এনামুল হক কুষ্টিয়া: নতুন করে কোভিড সংক্রমনে আতঙ্কিত জনমনের শংকামুক্তির জন্য চিকিৎসকরা নানা আয়োজনের প্রস্তুতির কথা বলছেন।
অথচ প্রাণঘাতি এই মহামারি মোকাবিলার প্রথম ও প্রধান ধাপটি হলো রোগী আদৌ সংক্রমিত কি না বা
কোন মাত্রায় সংক্রমিত তা সনাক্ত করে চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দেন চিকিৎসকরা। অথচ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ সেই পিসিআর ল্যাবের কোটি টাকার সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি চুরির অভিযোগ উঠলেও তার কোন কুল কিনারা করতে পারেনি পুলিশ।
তবে পুলিশের অভিযোগ, অভিযোগকারী সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় তথ্য সহযোগিতা না পাওয়ায় গত এক মাসেও অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়নি।
এঘটনায় চরম বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন
জেলার সচেতন মহল।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা যায়, বিগত কোভিড মহামারি মোকাবিলায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা হয়েছিলো পিসিআর ল্যাবটি। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত এই ল্যাবটি
দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিলো এবং এর তত্ত্বাবধায়নে ছিলেন কুষ্টিয়া মেডিকেলের একজন টেকনোলজিষ্ট। গত ১২ মে টেকনোলজিষ্ট খাইরুল ইসলাম বাদি হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় চুরি যাওয়া সরঞ্জামাদির ফিরিস্তি উল্লেখসহ একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন। পুলিশ সেই অভিযোগের আদৌ কোন কুলকিনারা করতে পেরেছেন কিনা তার কিছুই জানেন না অভিযোগকারী।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পিসি আর ল্যাবের পিছন দিকের গ্রীল কেটে চোরচক্র পিসিআর মেশিন, পিসিআ্ধসঢ়;র মনিটর, পিসিআর ডেক্সটপ, ইনডোর এসি এবং আউটডোর এসিসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি চুরি করে নিয়ে গেছে। যদিও অভিযোগকারী চুরি যাওয়া যন্ত্রপাতি গুলির আনুমানিক মূল্য হিসেবে প্রায় ৪০
লক্ষ টাকার কথা উল্লেখ করেছেন, কিন্ত বাস্তবে চুরি যাওয়া ওইসব সরঞ্জামাদি ও যন্ত্রপাতি মূল্য কোটি টাকারও উর্দ্ধে হবে বলে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রকল্প সূত্রে জানা যায়।
অভিযোগকারী কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের টেকনোলজিষ্ট খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘ল্যাব যন্ত্রপাতি চুরির বিষয়ে থানায় যে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি সেটি থানায় বসেই পুলিশের সহায়তায় লিখা। সেখানে কি ভুল আছে না আছে সে সব তো আমার জানার কথা নয়। তবে অভিযোগের তদন্তে কি অগ্রগতি আছে না আছে সে বিষয়ে তদন্তকারী পুলিশ
আমাকে কিছুই জানায়নি।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা: মো: মাহবুবুর রহমান খান বলেন,‘সম্প্রতিক কোভিড সংক্রমন মোকাবিলায় আমরা পিসিআর ল্যাব পূর্বের স্থান থেকে বর্তমান মেডিকেল কলেজের একাডেমিক ভবনের ৬ষ্ঠ তলায় একটি কর্নার
ঠিক করে ওই ল্যাবটি স্থানান্তরের উদ্যোগ নিই। সেই উদ্যোগে গত মে মাসে ওই ল্যাবে গেলে চুরির বিষয়টি নজরে আসে। সেখান ৩টি পিসিআর মেশিনের মধ্যে দুইটি ইনট্যাক ছিলো আর একটি ব্যবহৃত হয়েছিলো। সেটিও কার্যকর বা চালু অবস্থায় ছিলো। ওই ব্যবহৃত পিসিআর মেশিনসহ ফুল সেটাপ এবং আরও কিছু সরঞ্জামাদি চুরি হয়েছে পিছন দিকের গ্রীল কেটে। তবে বাঁকী ২টি ইনট্যাক পিসিআর মেশিন আমরা মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের তত্ত্বাবধায়নে ইতোমধ্যে মেডিকেল কলেজে নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়াও ইতোমধ্যে আরও একটি নতুন ইনট্যাক পিসিআর মেশিন আমরা পেয়েছি। সব মিলিয়ে কোভিড সংক্রমন পরীক্ষার
জন্য আমাদের বিদ্যমান প্রস্ততি পর্যাপ্ত এবং সন্তোষজনক মনে করছি’। ওখানে
চুরির যে ঘটনাটি ঘটেছে ধারণা করছি সেটি কেবলই রক্ষনাবেক্ষনে প্রয়োজনীয়
জনবল না থাকার কারণেই ঘটেছে বলে মনে করেন তিনি।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোশাররফ হোসেন জানান,
‘পিসিআর ল্যাবের যন্ত্রপাতি চুরি যাওয়া বিচষয়ে দেয়া লিখিত অভিযোগপত্রে
বাদির এনআইডি নম্বল না থাকাসহ কিছু তথ্যগত ত্রুটি ছিলো। সরকারী
সম্পত্তি চুরির মামলা হিসেবে রেকর্ড করার জন্য সেগুলি সংশোধন করে দেয়ার কথা
বলেছিলাম। কিন্তু অদ্যবধি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ এবিষয়ে কার্যকরী কোন
উদ্যোগ না নেয়ায় অভিযোগপত্রটি এখনও মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়নি’।
তবে পুলিশ নানা ভাবে সোসির্ংসহ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে চুরি যাওয়া মালামাল উদ্ধারে।

Discussion about this post