডিএপি সরবরাহ করা হয়েছে। এরপর একর প্রতি ৯০ কেজি ইউরিয়া সার সরবরাহ করা হয়।

এব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, উপজেলায় সমলয়ে চাষাবাদে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে ধান রোপন এবারই প্রথম। আর জার্মিনেশন ট্রে সবগুলোই দেওয়া হয়েছিল দাবি করে তিনি বলেন, রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে ধান রোপনে ব্যার্থ হয়ে কৃষকরা সনাতন পদ্ধতিতে চারা রোপন করেছিল। তবে বিঘা প্রতি মেশিনে চারা লাগাতে যে পরিমান খরচ হয় তার তুলনায় অনেক বেশিই (১২০০ টাকা) কৃষকদের দেওয়া হয়েছিল।

সর্বশেষ সমলয় ব্লকের কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে শস্য কর্তনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে স্থানীয় এমপি আলহাজ্জ্ব আক্তারুজ্জামান বাবুর আগমনে কৃষকরা মৌসুমজুড়ে সকল কষ্ট-ভোগান্তির কথা ভুলে গেলেও প্রকল্পটি শুভ আগামীর জন্য কৃষকদের মধ্যে ঠিক কি ধরনের প্রভাব ফেলবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

এর আগে ১৮ জানুয়ারি সকাল ১০ টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগমের সভাপতিত্বে রাইসট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে ধান রোপনের উদ্বোধন করেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খুলনা অঞ্চল) অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ ফজলুল হক এবং ২৯ এপ্রিল (শুক্রবার) সকালে কম্বাইন হারভেস্টারে ধান কাটার উদ্বোধন করেন, খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) সংসদ সদস্য আলহ্জ্জ্ব আক্তারুজ্জামান বাবু।

দৈনিক দেশতথ্য//এল//