জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ নুরুচ্ছাফা নামক এক গ্রাহকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জ্যারটেকস্থ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে কর্মরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. রাশেদুজ্জামান সরকারকে মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়ে ‘সাইজ করবেন’ বলে গালাগাল করার অভিযোগ উঠেছে চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সোলায়মান তালুকদারের বিরুদ্ধে।
চেয়ারম্যানের হুমকি পাবার দুই ঘন্টার মধ্যেই আজ (৪ এপ্রিল) দুপুরে ২০/৩০ জনের একটি ‘গ্যাং দল’ পিডিবি কার্যালয়ে ঢুকে ওই প্রকৌশলীকে খুঁজাখুঁজি করে না পেয়ে হুমকি দমকি দিয়ে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ত্যাগ করেন বলে জানা যায়।
খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পটিয়া বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইসমাইল হোসেন এ বিষয়ে চরলক্ষ্যা চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইলে তিনি লোকজন পাঠানোর কথা অস্বীকার করেছেন নিশ্চিত করেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাশেদুজ্জামান।
ঘটনাটি মইজ্জ্যারটেক এমভিএ জি আইএস উপকেন্দ্রে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ রয়েছে বলে ভুক্তভোগী জানান। এ নিয়ে পুরো উপজেলায় নানান আলোচনা সমালোচনা চলছে। এ বিষয়ে ওই প্রকৌশলী উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করবেন বলেও প্রতিবেদক কে জানান।
ভুক্তভোগি ওই পিডিবি কর্মকর্তা ঘটনা বর্ণানা করতে গিয়ে জানান, গতকালকে চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের নুরুচ্ছাফা নামক এক গ্রাহকের মিটারে আমরা টেম্পারিং দেখতে পাই। গ্রাহক অফিসে আসলেন। চেয়ারম্যান সোলায়মান তালুকদারের ভাগিনাসহ কে কে জানি আসলেন। আমরা সকলে বসে কথা বলি। একটা সিদ্ধান্ত নিলাম যে, জরিমানা করব। গ্রাহক তা পরিশোধ করবেন।
‘পরের দিন আবার ওই গ্রাহক আসলেন। চেয়ারম্যান দেখি আবার আমাকে ফোন করে বললেন, আপনি এটা করবেন? আমি বল্লাম ‘আমি তো এটা করতে পারব না ভাই। এটার সিদ্ধান্ত দেবেন আমার এক্সিন (নির্বাহী প্রকৌশলী)। চেয়ারম্যান আবার বললেন, ‘আমি আপনাকে ফোন করেছি। এটি আপনি করে দেবেন ।’
তখন আমি উনাকে বলি, ‘ভাই আপনি আমার এক্সিন স্যারকে একটু কল দেন। উনি বললে আমি করে দিবো।’ তখন চেয়ারম্যান সাহেব বললেন, ‘আধ ঘন্টার মধ্যে আমার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করবেন। আমাদের খাইত করে দেবেন।’ তখন আমি বল্লাম, ‘ভাই আপনার ক্ষমতা থাকলে যা খুশি করেন।’
“উনি মনেহয় আমার এক্সিন স্যারকে পরে ফোন দিলেন। স্যার আমাকে কল ব্যাক করে সিদ্ধান্ত দিলেন, ‘গ্রাহক কে অফিসে ডেকে আনতে। আর মিটার চেক করতে। যদিও গ্রাহক তখন আমার সামনেই বসা ছিল। স্যার আরও বললেন, ‘গ্রাহকের মিটার যদি সত্যিই টেম্পারিং হয়। তখন নিয়ম মতে তিনি শাস্তি পাবেন। আর যদি টেম্পারিং না হয় গ্রাহক মুক্তি পাবে। এটা বুঝিয়ে বলে আমি গ্রাহককে পাঠিয়ে দিই।”
“এসব ঘটার দুই ঘন্টার মধ্যে দেখি অফিসে চেয়ারম্যান সাহেব ২০/৩০ জন বহিরাগত লোক পাঠিয়ে দিলেন। এসব লোকজন অফিসে এসে নানা গ্যাঞ্জাম আর হুমকি দিয়ে চলে যায়। ভাগ্য ভালো আমি অফিসে ছিলাম না। এক্সিন স্যারও ছিল না। স্যার পটিয়া ছিলেন। তবে ইঞ্জিনিয়ার সালেহসহ অন্যান্যরা ছিলেন। আমাদের অফিসের সিসিটিভিতে সব রেকর্ড রয়েছে।” এ নিয়ে এলাকায় নানান সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন-জনপ্রতনিধি হিসেবে চেয়ারম্যান কখনো এ ধরনের আচরণ করতে পারেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সোলায়মান তালুকদার বলেন, ‘এসব ভুয়া কথা। আমি কাউকে হুমকি দিইনি। বরং চরলক্ষ্যার ওই গ্রাহকের কাছ থেকে প্রকৌশলী রাশেদুজ্জামান প্রথমে ১ লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছেন। পরে ৪০ হাজার টাকা। আবার আমার পরিষদের এক দফাদারের কাছ থেকেও টাকা চেয়েছেন। না হলে ভূতড়ে বিল দিবে। অথচ মিটার ওরাই লাগায়। এসব শোনে আমি জনগণের স্বার্থের জন্য যতটুকু রিকুষ্ট করার ততটুকু করেছি। আমি কোন লোক পাঠাইনি। তবে এক্সিন সাহেককে বলেছি এখন রোজা রমজানের দিন। রাশেদ সাহেব প্রায় সময় গ্রাহকদের হয়রানি করেন ।’
পিডিবির পটিয়া বিদ্যুৎ বিপণন ও বিক্রয় বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ইসমাইল হোসেন জানান, ‘চরলক্ষ্যার চেয়ারম্যান সাহেব প্রকৌশলী মো. রাশেদুজ্জামান সরকার কে মোবাইল ফোনে অনেক বাজে ভাবে হুমকি দিয়ে পরে অফিসে লোকজন পাঠিয়েছেন বলে শুনেছি। এ বিষয়ে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে আসলে এ ধরনের আচরণ পাওয়া সত্যিই দুঃখজনক। তবুও ঘটনার সময় অফিসে উপস্থিত সবার সাথে কথা বলে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বিস্তারিত জানতে পারব।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাকে এখনো কেউ এ বিষয়ে জানায়নি। আমি পটিয়া নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলে বিষয়টি জেনে ব্যবস্থা নেব।’
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//