নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে পুলিশের উপর হামলাকারীদের ছাড়িয়ে নিতে বিহারী ক্যাম্পের নারী-পুরুষ থানা ঘেরাও করেন।
এ সময়ে পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে আদমজীর বিহারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (১৩ জুন) সকালে বিহারী ক্যাম্পের কয়েকশত নারী-পুরুষ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন।
এসময় পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল ও শর্টগানের গুলি করে তাদেরকে সড়ক থেকে ছত্রভঙ্গ করে সরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় কমপক্ষে ১৫-২০ জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে আদমজী এলাকার চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
জানা যায়, শুক্রবার আদমজী জামে মসজিদে পুলিশ কর্মকর্তার উপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামীদের গ্রেফতার করতে রোববার (১২ জুন) দিবাগত রাত ১টা থেকে সোমবার (১৩ জুন) ভোররাত ৪টা পর্যন্ত বিহারী ক্যাম্পের ভেতর অভিযান চালায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানার বিপুল সংখ্যক পুলিশ। অভিযানে ৪০ জনকে গ্রেফতার এবং অনেক নারী-পুরুষকে লাঞ্ছিত এবং ঘরের দরজা জানালা ভাংচুরের অভিযোগ আনে বিহারী ক্যাম্পের বাসিন্দারা। এই ঘটনার প্রতিবাদে ক্যাম্পের বাসিন্দারা থানা কার্যালয় ঘেরাও করে। এতে নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-চিটাগাংরোড সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে আদমজী ইপিজেডগামী শ্রমিকদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। পরে পুলিশ ও র্যাব যৌথভাবে অভিযানে লাঠিচার্জ, টিয়ার সেল ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্র-ভঙ্গ করে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সোমবার সকাল ৬টা থেকে থানা কার্যালয়ের আশপাশে অবস্থান নেয় বিহারীরা। এর পাশাপাশি আদমজী ইপিজেডের তিনটি প্রবেশ পথেও ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। সকাল ৮টার দিকে বিহারী ক্যাম্পের বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ঘেরাও করে প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এসময় তারা নারায়ণগঞ্জ-আদমজী ইপিজেড সড়কের উপর কাঠের টেবিল, চকি ফেলে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয় অভিযানে যদি কোন নিরাপরাধ ব্যক্তি আটক হয়ে থাকে আলোচনার মাধ্যমে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা সবাইকে ছেড়ে দেয়ার দাবি জানায়। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তর্কের এক পর্যায়ে সকাল ৯টার দিকে এ্যাকশনে যায় পুলিশ ও র্যাব। এসময় উভয়ের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে বিহারীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ার সেল ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বিহারী জানায়, পুলিশ সোর্স ক্যাম্পের ভুট্ট ও নাসিম মাস্টারের ভাই তাসলিম পুলিশের মামলায় আসামীদের নাম দিয়েছে । ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল না এমন ব্যক্তিদের নাম তারা পুলিশকে দিয়েছে। বিহারী ক্যাম্পের চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন জানান, শুক্রবার মসজিদের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। রবিবার রাত থেকে সোমবার ভোররাত পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক পুলিশ ক্যম্পের ভেতর অভিযান চালায়। পুলিশ অনেক নারী-পুরুষকে মারধর করেছে। আবার ঘটনার সময় মসজিদে যায়নি এবং হামলায় ছিল না তাদেরও আটক করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় ক্যাম্পের বাসিন্দারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মশিউর রহমানকে ফোন করে পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শওকত জামিল জানান, রাতে ৩৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আছে।
প্রসঙ্গত শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় আদমজী জামে মসজিদে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই মির্জা শহীদুল ইসলাম বাদী হয়ে শনিবার রাতে ৫০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১২৫ জনকে আসামি করে এ মামলাটি দায়ের করেন।
আর//দৈনিক দেশতথ্য//১৩ জুন-২০২২//

Discussion about this post