ষ্টাফ রিপোর্টার, ঠাকুরগাও : ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে ভূয়া এতিম ও অস্বচ্ছল নিবাসী দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে গোগর পাটুয়াপাড়া হাফিজিয়া এতিমখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। সরকারি অর্থ তছরুপের অভিযোগের ভিত্তিতে গত রোববার রাতে উপজেলা প্রশাসন প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনে গেলে ভূয়া নিবাসীর বিষয়ে সত্যতা পান। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিলে এতিমখানাটির নেপথ্যের এক নায়ক বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন।
পীরগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা এসএম রফিকুল ইসলাম জানান, অভিযোগ এবং নিয়মিত তদারকির অংশ হিসেবে রোববার রাতে তাকে সাথে নিয়ে উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের গোগর পাটুয়াপাড়া হাফিজিয়া এতিমখানা পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: রকিবুল হাসান। এ সময় ২৬ জন নিবাসীকে এতিমখানায় উপস্থিত পান। যাদের অনেকেই এতিম নয়। পরে তাদের রেকর্ডাদি যাচাই করে নিশ্চিত হন ওই এতিমখানায় কাগজে কলমে ১৭০ জন নিবাসী রয়েছে। এর মধ্যে ৬২ জন শিক্ষার্থী সরকারি ক্যাপিটেশন অনুদান ভোগ করছে। অথচ ৬২ জন এতিম ও অসহায় শিক্ষার্থীর সরকারি ক্যাপিটেশন সুবিধা পাওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানটিতে ১২৪ জন এতিম অসহায় নিবাসী থাকার নিয়ম রয়েছে। সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ভূয়া এতিম ও অসহায় নিবাসী দেখিয়ে সরকারি অর্থ লোপাট করা হচ্ছে এমন অভিযোগ ছিল তাদের কাছে। পরিদর্শনে গিয়ে তারা এর সত্যতা পেয়েছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা সমাজ সেবা অফিসারকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
এদিকে ভুয়া এতিম ও অসহায় নিবাসী দেখিয়ে সরকারী অর্থ আত্নসাৎ করার বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এতিমখানাটির নেপথ্যের নায়ক অবসরপ্রাপ্ত ল্যাফটেনেন্ট কর্ণেল সো. রানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনের নামে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, এই রানা ঢাকায় বিভিন্ন দলের বড় বড় রাজনৈতিক নেতাদের সাথে উঠবস করেন। তার মদদে এতিমখানাটিতে সরকারী অর্থ আত্নসাতের মহোৎসব চলছে। কর্ণেল (অবঃ) রানা’র ভয়ে এলাকার লোকজন প্রতিষ্ঠানটির দূর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারছেন না।
এ বিষয়ে কর্নেল (অবঃ) সোহেল রানা’র মতামত জানতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে এতিমখানাটির মুহতামিম রবিউল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে- তিনি রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার সাথে সাথেই ফোন কেটে দিয়ে মোবাইল বন্ধ করে দেন।
এতিমখানার সভাপতি ও উপজেলা বিএনপি নেতা মঈনুল হোসেন সোহাগ জানান, নিবাসী সংখ্যা’র বিষয়ে আমার জানা নেই। আমি এতিমখানার তত্ত্বাবধায়কের সাথে কথা বলে জানাবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রকিবুল হাসান বলেন, সমাজ সেবা কর্মকর্তার সাথে তিনি ঐ এতিমখান পরিদর্শনে যান। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির দাপ্তরিক নিবাসীর সাথে বাস্তবতার বিশাল ফারাক দেখতে পান এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন। এতিমখানার লোকজন বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন বলেও জানান তিনি।

Discussion about this post