যার নামে বরাদ্দ প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর, তিনি বসবাস করছেন ঘরের বারান্দার এক কোণে। আর খাট – পালঙ্ক নিয়ে আরাম – আয়েশ ঘরের কক্ষে মধুর সংসার গড়ে তুলেছেন এক প্রভাবশালী পরিবার। অনিয়মের এমন চিত্র কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার শোমসপুর ইউনিয়নের সাতপাখিয়া গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে।
এলাকাবাসী জানায়, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় সাতপাখিয়া গ্রামে ১৩ টি ঘর নির্মাণ করে উপজেলা প্রশাসন। তন্মধ্যে একটি ঘরের বরাদ্দ পেয়েছেন স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠ হারুন অর রশিদ (৭৫)। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে ঘর ও ঘরের চাবি প্রদান করা হয়।
কিন্তু সরকারি এই ঘর দখল করে নেন স্থানীয় মো. আবুহার ব্যাপারীর প্রভাবশালী ছেলে মো. মন্টু ব্যাপারী (৪০)। ফলে বরাদ্দ পাওয়ার প্রায় ১০ মাস অতিবাহিত হলেও ঘরের কক্ষে মাথা রেখে এক দিনও ঘুমাতে পারেননি অসহায় এই বৃদ্ধ। কনকনে শীত উপেক্ষা করে বসবাস করছেন ওই ঘরের বারান্দার এক কোণে। আর খাট, পালঙ্ক, তোশক, গ্যাসের চুলাসহ ঘরে আরাম আয়েশে বসবাস করছেন ওই প্রভাবশালী পরিবারটি।
এলাকাবাসী আরো জানায়, প্রভাবশালীর দখলে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর – এমন খবর পেয়ে গত ৯ নভেম্বর আশ্রায়ণ প্রকল্প সরেজমিন পরিদর্শন করেন খোকসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন বিশ্বাস। ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় সেদিন এলাকাবাসী ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ বাদশার উপস্থিতিতে মন্টুর পরিবারকে এক সপ্তাহের মধ্যে ঘর ছাড়ার নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু প্রভাবশালী ওই ব্যক্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিয়মিত বসবাস করতে থাকেন। পরে প্রশাসনের নির্দেশে গত ১৭ নভেম্বর গ্রাম পুলিশ ও ইউপি সদস্য মিলে ঘরে তালা লাগিয়ে দেন।
এরপর প্রভাবশালী পরিবারের সসদ্যরা প্রায় দুই সপ্তাহ উপজেলায় ঘুরে ঘুরে ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম রেজাকে ম্যানেজ করে ঘরের চাবি নিয়ে আসেন এবং পুনরায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাস শুরু করেছেন। আর ঘরের মালিক হারুন থাকছেন বারান্দায়।
সোমবার সকালে সরজমিনে গেলে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের দরজায় ঝুলছে তালা। আর ঘরের মালিক বারান্দার এক কোনায় ছালার বস্তা দিয়ে ঘিরে মেঝেতে শুয়ে আছেন। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে অসুস্থ হারুন অর -রশিদ বিছানা থেকে উঠে বসেন।
এসময় হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ ঘরে একদিনও মাথা দিয়ে ঘুমাতে পারিনি। ঘর চলে যাবে বলে ওরা (প্রভাবশালী) বাধ্যতামূলক আমাকে ঘরের বারান্দায় বিছানা করে দিছেন। আর ছেলে সন্তান নিয়ে ওরা থাকেন ঘরের মধ্যে।’
এরপর প্রভাবশালী মন্টুর স্ত্রী মুসলিমা খাতুন ঘরের দরজার তালা খুলে দিলে ভিতরে প্রবেশ করে আরো দেখা গেছে, ঘরের ভিতরে খাট, পালঙ্ক, গ্যাসের চুলাসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো।
এ ব্যাপারে মন্টুর স্ত্রী মুসলিমা খাতুন (২৫) বলেন, ‘ আমাদের ঘর দেওয়ার কথা বলে আগের ইউএনও স্যার আমাদের জমির পাশে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরটি নির্মাণ করেছেন। কিন্তু মানুষের নানান অভিযোগ থাকায় পরে ঘরটি হারুনকে দেন। আমরা বৃদ্ধ হারুনকে দেখাশোনা করার মিনিময়ে ঘরে থাকি, আর বৃদ্ধকে বারান্দায় থাকার জায়গা করে দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ বর্তমান ইউএনও স্যার একবার ঘরে তালা দিয়েছিল। আমার ভাইস চেয়ারম্যানের মাধ্যমে চাবি নিয়ে আবারো বসবাস করছি।’
এবিষয়ে জানতে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম রেজা’র মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি কলটি রিসিভ না করা।

Discussion about this post