কথা সাহিত্যক হুমায়ূন আহমেদ তখন তেমন কেউ নন। তবে তার প্রেমিকা গুলতেকিন খানের সামাজিক অবস্থান ছিল অনেক উপরে। গুলতেকিন ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও সাহিত্যিক প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ’র নাতনি। গুলতেকিন খানের জন্ম রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে।
গুলতেকিনকে প্রেম নিবেদন করে সাড়া পান হুমায়ূন আহমেদ। প্রেমে পারিবারিক বাধা না থাকায় ১৯৭৩ সালে তারা সংসারী হন। এরপর দু’জনের প্রচেষ্ঠায় সাহিত্যের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেন হুমায়ূন আহমেদ।
গুলতেকিন আজিমপুর গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি সম্পন্ন করে হলিক্রস কলেজে ভর্তি হন। পরীক্ষার তিন মাস আগে হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ায় পরীক্ষা দেওয়া আর হয়নি।
এরপর তিনি লম্বা বিরতির পর হুমায়ূন আহমেদের নানা বাড়ি মোহনগঞ্জের একটি কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করেন। সংসারের চড়াই-উতরাই ও পড়াশুনায় হুমায়ূন আহমেদের অবহেলা এবং অসহযোগিতা তাঁকে এগুতে দেয়নি। এরপরও তিনি অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
সমাজ বিজ্ঞানে ভর্তি হলেও পরে তিনি ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে চলে যান। ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে স্কলাসটিকা স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ব্যক্তিত্ব এবং অধ্যাবসায় দিয়ে পরিচয় ও খ্যাতি অর্জন করেন৷ গুলতেকিন খান কবি হিসেবে অত্যন্ত সফল ও পরিচিত মুখ ৷
২০০৩ সালে প্রেম করে বিয়ে করা সম্পর্কের বাঁধন ছিঁড়ে যায়। তাদের ৩০ বছরের দাম্পত্যের ফসল হয়ে টিকে আছে তিন মেয়ে এবং এক ছেলে। বড় মেয়ে নোভা আহমেদ, মেজো মেয়ে শীলা আহমেদ এবং ছোট মেয়ে বিপাশা আহমেদ ৷ আর বড় ছেলে নুহাশ হুমায়ূন।
অনেকেই মনে করেন গুলতেকিন খান কেবলই জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের প্রথম স্ত্রী ছিলেন। কিন্তু না, তিনি একজন খ্যাতিমান কবি ও স্বনামধন্য ব্যক্তি ৷ তিনি বরেণ্য কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী ছিলেন। এই পরিচয় দিয়ে তার প্রতিভাকে খাটো করবোনা। যারা তাকে চেনেন তারা নিশ্চয়ই জানেন, গুলতেকিন মানে গুলতেকিনই। তার কোন বিকল্প নেই।
হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম । তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক বলে গণ্য করা হয়। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। অন্য দিকে তিনি আধুনিক বাংলা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তিন শতাধিক।
—দৈনিক দেশতথ্যের জন্য পাঠিয়েছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক ও আইনজীবি আলী আসগর স্বপন। লেখাটি সম্পাদনা করেছে দৈনিক দেশতথ্যের ঢাকা ডেস্ক।
এবি/দৈনিক দেশতথ্য/০২ আগস্ট/২০২১