কিছু কিছু ঋণ যা কোনদিন শোধ করা যায় না ৷
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশি বৈমানিক সাইফুল আজম। তৎকালীন পাকিস্তান বিমান বাহিনীর এই সদস্য যোগ দিয়েছিলেন ইরাক বাহিনীর হয়ে। মাত্র ছয় দিন স্থায়ী হয়েছিল ওই যুদ্ধ, তবে অসম সাহস আর অনন্য রণনৈপুণ্যের তিনি সর্বোচ্চ চারটি ইসরায়েলি বিমান ভূপাতিত করেছেন। মাত্র ছয় দিন স্থায়ী হয়েছিল ওই যুদ্ধ, তবে অসম সাহস আর অনন্য রণনৈপুণ্যের জন্য সাইফুল আজমকে ফিলিস্তিনিদের দুঃসময়ে আজ হয়ত খুঁজছে ৷
১৯৬৭ সালের যুদ্ধে পশ্চিম ইরাকে অবস্থান নিয়ে ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলেন তিনি। যুদ্ধ শুরু হওয়ার মাত্র ৫ দিনের মাথায় গাজা এবং সিনাইয়ের কর্তৃত্ব নিয়েছিল ইসরায়েল। জুনের ৫ তারিখে সিরীয় বিমানবাহিনীর দুই-তৃতীয়াংশ শক্তি ধ্বংস করে দেয় ইসরায়েলি বিমান সেনারা।
কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই ইসরায়েল মিশরের কাছ থেকে গাজা ও সিনাই উপদ্বীপ, জর্ডানের কাছ থেকে পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেম এবং সিরিয়ার গোলান মালভূমিও। এ সময় ইসরায়েলিদের যমদূত হয়ে জর্ডানে যান সাইফুল আজম।
৬ জুন আকাশ থেকে প্রচণ্ড আক্রমণে মিসরীয় বিমানবাহিনীর যুদ্ধ-সরঞ্জাম গুঁড়িয়ে দেয় ইসরায়েলি বাহিনী। একই দিন বেলা ১২টা ৪৮ মিনিটে চারটি ইসরায়েলি সুপারসনিক ‘ডেসল্ট সুপার মিস্টেরে’ জঙ্গি বিমান ধেয়ে আসে জর্ডানের মাফরাক বিমান ঘাঁটির দিকে। এবার তাদের লক্ষ্য জর্ডানের ছোট্ট বিমানবাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া।সে সময় ইসরায়েলি সুপারসনিকের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মতো সমকক্ষ বিমান আরবদের হাতে ছিল না। তবু ইসরায়েলি হামলা ঠেকাতে মাফরাক বিমান ঘাঁটি থেকে ‘হকার হান্টার’ জঙ্গি বিমান নিয়ে উড়াল দেন অসম সাহসী সাইফুল আজম।
আর সেই , হকার হান্টার দিয়েই ক্ষিপ্রগতির দুটি ইসরায়েলি সুপারসনিক ঘায়েল করে ফেললেন সাইফুল আজম। তার অব্যর্থ আঘাতে ভূপাতিত হয় একটি ইসরায়েলি ‘সুপার মিস্টেরে’। আরেক আঘাতে প্রায় অকেজো হয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে কোনো মতে পালিয়ে ইসরায়েলি সীমানায় গিয়ে আছড়ে পড়ে আরেকটি বিমান।
সেদিন অকুতোভয় বৈমানিক সাইফুল আজমের অকল্পনীয় বীরত্বের কারণে ইসরায়েলের পুরো পরিকল্পনাই ভেস্তে যায়।এমন অসাধারণ বীরত্বের জন্য পুরস্কারস্বরূপ সাইফুল আজমকে বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত করে ইরাক ও জর্ডান সরকার।সাইফুল আজমের কাছে ইসরায়েলি বৈমানিকদের ধরাশায়ী হওয়ার ঘটনা এখানেই শেষ নয়। পরদিনই তার কৃতিত্বে ইরাকি বৈমানিক দলের কাছে চরমভাবে পরাজিত হয় ইসরায়েলিরা।
ফিলিস্তিনি অধ্যাপক নাজি শওকরি তার টুইটারে লেখেন, ‘সাইফুল আজম ফিলিস্তিনকে ভালোবাসতেন এবং জেরুজালেমের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন।’
ফিলিস্তিনের প্রখ্যাত সাংবাদিক তামের আল-মিশালও সাইফুল আজমের প্রশংসা করেন এবং তাকে ‘দ্য ঈগল অব দ্য এয়ার’ বলে সম্বোধন করেন।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//