শেখ দীন মাহমুদ,পাইকগাছা(খুলনা) প্রতিনিধি॥পাইকগাছায় ১৬৭ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৯ টি প্রধান শিক্ষকসহ ৯৫টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদে ভারপ্রাপ্তদের দিয়েই চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। করোনাকালে প্রায় ১৭ মাস বন্ধের পর ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খুললেও শিক্ষক সংকটের কারণে অধিকাংশ বিদ্যাপীঠে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার শিক্ষকরা।
প্রধান শিক্ষক শূন্য বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, সোলাদানার বেতবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাটকেলপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ কাইনমুখি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাইকগাছা ভিলেজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কপিলমুনির রেজাকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গড়ইখালীর বগুড়ার চক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লস্করের বীনাপানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লতার লতা ধলাই প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গদাইপুর ইউনিয়নের মঠবাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
পাইকগাছা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, উপজেলার ১০ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ১৬৭ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। যার ৬টি ক্লাস্টারে মোট ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে ২২ হাজার ১৪৮ জন। যার মধ্যে ছাত্র ১১ হাজার ৮৬ ও ছাত্রী রয়েছে ১১ হাজার ৬৩ জন। এরমধ্যে করোনাকালে ২৬৮ জন শিক্ষার্থী ঝরে গেছে বলে জানানো হয়।
মঠবাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক ইউনুছ আলী সরদার ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘শিক্ষক সংকটের কারণে অনেক শিক্ষার্থীর পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত এসব শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ না দিলে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু পাঠদান সম্ভব হবে না। পাশাপাশি ঝরে যাওয়া শিশুদের স্কুলমুখী করার পরিকল্পনা সহ এর বাস্তবায়ন করতে হবে।
জানাযায়, ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে ইট ভাটা মৌসুম। আগামী ১৫ থেকে এক মাসের মধ্যে ভাটা সমূহে শুরু হচ্ছে শ্রমিকের কাজ। অধিকাংশ শ্রমিক পিতা-মাতা তাদের বাচ্চাদের নিয়ে বিভিন্ন জেলায় ইটভাটায় চলে যায় কাজের মৌসুমে। সে কারণে সংশ্লিষ্ট মা-বাবাকে বুঝিয়ে তাদের স্কুলমুখী করতে হবে। তা না হলে ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে পারে বলেও আশংকা করা হচ্ছে।
একই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুরজিত রায় বলছিলেন, তাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। সহকারী শিক্ষক দিয়েই চলছে স্কুলের কার্যক্রম। যিনি প্রধান শিক্ষকের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকেন তিনি সব সময় স্কুলের খাতাপত্র নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। সে কারণে তিনি ছাত্র ছাত্রীদের পাঠদানে সময় দিতে পারেন না।
সোলাদানা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম এনামুল হক বলেন, ‘তার ইউনিয়নে ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। যাদের কেউ বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন আবার কেউ অবসরে। তার দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যতদ্রুত সম্ভব বিদ্যালয়গুলোর শুণ্যপদ গুলো পূরণ করবেন।
পাইকগাছা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘একটি স্কুলে প্রধান শিক্ষক না থাকলে স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা বহুলাংশে মুখ থুবড়ে পড়ে। প্রধান শিক্ষকরা প্রশাসনিক ও একাডেমিক দায়িত্ব পালন করে থাকেন। প্রধান শিক্ষক না থাকলে শিক্ষার পাশাপাশি প্রশাসনিক কার্যক্রমও ব্যাহত হয়।’
পাইকগাছা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যুৎ রঞ্জন শাহা বলেন, তিনি নতুন যোগদান করেছেন। কোন কোন স্কুলে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে সেটি তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। অতি শ্রীঘ্রই এর সমাধান হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।