তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : টানা তাপপ্রবাহে হাঁসফাঁস মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলো প্রকৃতির স্বস্তির বৃষ্টিতে ভিজছে। বৃষ্টিতে সতেজ হয়ে উঠতে শুরু করেছে চায়ের কুঁড়ি। ফলে নির্মল সবুজের দেখা মিলেছে সবুজের গালিচা। গাছগুলোতে উঁকি দিতে শুরু করেছে নতুন নতুন কুঁড়ি। গত কয়েকদিন ধরে মৌলভীবাজারে কম-বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
চলতি মৌসুমের শুরুতে তাপদাহে ঝলসে যায় অধিকাংশ বাগানের চা গাছ। বিভিন্ন বাগানে লাল রোগের প্রাদুর্ভাব ও দেখা দিয়েছিল। চা উৎপাদন মৌসুমের শুরুতেই মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানের উৎপাদনের গতি কমে যায়। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে পরিবর্তনের দেখা দিতে শুরু করেছে বাগানগুলোতে।
চা শ্রমিকরা জানান, নব উদ্যোমে পাতা তোলার কাজ শুরু করছেন তারা। পাতা সংগ্রহের (নিরিখ) ওজন গণনা শুরু হয়েছে।
চা সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি মৌসুমে চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৩ মিলিয়ন কেজি। ২০২৩ সালে ১০৩ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়। ২০২৪ সাল এসে উৎপাদন কমে দাঁড়ায় ৯৩ মিলিয়ন কেজিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ মিলিয়ন কেজি কম।
দেশে মোট নিবন্ধনকৃত চা বাগান রয়েছে ১৬৮টি। পঞ্চগড়ে রয়েছে ক্ষুদ্রায়িত অনেকগুলো চা বাগান। পঞ্চগড় ও দেশের ১৬৮টি বাগান মিলিয়ে ২০২৫ সালের চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৩ মিলিয়ন কেজি।
চা প্রকৃতি নির্ভর একটি কৃষিজাত পণ্য। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চায়ের উৎপাদনও ভালো হয়। এজন্য প্রয়োজন পরিমিত বৃষ্টি ও সূর্যের কিরণ। প্রায় চার মাস আগে থেকেই চা বাগানের সেকশনগুলোয় অধিক উৎপাদনের আশায় গাছের (প্রুনিং) ছাটাই করার কাজ করে থাকেন। এসময় চা বাগানের রুক্ষ-শুষ্কভাব দেখা দেয়।
চলতি বছর তাপমাত্রার তারতম্য ঘটায় বিপাকে পড়েন চা সংশ্লিষ্টরা। বৃষ্টির অভাবে গাছ রুক্ষ ও বাগানে নতুন পাতা কুঁড়ির খুব বেশি দেখা মিলছিল না। যে পাতা আসছিল, সে গুলো আবার রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। এ কারণে স্বস্তির বৃষ্টিতে বাগান মালিক ও শ্রমিকরা খুশির আমেজে। দুশ্চিন্তা কেটেছে তাদের।
রাজনগর চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. শাহাবউদ্দিন বলেন, “বৃষ্টির আগে আমরা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। এখন সেই শঙ্কা কেটে গেছে। শ্রমিকরা নিয়মিত বাগান থেকে পাতা উত্তোলনে ব্যস্ত।”
উপজেলার উত্তরভাগ চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান মকসুদ বলেন, “চা উৎপাদনে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির পাশপাশি প্রকৃতির ওপর নির্ভর করতে হয়। চায়ের জন্য পরিমিত বৃষ্টি ও পর্যাপ্ত সূর্যের আলোর প্রয়োজন হয়।”
সিলেটের লাক্কারতুরা চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. মুজিবুর রহমান বলেন, “আমরা চা উৎপাদন নিয়ে মৌসুমের শুরুতেই বিপাকে পড়েছিলাম। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সব চা বাগানের প্রাণ ফিরে চিত্র বদলেছে।”
বাংলাদেশ চা সংসদের (বিসিএস) সিলেট অঞ্চলের চেয়ারম্যান জি এম গোলাম মোহাম্মদ শিবলি বলেন, “দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় তাপমাত্রা বেশি থাকায় চায়ের উৎপাদনে ব্যহত হয়। বৃষ্টির ফলে চা গাছগুলো পুরনো রূপে ফিরে এসেছে।শ্রমিকরা বাগানগুলো থেকে পাতা তুলতে শুরু করেছেন।” আশা করা যাচ্ছে প্রতিকুল আবহাওয়া চলমান থাকলে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

Discussion about this post