Print Date & Time : 11 May 2025 Sunday 1:51 am

পাকুল্যায় ওভার ব্রিজ নির্মানের দাবীতে ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসি

ছয় বছরে মুক্তিযোদ্ধা ও একই পরিবারের তিনজনসহ শতাধিক নিহত

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুরে পাকুল্যায় বাস স্টেশনে অভার ব্রিজ নির্মানের দাবীতে ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসি। পাকুল্যা বাস স্টেশন এখন মরন ফাঁদে পরিনত হয়েছে। গুরুত্বপুর্ন বাস স্টেশনে অভার ব্রিজ না থাকায় গত ছয় বছরে পারাপার হওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, শিশু, ছাত্র এবং একই পরিবারের তিনজনসহ শতাধিক  নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে পাঁচ শতাধিক বলে ভুক্তভোগি এলাকাবাসি অভিযোগ করেছেন। মহাসড়কের পাকুল্যা এলাকায় অভার ব্রিজ নির্মানের জন্য কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী এবং ৭-৮ গ্রামের মানুষ আন্দোলনে নেমেছেন। অভার ব্রিজ নির্মান না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলনসহ কঠোর কর্মসুচী চালিয়ে যাওয়ার ঘোষনা দিয়েছেন। আগামীকাল রবিবার (২৪ জুলাই) টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি, পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার, এএসপি এস এম আবু মনসুর মুসা, মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হাফিজুর রহমান, এসিল্যান্ড মো. আমিনুল ইসলাম বুলবুল, মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম এবং ওসি হাইওয়ে মোল্লা ও এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ফোর লাইন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর (পিডি ) মো. আবু ইসহাক এলাকাবাসির সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে অভার ব্রিজ নির্মান করে দেবেন বলে জানা গেছে।

আজ শনিবার (২৩ জুলাই) স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ডি এ মতিন এবং জামুর্কি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি মো. আলতাব হোসেন অভিযোগ করেন, পাকুল্যায় মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধের গনকবর, ৪-৫ টি গ্রামের সামাজিক কবরস্থান, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্্ের, সাটিয়াচড়া ছাবদার আলী কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা রয়েছে। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুইটি উচ্চ বিদ্যালয়, জামুর্কি ইউনিয়ন পরিষদ, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্র, ভূমি অফিস, পাকুল্যা বাজারসহ ১৩-১৪ টি গ্রাম রয়েছে। এছাড়া পাকুল্যা বাস স্টেশন দিয়ে পাশ^বর্তী দেলদুয়ার, নাগরপুর, ধামরাই, সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার হাজার হাজার মানুষ রাজধানী ঢাকা, উত্তর বঙ্গ এবং জেলা সদর টাঙ্গাইলের সঙ্গে যাতায়াত করে আসছে। স্থানটি গুরুত্বপুর্ন হলেও এখানে আন্ডার পাস বা অভার ব্রিজ নির্মান না করায় বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসির যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। সরকারের কাছে অনতিবিলম্বে এখানে আন্ডার পাস বা অভার ব্রিজ নির্মান চাই।

এদিকে এলাকাবাসির মধ্যে কলেজ ছাত্র মাইনুল ইসলাম, ব্যবসায়ী সাদেক আলীসহ একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চার রেন চালু হওয়ার গত ছয় বছরের ব্যবধানে এখানে পারাপারের সময় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা ও একই পরিবোরের তিনজনসহ  শতাধিক জন নারী পুরুষ ও শিশু নিহত হয়েছে। সর্বশেষ গত শনিবার রাস্তা পারাপারের সময় ঘাতক বাসের চাকায় পৃষ্ট হয়ে মা-মেয়ে-ছেলেসহ একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছে।

ঘটনার প্রতিবাদে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে আন্ডার পাস নির্মানের দাবীতে বিক্ষুব্দ এলাকাবাসি মহাসড়ক অবরোধ করে তিনঘন্টা প্রতিবাদ সমাবেশ করে। খবর পেয়ে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি, পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার, এএসপি এস এম আবু মনসুর মুসা, মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হাফিজুর রহমান, এসিল্যান্ড মো. আমিনুল ইসলাম বুলবুল, মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম এবং ওসি হাইওয়ে মোল্লা টুটুল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সময়ের মধ্যে অভার ব্রিজ নির্মানের প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাকুল্যা একটি গুরুত্বপুর্ন এলাকা। এখানে একটি অভার ব্রিজ নির্মান জরুরী হয়ে পরেছে। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং মহাসড়কের ফোর লাইন কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা আশ^াস দিয়েছেন দ্রুত সময়ের মধ্যে অভার ব্রিজ নির্মান হবে।

এ ব্যাপারে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ফোর লাইন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর (পিডি ) মো. আবু ইসহাক বলেন, এই রোডের কাজ চলমান রয়েছে। যে সব এলাকায় আন্ডার পাস বা অভার নির্মান ও অভার ব্রিজ প্রয়োজন এগুলোর তালিকা করে করে অর্থ বরাদ্ধ চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়কে জানানো হয়েছে। বরাদ্ধ পেলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এবি//দৈনিক দেশতথ্য//জুলাই ২৩,২০২২//