মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা:
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বংশাই নদীতে ব্যাপক ভাঙ্গনে মুহর্তের মধ্যেই ফতেপুর বাজারের ৩০-৩৫টি দোকান এবং আশপাশের শতাধিক ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।
স্থায়ী বাঁধ নির্মান না হওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে বিভিন্ন স্থাপনা।
ইতিমধ্যে মসজিদ মন্দির, বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট এবং ফসলি জমিসহ গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। খেলা আকাশের নিচে পলিথিন দিয়ে তাবু টানিয়ে বহু পরিবার পরিজন নিয়ে আশ্রয় খোঁজার চেষ্টা করছেন।
ফতেপুর বাজার সংলগ্ন এলজিইডির রাস্তা সস্পুর্ন ভাবে ভেঙ্গে নদীতে বিলিন হওয়ায় মির্জাপুর উপজেলার সঙ্গে বাসাইল ও সখীপুর উপজেলার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে। ২০-২৫ কি. মি. ঘুরে তাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে।
প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ্য পরিবারের দুর্ভোগের শেষ নেই বলে অভিযোগ করেছেন। আজ মঙ্গলবার (৪ জুলাই) দুপুরে ফতেপুর বাজার এবং ফতেপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিকত্রই দেখা গেছে।
ফতেপুর ফতেপুর বাজারের সংলগ্ন বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী শরিফ উদ্দিন (৫০), হাসান মিয়া (৬০), মেহেরাব বেগম (৫৫) ও সখিনা বেগম (৫০) সহ ৩০-৪০ জন অসহায় নারী পুরুষ জানান, বংশাই নদীর ফতেপুর, থলপাড়া, হিলড়া আদাবাড়ি, পারদিঘী, চাকলেশ^র, বৈলানপুর, ভাতগ্রাম ইউনিয়নের গোড়াইল, গাড়াইলসহ ১০-১২ টি গ্রামে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গনের ফলে ফতেপুর বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মির্জাপুর-বাসাইল-সখীপুর রাস্তা, ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট হুমকির মুখে। গতকাল সোমবার (৩ জুলাই) ও আজ মঙ্গলবার (৪ জুলাই) ফতেপুর বাজারের ৩০-৩৫ টি দোকান পাট (ব্যবসা প্রতিষ্ঠান) এবং আশপাশের অর্ধশত ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। কয়েক শতাধিক অসহায় পরিবার খেলা আকাশের নিচে তাবু টানিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছে। টানা বৃষ্টি এবং রোদে তাদের কষ্ট ও দুর্ভোগের শেষ নেই। উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে তারা কোন সাহার্য্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন। এছাড়া এলাকার একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, নদীতে অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলনের ফলে তাদের সর্বনাশ ঢেকে এনেছে। ক্ষতিগ্রস্থ্য পরিবার ও এলাকাবাসির দাবী আমরা সাহায্য চাইনা, আমরা চাই স্থায়ী বাঁধ।
ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রউফ বলেন, নদী ভাঙ্গনের ফলে হাট ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, মসজিদ. হাট ফতেপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদ, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র, ইউনিয়ন ভুমি অফিস, মির্জাপুর-বাসাইল-সখীপুর রাস্তা, ফতেপুর-মহেড়া-মির্জাপুর রাস্তাসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান এবং হাট ফতেপুর হাট ও বাজার এখন বিলিন হওয়ার পথে। নদী ভাঙ্গনে ফতেপুর, থলপাড়া, বৈল্যানপুর, হিলড়া আদাবাড়ি বাজার, গোড়াইল, গাড়াইল, পুষ্টকামুরী পুর্বপাড়া, বাওয়ার কুমারজানি, ত্রিমোহন, বান্দরমারা, যুগিরকোপা, রশিদ দেওহাটা চাকলেশ^রসহ বিভিন্ন গ্রামের রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ভাঙ্গনের খবর পেয়ে খান আহমেদ শুভ এমপি এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিলা বিনতে মতিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ভাঙ্গন প্রতিরোধের জন্য তাদের সহাযোগিতায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। অপর দিকে লৌহজং নদীতে পানি বৃদ্ধি ও ভাঙ্গনের ফলে মাঝালিয়া, গুনটিয়া, চুকুরিয়া, বরাটি, পুষ্টকামুরী, দেওহাটা, কোর্ট বহুরিয়া, বহুরিয়া, কামারপাড়া, নাগরপাড়াসহ ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তা-ঘাট, হাট বাজারসহ ফসলি জমি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিলা বিনতে মতিন বলেন, পানি বৃদ্ধির ফলে বংশাই ও লৌহজং নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গনের খবর পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ্য এলাকা পরিদতর্শন করেছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে ভাঙ্গন প্রতিরোধের জন্য জিও ব্যাগ ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন অধিদপ্তরকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। বরাদ্ধ পেলে ক্ষতিগ্রস্থ্যদের সার্বিক সহযোগিতাসহ ক্ষতিপুরন দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাত হোসেন জানিয়েছেন, এমপি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়ের সহযোগিতায় নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধের জন্য জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে। বেশী ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মানের জন্য প্রকল্প তৈরী করে মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। অর্থ বরাদ্ধ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দৈনিক দেশতথ্য// এইচ//

Discussion about this post