কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীর তীব্র ভাঙ্গনে মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলার নদী তীরবর্তী ৩টি ইউনিয়নের প্রায় ৯ কি:মি: দীর্ঘ ও দেড় কি:মি: আয়তনে নদীভাঙ্গনে দিশেহারা এলাকাবাসী। ইতোমধ্যে আক্রান্ত ওই তিনটি ইউনিয়নের ৪টি মৌজা সম্পূর্ন এবং আরও তিনটি মৌজার আংশিকসহ প্রায় ১৫ হাজার একর ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, সরকারী বেসরকারী স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।
এছাড়াও বিলীনের অপেক্ষায় দেশের উত্তরা লের সাথে দক্ষিণ পশ্চিমা লের একমাত্র যোগাযোগ মহাসড়কটি ছাড়াও চরম ঝুকিতে পড়েছে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প গঙ্গা কপোতাক্ষ ও ভেড়ামাড়া ৪১০ মে:ও: কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি। জেলার প্রনিনিধিত্বশীল মহলের অভিযোগ সময় মতো প্রস্তাবিত উন্নয়ন প্রকল্প (ডিপিপি) বাস্তবায়ন না হওয়ায় বছর জুড়ে বিরতিহীন ভাঙ্গনে ক্ষতির পরিমান বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সরকারী ব্যয়ের বোঝা। এই তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেই সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছেন ডিপিপি অনুমোদন পেলেই ভাঙ্গনরোধে স্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে।
মিরপুর উপজেলার বহলবাড়িয়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কেরামত মন্ডল বলেন, ‘জাগা জমিন, ঘর বাড়ি, গরু বাছুর সব এখন পদ্মার প্যাটে। ৩ বছর আগেত্তি গাং য্যাকন ভাঙ্গা শুরু করে, তেখন তিন কতজনকে বুল্লাম, কাকুতি মিনতি কল্লাম, কেউ শুনলো না, তারা কুনো গুরুত্তই দিলি না’ শুরুত্তিন যদি ইরা কোন ব্যাবস্তা লিতি তালি আইজ এই অবস্থা হইতি না। আমার মতো ম্যালা লোক সবকিছু হারাইচে’। যে কাম অল্পত্তিন হতি, সেই কাম এখন অনেক বাইড়ি গেছে’।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী অসীম কুমার সরকার বলেন, ‘তালবাড়িয়া পদ্মা তীরবর্তী ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় জরুরী ভিত্তিতে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে তাৎক্ষনিক ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু ভাঙ্গন ঠেকাতে বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলেও কোন কাজে আসছে না ভাঙ্গন রোধে। তাই দ্রুত প্রস্তাবিত উন্নয়ন প্রকল্প (ডিপিপি)র অনুমোদনসহ তার বাস্তবায়নই হবে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান।
ভেড়ামারা উপজেলা চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান মিঠুর অভিযোগ, ‘গত তিন বছর ধরে দুই উপজেলার প্রায় ৫লক্ষাধিক মানুষের জীবন জীবিকা ও গোটা জনপদকে রক্ষায় এখনই দরকার স্থায়ী সমাধান। নচেৎ একদিনে জনজীবনের জানমালের অপুরনীয় ক্ষতির সাথে পাল্লা দিয়ে সরকারী ব্যয়ের বোঝা হবে আকাশ ছোয়া।
তালবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান মন্ডল জানান, ‘আমার এই ইউনিয়নের ৬টি গ্রাম ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন এখানে হাজার কোটি টাকা ব্যয় করলেও তো ওইসব ঘরবাড়ি, জায়গা জমি, রাস্তাঘাট হাট বাজার কোন কিছুই ফিরিয়ে আনা যাবে না। সেই কারণে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার প্রার্থনা জরুরী এই ভাঙ্গন বন্ধে স্থায়ী বাধ নির্মান করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই।
কুষ্টিয়া নাগরিক কমিটির সভাপতি ও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডা: এসএম মুসতানজিদ বলেন, ‘আমরা জানি প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর, আজকে কুষ্টিয়াতে নদী ভাঙ্গনের যে সংকট দেখা দিয়েছে, এই সংকট শুরুর দিকে যে আয়তনকে আক্রান্ত করেছিলো তখনই যদি প্রকল্প গ্রহন ও বাস্তবায়ন সম্ভব হতো তাহলে ওই দিনে শুরু হওয়া ছোট্ট সংকটটি আজকে এতো বৃহৎ অ লজুড়ে ধ্বংস হতো না। আমরা দেখেছি গত দুই বছর আগে এখানে যে ডিপিপি চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় প্রেরণ করা হয়েছিলো তার প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৯শ ৮৯ কোটি টাকা যা অনুমোদন ও বাস্তবায়ন না হওয়ায় চলতি অর্থ বছরে ওই একই প্রকল্পের প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮শ ১৬ কোটি ৪২লক্ষ টাকা যা দ্বিগুন ছাড়িয়েছে। এবারও যদি প্রস্তাবিত এই উন্নয়ন প্রকল্প (ডিপিপি) অনুমোদনসহ বাস্তবায়ন না হয়ে ফাইল বন্ধি থেকে যায়; তাহলে খুব শীঘ্রই সরকারী ব্যয় ক্রমবৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে মহাসড়ক, সেচ প্রকল্প, ভেড়ামারা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও লালন শাহ সেতুসহ সরকারের আরও কয়েক হাজার কোটি টাকার অবকাঠামোসহ স্থাপনা বিলীন হয়ে যাবে পদ্মার গর্ভে।
বাপাউবো কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান জানান, ‘পদ্মা নদীর এবারের ভাঙ্গন এতই তীব্রতা পেয়েছে, যেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড তাৎক্ষনিক জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু কার্যত: ভাঙ্গনের তীব্রতা ঠেকাতে স্থায়ী প্রতিরক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন ছাড়া কোন বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে প্রেরিত ডিপিপি প্লানিং কমিশনে যাচায় বাছায় শেষে একনেক সভায় অনুমোদন পেলেই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ২৬ জুলাই ২০২৩