ওপেলিয়া কনি,ষ্টাফ রিপোর্টারঃ নির্বাচন খুব জমে উঠেছে একথা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছেনা। কারণ এই নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ।
মানুষ নির্বাচন কেন্দ্রে যাবেনা এমন বিশ্বাস আঁকড়ে পড়ে আছে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো।
তারপরও কিন্তু নির্বাচনী ডামাডোল নিরব নেই। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে প্রজ্জ্বলিত আগুনের ফুলকি গুলো যেমন নৌকার মাঝিদের চুবান দিয়ে আত্মতুষ্টির ঢাক পেটাচ্ছেন, ঠিক সেভাবেই আওয়ামী লীগের অন্তর ফাটা নেতা উপনেতা ও কর্মীরা দলের ক্ষমতাসীনদের পরাস্ত করতে মরিয়া।
তাই লোকে বলছে জনগণ ভোট দিতে পারলে অমুক হবে। না পারলে এমপি মন্ত্রী ও নেতাদের পোশ্যরা জিতবেন।
নির্বাচন প্রভাবমুক্ত করতে দলীয় (আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী) এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের নির্বাচনে প্রার্থী না হতে নির্দেশনা কেন্দ্রীয় ভাবে আওয়ামী লীগের থাকলেও, নানা কারণে তৃণমূল পর্যন্ত তা শতভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি, ইতোমধ্যে প্রথম ধাপের নির্বাচনেই সারাদেশে মন্ত্রী-এমপি’র অন্তত দশ স্বজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন হবে ২১ মে। এই ধাপে ভেড়ামারা, মিরপুর, দৌলতপুর ও কুমারখালি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ৪শ’ ১৯টি কেন্দ্রে ভোট দিবেন ১১ লাখের বেশি মানুষ। কুষ্টিয়ার ছয়টি উপজেলার মধ্যে বেশ কয়েকটিতে দেখা যায়নি চিরাচরিত নির্বাচনী আমেজ।
দৌলতপুর:
এই দৃষ্টিতে যদি দেখি তাহলে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে এমপির ভাই জিতবেন এটা সর্বজন বিদীত। তারপরও বলতেই হবে এই উপজেলায় এমপির ভাই টোকেন চৌধুরী তার প্রতিপক্ষের চেয়ে অনেক অনেক গুণে মজবুত নেতা। দেখা যাক সেখানকার বাস্তবতা কি বলে।
প্রায় ৫শো বর্গমাইল আয়তনের নদী মাতৃক উপজেলা কুষ্টিয়ার দৌলতপুর। এই উপজেলায় রয়েছে ভারত-বাংলাদেশের দীর্ঘ সীমানা। এখানে জনসংখ্যা প্রচলিত অংকে বর্তমানে ৮ লাখের মতো। ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ সবাই ক্ষমতাসীন জৌলুশপূর্ণ সময় পার করেছে দৌলতপুর ভূখণ্ডে।
কুষ্টিয়া-১ আসন (দৌলতপুর) এর দু’বারের সংসদ সদস্য, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ্ব রেজাউল হক চৌধুরীর সহোদর বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরী ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিজেও একজন দক্ষ-অভিজ্ঞ ও বেশ জনপ্রিয় রাজনৈতিক সংগঠক হিসেবে পরিচিত। ব্যাক্তি বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করলে এবং তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতার মধ্যেও বিজয়ী হলে অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই বলে মনে করছেন উপজেলাটির বেশির ভাগ মানুষ।
দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরী। এই পদে ঘোড়া মার্কা নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন দৌলতপুর উপজেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক প্রকৌশলী আনিসুর রহমান। যদিও রাজনীতি কিংবা অন্যান্য গণমূখী কার্যক্রমে দৌলতপুরের মানুষের কাছে আনকোরা আনিসুর রহমান। ভোটের মাইকিং আর অল্পকিছু পোস্টারের মাধ্যমেই উপজেলাটির মানুষের পক্ষে তাকে যতটুকু চেনা সম্ভব হয়েছে ততটুকুই বলে মন্তব্য দৌলতপুরের অনেক বাসিন্দার।
এছাড়া দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ কিংবা অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কেউ-ই প্রার্থী হননি চেয়ারম্যান পদে। এমনকি প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আফাজ উদ্দিন আহমেদ পরিবার থেকেও প্রার্থী হননি সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা আইনজীবী এজাজ আহমেদ মামুন।
প্রার্থী হতে চেয়েও ফিরে গেছেন জেলা আওয়ামী লীগের স্বনামখ্যাত নেতা, রাজনৈতিক ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সদস্য আইনজীবী হাসানুল আসকার হাসু। প্রার্থী নেই দৌলতপুরে সচল রাজনীতির অন্যান্য রাজনৈতিক দল উপজেলা জাসদ এবং জাতীয় পার্টিরও কোনো নেতা-সমর্থক।
