মোঃ খায়রুল ইসলাম, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতাঃ টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দেউলাবাড়ী ইউনিয়নে অবস্থিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে পশ্চিমে গোপালপুর পৌরসভার একাংশ পূর্বে সংগ্রামপুর ইউনিয়ন, উত্তরে আলোকদিয়া ইউনিয়ন ও দক্ষিণে ২নং ঘাটাইল ইউনিয়ন এবং মাঝখানে ১নং দেউলাবাড়ী ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। অথচ বর্তমানে এক দিকে ডাক্তার সংকট অপরদিকে হাসপাতালের নাজুক পরিবেশের কারণে ভেঙে পড়েছে সম্পূর্ণ চিকিৎসা ব্যবস্থা।
সাব-সেন্টারটির পিয়ন মো. ফজলুল হক একাই রোগী দেখেন। কাটা-ছেঁড়া, ড্রেসিং টিউমার অপারেশনসহ রোগীদের ওষুধ দেন। নিয়ম অনুযায়ী একটি সাব-সেন্টারে একজন মেডিকেল অফিসার, একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট ও একজন এমএলএসএস (পিয়ন) থাকার কথা। কিন্তু সাব-সেন্টারটিতে মেডিকেল অফিসার নেই প্রায় দুই যুগ ধরে। যে মেডিকেল অফিসার এখানে নিয়োগ প্রাপ্ত তিনি বর্তমানে বঙ্গভবনে দায়িত্ব পালন করছেন বলে নিশ্চিত করেছেন সাব- সেন্টারটির মেডিকেল এসিস্ট্যান্ড মো. শামীম আল-মামুন। মো. শামীম আল-মামুন সাব-সেন্টারটির দায়িত্বে থাকলেও নিয়মিত অফিস করে না।
স্থানীয়রা জানান, অফিসের পিয়ন ফজলুকে দিয়েই চলছে জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারি এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটি। গর্ভবতী মা ও নবজাতক শিশুদের সেবা প্রদান, গর্ভকালীন সময়ে মা ও শিশু যত্নের বিশেষ পরামর্শ ও নরমাল ডেলিভারি প্রদান করা হতো এখান থেকে। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসাসেবা একেবারেই ভেঙে পড়েছে ওই সাব-সেন্টারটিতে। বর্তমানে সাব-সেন্টারটি ময়লার ভাগাড়, মাছের বাজার, গাড়ির গ্যারেজ আর নেশাখোরদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল।
হাসপাতালের চারপাশে ঝাড়-জঙ্গল, ময়লা- আর্বজনা থাকার কারণে যে কেউ মল-মূত্র ত্যাগ করায় দুর্গন্ধসহ নানা কারণে রোগীরা এখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। যাদের টাকা আছে তারা শহরে গিয়ে ডাক্তার দেখাতে পারলেও নিরুপায় হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষগুলো। এ ছাড়াও নিয়ম বহির্ভূতভাবে হাসপাতালের সামনের জায়গায় নামমাত্র ভাড়ায় দোকান বরাদ্দ দেওয়ার ফলে হাসপাতালটি গিলে ফেলেছে একটি প্রভাবশালী মহল। সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে।
সরজমিন চিকিৎসা নিতে আসা বেশ কয়েকজন রোগী, স্থানীয় লোকজন, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে কথা হলে এমন হতাশার কথা ব্যক্ত করেন তারা।
রোগীরা বলেন, ডাক্তার শামীম এখানে আসার পর আমাদের কপাল পুড়েছে। মাসে একবার ওষুধ নিতে এলেও খালি হাতে ফেরত যেতে হয়। ডাক্তার স্থানীয় হওয়ায় মুখ দেখে ওষুধ দেন। আমরা একজন ভালো ডাক্তার চাই।
এ সব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মানুষ নানা কথা বলতেই পারে। আমার এ ব্যপারে কোনো বক্তব্য দেয়ার এখতিয়ার নেই। আমার সুপিরিয়র টিএইচও স্যারের অনুমতি ছাড়া এ ব্যাপারে আমি কিছুই বলতে পারবো না।
দেউলাবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সুজাত আলী খান বলেন, আমার ইউনিয়নে অনেক বড় বড় ডাক্তার থাকলেও এলাকায় কেউ রোগী দেখেন না। তারা বাইরে চেম্বার করেন। এখানে একজন মেডিকেল অফিসারের ভীষণ প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে ঘাটাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. সাইফুর রহমান খান বলেন, আমি নিজেও জানি ওই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির ভীষণ খারাপ অবস্থা। এখানে একজন মেডিকেল অফিসারের পোস্ট থাকলেও তিনি এখানে অফিস করেন না। আর বর্তমানে যে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আছেন তার পক্ষে বিশাল এই জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবা প্রদান করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করবো। আশা করি অচিরেই এই সমস্যার সমাধান হবে।
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//