নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘‘পৌর পানি সরবরাহ উপ-আইনমালা ১৯৯৯ এর ১৫ ধারা’’ লঙ্ঘন করার অপরাধে শাস্তির ভয় দেখিয়ে হয় উৎকোচ, নইলে নিয়মিতকরণ—দুই প্রস্তাব নিয়ে কুষ্টিয়া পৌরসভার কর্মচারীরা এখন পৌরএলাকার বাড়ি বাড়ি। পৌর কর্মচারীদের ১০-১৫ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে অথবা পৌরসভায় গিয়ে ৩৪,৭০০ টাকার রশিদ নিয়ে নগরবাসীকে দফারফা করতে হচ্ছে।ঘটনায় প্রকাশ ডাবলজেড, তারাপাম্প, মোটরযুক্ত নলকূপে প্রয়োজনীয় পানি না পেয়ে সাবমার্সিবল বসিয়েছে কুষ্টিয়ার বহুমানুষ। কিন্তু পৌরসভা বলছে, এটা বেআইনি। আইনটি হলো— ‘‘যেখানে পৌরসভা কর্তৃক নিরাপদ পানি সরবরাহ রহিয়াছে, সেখানে পৌরসভা কর্তৃক নিরাপদ অনুমোদিত পানি সরবরাহ উৎস ব্যতিরেকে অন্য কোনো কূপ বা পুকুর, বা পানি সরবরাহের অন্য কোনো উৎস থেকে পানির সংযোগ গ্রহণ করা যাইবে না।’’অর্থাৎ ‘নিরাপদ পানির সরবরাহ’র শর্ত পূরণ না-হলে কোনো পৌরবাসীকে আইন অমান্যের অপরাধে অপরাধী করা যাবে না । একাধিক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, পানিই পাইনা, নিরাপদ পানি তো পরের কথা। নিরাপদ ও পর্যাপ্ত পানি নিশ্চিত না-হলে পৌরবাসীকে ১৫ নম্বর ধারা মানতে বাধ্য করতে পারেনা পৌরসভা। তারা বলেন, ‘‘ পৌরসভা কর্তৃক নিরাপদ পানি সরবরাহ’’ থাকলে ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ করে কোন দু:খে মানুষ সাবমার্সিবল স্থাপন করছে? একজন ভুক্তভোগী বলেন, পৌরসভার সাব অ্যাসিসটেন্ট ইঞ্জিনিয়র (পানি) সাবিনা ইয়াসমিন কয়দিন আগে তার ঈদগাহপাড়ার বাড়িতে সাবমার্সিবল বসিয়েছেন, পর্যাপ্ত নিরাপদ পানির যোগান থাকলে নিশ্চয়ই তিনি একাজটি করতেন না। বাস্তবতা হলো পৌর এলাকার এমন কোনো বাড়ি পাওয়া দুস্কর যেখানে হস্তচালিত নলকূপ, মোটরযুক্ত নলকূপ, ডাবলজেড, তারাপাম্প অথবা সাবমার্সিবল এর কোনো না কোনো একটা নেই। অথচ ‘‘পৌর পানি সরবরাহ আদর্শ উপ-আইনমালা ১৯৯৯ এর ১৫ ধারা’’ অনুযায়ী এগুলোর সবই অবৈধ। কিন্তু শুরু থেকেই পৌরবাসী পানির মূল উৎস হিসেবেই এগুলো ব্যবহার করে আসছে এবং কোনো টাকা পৌরসভাকে এজন্যে কাউকে দিতে হয় না। কারণ পৌরসভার ‘নিরাপদ ও পর্যাপ্ত পানি’র শর্তটি এখানে অকার্যকর। পাবনা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ইত্যাদি আশেপাশের জেলাগুলোতে সাবমর্সিবল স্থাপনেও পৌরসভাকে কোনো টাকা দিতে হয় না। কিন্তু কুষ্টিয়া পৌরসভাকে দিতে হচ্ছে! ছয়রাস্তার মোড়ের এক ভুক্তভোগী বলেন, আমরা যদি আইন ভঙ্গ করে থাকি, পৌরসভার সকল কর্মকর্তা-কর্মচারিও এই আইন ভঙ্গ করেছেন। কারণ এমন কোনো পৌর কর্মচারী-কর্মকর্তা পাওয়া যাবে না, যে তার স্থাপনায় নলকূপের বিকল্প সংযোগ স্থাপন করেননি। তাদের কয়জন পৌরসভায় ৩৪,৭০০ টাকা দিয়ে নিয়মিতকরণ করে প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে পৌরসভাকে পানির বিল পরিশোধ করেন—এটা জানার অধিকার আছে আমাদের।কোর্টপাড়ার একজন ভুক্তভোগী বলেন, সাবমার্সিবল স্থাপন যদি অন্যায়ই হবে, তাহলে পৌরসভাকে টাকা দিলে সেটা বৈধ হয়ে যাবে কেন? হাইকোর্ট কি খুনকে বৈধতা দিতে পারে? তারা বলেন, পৌরবাসীর টাকায় পৌর-কর্মচারির বেতন হয়, পৌরবাসী ও পৌরসভাবাসীর জন্য আইনের প্রয়োগ আলাদা হতে পারে না। তথ্যমতে, পৌরনির্যাতনের শিকার হয়ে ১৩৫/১ ফজলুল বারী চৌধুরী সড়কের অ্যাডভোকেট মোঃ নওশের আলীসহ ওই এলাকার ৩২ জন বাদী হয়ে কুষ্টিয়া সদর সহকারী জজ আদালতে কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র, নির্বাহী প্রোকৌশলী, সচিব, সহকারী প্রকৌশলী (পানি)কে বিবাদী করে গত ০৮.১২.২১ সালে পৌরসভার নোটিসের বৈধতা চ্যালেঞ্জকরে একটি মামলা দায়ের করেছে।
দৈনিক দেশতথ্য//এল//

Discussion about this post