বর্তমানে এখানে (দৌলতপুরে) আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য বড় তিনটি গ্রুপের দু’টিই সবশেষ জাতীয় নির্বাচনে পরাজিত হয়ে এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অজ্ঞাত কারণে প্রার্থী না দিয়ে নিজেদের কর্মীদের মধ্যেও তৈরি করেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য আ: কা: ম: সরওয়ার জাহান বাদশাহ্ এবং আফাজ উদ্দিন আহমেদের ছেলে এজাজ আহমেদ মামুন বিশ্বাস উভয়ে একসাথে চলছে ব’লে রাজনৈতিক অঙ্গনে কথা প্রচলিত থাকলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহোদর নাজমুল হুদা পটল স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী হলে, আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার পদপ্রার্থী সরওয়ার জাহান বাদশাহ্’র সাথে পুনরায় বিভক্ত হোন তারা। ফের ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগে এক টেবিলে বসে নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার আনুষ্ঠানিক পরিকল্পনা করলেও তা বাস্তবায়নে দেখা যায়নি তাদের।
চেয়ারম্যান প্রার্থী আনিসুর রহমান সাবেক এমপি সরওয়ার জাহান বাদশাহ্’র আশীর্বাদপুষ্ট। এমন গুঞ্জন থাকলেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর পক্ষেই ভোটের মাঠে কাজ করতে দেখা যায়নি সরওয়ার জাহান বাদশাহ্কে। অন্যদিকে বর্তমান সংসদ সদস্য, উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আলহাজ্ব রেজাউল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে থাকা নেতাকর্মীরা তাদের অন্যতম নেতা বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরীকে বিজয়ী করতে আনুষ্ঠানিক ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এই ভোট যাত্রায় যোগ হয়েছেন দ্বিধাবিভক্ত অপর দুই গ্রুপ বাদশাহ্-মামুনের অনুকূলে থাকা অনেক নেতাকর্মীই, তারা এখন জোরেশোরে কাজ করছেন যুবলীগের সভাপতি বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরীকে বিজয়ী করার লক্ষ্য নিয়ে।
দৌলতপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সকল কর্মীদের এক ছাতার ছায়ায় থাকতে, দৌলতপুরের উন্নয়নে অংশ নিতে আহ্বান চৌধুরী পরিবারের নেতাদের। আগামীর রাজনীতিতে কর্মীদেরও অধিকাংশের ঝোঁক ঐক্যমতে বলে মন্তব্য অনেক রাজনীতিকের। আলোচ্য চৌধুরী পরিবারের রাজনীতি কর্মী বান্ধব রাজনীতি বলে বেশ জনশ্রুতি রয়েছে।
দৌলতপুরে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ভোট চলছে ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ ও নারী পদে। আগামী ২১ মে দৌলতপুরের ১৪টি ইউনিয়নের ১শ’ ৪১ ভোটকেন্দ্রে ভোট দেয়ার কথা রয়েছে মোট ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৩শ’ ৯১ জন ভোটারের। সন্তোষজনক ভোটার উপস্থিতিতে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করছেন সবাই।
কুষ্টিয়া সদর:
কুষ্টিয়া সদর নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন নেই। কারণ ওই উপজেলার ৬ষ্ঠ নির্বাচনে কুষ্টিয়া সদরের সংসদ সদস্যের স্বজন ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, গেলো বারের উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা ৬০ হাজারেরও বেশি ভোট নিয়ে পুনরায় বিজয়ী হয়েছেন। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন মাত্র কয়েক হাজার ভোট।
ভেড়ামারা:
এই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই একক প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী ভেড়ামারা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু হেনা মোস্তফা কামাল। তিনিও সদর এমপির স্বজন।
খোকসা:
প্রথম ধাপে খোকসার নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিলো সাম্প্রতিক নির্বাচন চিত্রের চেয়ে ভিন্ন। এখানে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতার মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের ভাইকে হারিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা আল মাসুম মোর্শেদ শান্ত।
মিরপুর:
মিরপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতা হতে পারে। উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতা আব্দুল হালিম ও কামাল হোসেনের মধ্যে। এমন গল্প এখন চায়ের কাপে। এছাড়াও প্রার্থী আছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শরীফুল ইসলাম লিটন।
কুমারখালি:
চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান খান ও সাবেক সংসদ সদস্য দম্পতির ছেলে গোলাম মুর্শেদ পিটার। এখানেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের গল্প ভোটের মাঠে।
ওপেলিয়া কনি//দৈনিক দেশতথ্য//২০ মে ২০২৪//

Discussion about this post