জামালপুরের চাঞ্চল্যকর মা জয়ফল বেগম (৫৫) ও মেয়ে স্বপ্না চৌধুরীকে (২৫) জবাই করে হত্যার ঘটনায় রোববার (২ ডিসেম্বর) বিকালে মেলান্দহ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মেলান্দহ থানার ওসি এম এম মঈনুল ইসলাম জানান, নিহত জয়ফল বেগমের ভাই মানিক মিয়া বাদী হয়ে জয়ফল বেগমের ছেলে জহুরুল চৌধুরী ও পুত্র বধু জেসমিন আক্তারসহ অজ্ঞাত আরো বেশ কয়েকজনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আটককৃত জয়ফল বেগমের ছেলে জহুরুল চৌধুরী ও তার স্ত্রী জেসমিন আক্তারকে মামলার আসামী হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
রোববার দুপুরে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নিহত জয়ফল বেগম ও তার মেয়ে স্বপ্না চৌধুরীর মৃতদেহের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়না তদন্তের পর নিহত মা মেয়ের মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই খায়রুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, নিহত জয়ফল বেগমের ছেলে জহুরুল চৌধুরী ও তার স্ত্রী জেসমিন আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় আনা হয়েছিল। রাতভর জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপুর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত বলা যাচ্ছেনা। আমরা আশাবাদী খুব শিগ্রই জোড়া খুনের কিলিং মিশনে অংশগ্রহনকারী হত্যাকারী অন্য আসামীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
মামলার বাদী নিহত জয়ফল বেগমের ভাই মানিক মিয়া জানান, আমার বোনের স্বামী আকমল চৌধুরীর মৃত্যুর পর তিন ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে জয়ফুল একই বাড়িতে বসবাস করতেন। তার তিন ছেলে জহুরুল চৌধুরী,মিলন চৌধুরী ও মিস্টার চৌধুরী ওমানে যায় জিবিকার তাগিদে। স্বপ্না আক্তার সাত বছর আগে স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর থেকে মার সঙ্গে থাকতেন। ছেলেরা বিদেশে থাকাবস্থায় আমার বোন জয়ফলের সাথে তার ছেলে জহুরুলের স্ত্রী জেসমিনের সাথে ঝগড়া ফ্যাসাদ লেগেই থাকতো। সম্প্রতি জহুরুল ওমান থেকে দেশে ফিরে এসেছে। ঘটনার দুই দিন আগেও আমার বোনের সাথে তার ছেলের বউয়ের ঝগড়া হয়েছে বলে পাশের বাড়ির লোকজন জানিয়েছে।
তিনি দাবী করেন পারিবারিক কলহে আমার বোন ও ভাগিনীকে বটি দা দিয়ে শরিরের বিভিন্নস্থানে কোপায় এবং মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য জবাই করে নি:শৃংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমার বোন জয়ফল ও ভাগিনী স্বপ্নার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি।
জামালপুরের পুলিশ সুপার মো. নাছির উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, গোবিন্দপুর দারোয়ানপাড়ার একটি ঘরের দুটি আলাদা কক্ষ থেকে মা-মেয়ের গলা কাটা মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
“পারিবারিক বিরোধে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, এই জোড়া খুনের হত্যার রহস্য উদঘাটনে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে। হত্যর প্রকৃত কারন ও হত্যাকারীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, জামালপুরের মেলান্দহ পৌর এলাকার গোবিন্দপুরের গাড়িয়াল পাড়া গ্রামে শনিবার (১ ডিসেম্বর) রাত ৮টায় নিজ বাড়ির শয়ন কক্ষে জয়ফল বেগম পাশের কক্ষে তার মেয়ে স্বপ্না চৌধুরীর গলাকাটা মৃতদেহ উদ্ধার করে মেলান্দহ থানা পুলিশ। রাতেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত জয়ফল বেগমের ছেলে জহুরুল চৌধুরী ও পুত্র বধু জেসমিন আক্তারকে আটক করে।

Discussion about this post