সিলেট অফিস : রমজানের প্রথম দিনই সিলেট নগরীতে জমজমাট হয়ে উঠেছে ইফতারী বাজার। প্রতি বছরের মতোই সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ইফতারীকে তুলে ধরতে রোজার প্রথম দিনেই তুমুল ব্যস্ত সময় কাটান দোকানীরা।
পাশাপাশি রকমারি ও নানাপদের ইফতার সামগ্রী কিনতে নগরীর অভিজাত রেস্টুরেন্ট গুলোতে ভিড় করেন ক্রেতারাও। সাধারণ ছোলা-মুড়ি থেকে শুরু করে কাবাব, টিকিয়া, রোস্ট, পোলাও, ফল-মূল, ‘বড় বাপের পোলায় খায়’সহ নানা খাবার। আর হরেক রকম আয়োজন রয়েছে রেস্টুরেন্ট গুলো থেকে শুরু করে ফুটপাতে বসা ইফতারের দোকানেও। রমজানে সাময়িক এই ইফতারী ব্যবসায় ফুডব্যবসায়ী ছাড়াও জড়িত হয়েছেন বিভিন্ন অভিজাত পেশা ও শ্রেণীর মানুষজন।
এসব ইফতার সামগ্রীর মূল্য দেখে বোঝা যায় কোনটি উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্তের। প্রথম রোজাতেই সব শ্রেণির ক্রেতার আগমন হচ্ছে এসব দোকানে।
মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, প্রচলিত ইফতারির পাশাপাশি নানান স্বাদের বাহারি আয়োজন সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। বাহারি এসব ইফতারির স্বাদ নিতে দুপুরেই দূর-দূরান্ত থেকে ভোজনবিলাসী নারী-পুরুষরা ছুটে এসেছেন। ঐতিহ্যবাহী জিলাপি কিনতে দেখা গেছে দীর্ঘ জটলা।
প্রতি বছরের মতো এবারও সিলেটে ইফতারির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ‘আখনি, নামের একটি বিশেষ ইফতারি। এটি কিনতে ক্রেতাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ’আখনি’ তৈরিতে মাংস, ডাবলি, বুটের ডাল, ডিম, আলু, ঘি, কাঁচা ও শুকনো মরিচসহ নানা পদের খাবার আইটেম এবং হরেক ধরনের মসলা প্রয়োজন হয়।
মদিনা মার্কেট এলাকায় মৌসুমী ইফতারি বিক্রেতা শাহ মোঃ আব্দুল মুহিত চৌধুরী বলেন, অন্য পেশার পাশাপাশি প্রত্যক রমজানে আমি ইফতারীর ব্যবসা থাকি। এতে রয়েছে অর্থ আয়ের বহু সুযোগ, যা সারা বছর থাকে না। তাই আমাদের কাছে রকমফের ইফতারি রয়েছে। এখন পর্যন্ত বিক্রি করে কুলাতে পারছি না। এই ভিড় আরও বাড়বে।
নগরীর ইফতার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, জিলাপি কালাই আইটেম ২৪০ টাকা, আটার জিলাপি ২০০ টাকা, বড় সাইজের জিলাপি ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।প্রতি পিস শিঙারা ১৫ টাকা , সমুচা ১৫ টাকা, বেগুনি ১০ টাকা, আলুচপ ১৫ টাকা, ডিমচপ ৩০ টাকা, লালশাক-কলমি শাক ও পুই শাকের বড়া প্রতিটি ১৫ টাকা, চিকেন চাপ ১৫০ টাকা, বিফ চাপ ১৮০ টাকা, জালি কাবার প্রতি পিস ৬০ টাকা, শামি কাবার প্রতি পিছ ৪০ টাকা, চিকেন পাকুড়া প্রতি পিস ২০ টাকা। এছাড়া ঘুমনি ১০০ টাকা কেজি, ছোলা ২০০ থেকে ২৭০ টাকা, গরুর টিকা ৬০ ও মুরগির টিকা ৫০ টাকা, সাসলিক ৭০ টাকা, কোয়েল পাখির রোস্ট ১০০ থেকে ১৩০ টাকা, চিকেন রোল ৮০ টাকা, আস্ত মুরগি ৪৫০ টাকা, পনির ৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও পানীয় আইটেমের মধ্যে পেস্তা শরবত ২৮০ টাকা লিটার, মাঠা ১২০ টাকা লিটার, বোরহানি ১৫০ টাকা লিটার, ফালুদা বড় বাটি ৩০০ টাকা, ফালুদা ছোট বাটি ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
পানীয় আইটেম বিক্রেতা আম্বরখানার দিদার আহমদ জানান, সবাই চায় মজার ইফতারি করতে। যুগ যুগ ধরে মানুষ পেস্তা শরবতের জন্য পাগল। এখানের খুব জনপ্রিয় আইটেম এটা।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রতি রমজান মাসে আমি জিন্দাবাজারে পেস্তা, ফালুদা, বোরহানিসহ বেশ কয়েকটি আইটেম বিক্রি করছি। আমি অন্য পেশার লোক হলেও রমজানে এ ব্যবসা করে অনেক মুনাফা অর্জন করতে পারি। পাশপাশি মানুজনকে ইফতারের আনন্দে মাতিয়ে তোলার চেষ্টা করি। আমার দোকানে ভালোই বিক্রি হচ্ছে। আশা করছি এ বছর ভালো ব্যবসা করতে পারবো।
নগরীর বন্দরবাজার পেপার পয়েন্ট এলাকায় ভ্রাম্যমান ইফতারি বিক্রেতা তাওহীদুল ইসলাম তাওহীদ বলেন, আমি প্রিন্টিং ও কম্পিউটারের ব্যবসায়ী, কিন্তু রমজান মাসে এই ব্যবসা ভালো যায় না। তাই প্রতি বছরই রমজান মাসে এখানে ইফতারি বিক্রি করি। রমজানে এটা আমার আলাদা একটা আয়ের উৎস।
তিনি বলেন, অন্যান্য বছর রোজার প্রথম দিনের তুলনায় আজ বিক্রি কিছুটা কম হয়েছে। কারন সব কিছুর দাম বেড়েছে, অনেকেই দাম জিজ্ঞাসা করেন, কিন্তু না কিনেই চলে যাচ্ছেন।
নগরভবন গেইটের সামনের সিদ্ধডিম বিক্রেতা ছুরত আলী জানান, হকার উচ্ছেদ ও পুনর্বাসনের কারণে এবার এখানে তেমন ক্রেতা সমাগম ঘটছে না। আশাকরি রাতে প্রচুর ক্রেতার সমাগম ঘটবে। প্রতিবছর আমার এজেন্ট দোকানী রমজানে ইফতার থেকে শুরু করে সারারাত এখানে সিদ্ধ (গরম) ডিম বিক্রি করে থাকে। এতে প্রায় বছরের প্রায় অর্ধেকটা আয়ই রমজানে হয়ে থাকে।
নগরের জিন্দাবাজার রাজাম্যানশনের সামনে চানা পিয়াজু ও জিলাপি বিক্রেতাদের দোকানগুলোতে লাইন। এগুলোর মধ্যে এক দোকানের ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নান হানাই জানান, গতবছর রোযার প্রথম দিনের চেয়ে এবার ইফতারী ক্রেতাদের ভিড় বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে মাল মসলার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রেতার তুলনায় লাভ কম হচ্ছে।
খালিদ সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ১২ মার্চ ২০২৪

Discussion about this post