মোঃ রাসেল,বরগুনা:একটু মাথা গোঁজার ঠাই হয়েছে ব্রীজের নিচে বসবাস করা সেই ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা আলেয়া বেগমের। গত ৩৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বরগুনা শহরের মাছ বাজারে ব্রীজের নিচে বসবাস করে আসছিলেন আলেয়া এখানেই একে একে জন্ম দিয়েছিলেন ৯ সন্তান, যাদের প্রত্যেককেই কেড়ে নিয়েছে এক সময়ের খরস্রোতা ভাড়ানী খাল।সবশেষে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের পাকা (টিনসেড) ঘর ও একটুকরো জমি পেতে যাচ্ছে সেই আলেয়া বেগম। আগামীকাল বেলা এগারোটায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আশ্রয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এরপরই এরপরই জমি ও ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হবে আলেয়াকে।
জানা যায়, বৃদ্ধা আলেয়া বেগমের গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের মনসাতলী গ্রামে। তার শ্বশুরবাড়িও ছিল একই গ্রামে। ২৫ -২৭ বছর আগে সংসারে অভাব অনটনের কারণে মায়ের সঙ্গে বরগুনা শহরে পাড়ি জমায় আলেয়া বেগম। তখন থেকেই শুরু হয় তার আশ্রয়হীন জীবন কাহিনি। প্রথমে বরগুনার মাছ বাজার, সবজি বাজারের টল ঘর ভাসমানভাবে রাত্রিযাপন করার পর ভাড়ানী খালের বাজার ব্রীজের নিচে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তিনি। এখানেই কেটে গেছে ৩০-৩৫ বছর।
এই ৩৫ বছরেও মাথা গোঁজার ঠাঁই মেলেনি আলেয়ার। ব্রিজের নিচের খুপরি ঘরেই তিনি জন্ম দিয়েছেন ৮ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের। যাদের সকলকেই কেড়ে নিয়েছে ভয়াল ভাড়ানী খাল। গৃহহীন-ভূমিহীন আলেয়ার অসহায়ত্ব ও মানবেতর জীবনযাপন নিয়ে গত মাসের প্রথম দিকে সিটি নিউজ ঢাকাতে একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনটি উর্ধতন কর্মকর্তাদের নজরে এলে সরকারিভাবে আলেয়াকে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর আলেয়ার জন্য খাজুরতলা আশ্রয়ন প্রকল্পের ৮৩ নাম্বার ঘরটি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আগামীকাল (২৬ এপ্রিল) গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইদ উপহার আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রকল্পের আওতায় জমিসহ একটি টিনসেড ঘর পাবেন ব্রীজের নিচে বসবাস করা আলেয়া বেগম।
আলেয়া বেগম বলেন,গত ৩০-৩৫ বছর কাডাইছি এই ব্রীজের তলে,ভাড়ানী খালের পেটে দিছি মোর নয়ডা গুরাগারা, এতকিছুর পর হপায় একটা মাথা গোঁজার ঠাই পাইছি। শেখ হাসিনা আমার মা, হে আমারে ঘর দেছে। তার লইগ্গা খোদার দরবারে প্রান ভইরা দোয়া করমু।
আলেয়া বেগম আরও বলেন, মুই মোর জীবনে এই প্রথম ঈদ উপহার পামু। যা মুই কোনদিন কল্পনাও করি নাই। মোর বাপে মরার পর বিয়া দেয় মোর মায় হেই স্বামীও মের হালাইয়া থুইয়া যায়। আছে এইক্কা পোলা হে ও নুজেই খাইতে পারেনা মোরে দিবে কেমনে। এহন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঈদে মোরে যে উপহার দেছে এতে মুই একছের খুশি।
বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ব্রীজের নিচে থাকা আলেয়ার বিষয়টি মিডিয়ার মাধ্যমে নজরে এলে আমরা তাকে আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় আনি। আগামীকাল তার ঘরটি তাকে বুঝিয়ে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, আগামীকাল বেলা এগারোটায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বরগুনার খাজুরতলা আশ্রয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বরগুনার ৬ উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে । প্রথম পর্যায়ে ২৩২টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৭৯৩টি এবং তৃতীয় পর্যায়ে ৭২৫টি ঘরের মধ্যে ৪১১টি ঘরের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
দৈনিক দেশতথ্য//এল//