মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা :
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বংশাই-লৌহজং নদীর আশপাশে ভ্যেকু দিয়ে বাংলা ড্রেজার বসিয়ে একটি চক্র মাটি বালি উত্তোলন করায় হুমকির মুখে পড়েছে বিভিন্ন স্থাপনা।
পাশাপাশি চলছে পাঁচটি ইউনিয়নে পাহাড় কাটা।
ভুক্তভোগি এলাকাবাসির অভিযোগ, স্থানীয় প্রভাবশালী মহল কখনো রাজিৈনতক দলের প্রভাবশালী নেতা কখনো প্রশাসনের কর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধ এই মাটির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘ দিন ধরে। প্রশাসেনর কাছে এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েও কোন বিচার পাওয়া যায় না। অভিযোগের পর অসহায়দের বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধুমকি এবং মামলার ভয় দেখানো হয় বলে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আজ শুক্রবার উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে ভুক্তভোগি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফতেপুর ইউনিয়নের অন্তত ১৫ জন নারী পুরুষ অভিযোগ করেন, বংশাই নদীর ফতেপুর, থলপাড়া, হিলড়া আদাবাড়ি, পারদিঘী, চাকলেশ্বর, বৈলানপুর, ভাতগ্রাম ইউনিয়নের গোড়াইল, গাড়াইলসহ ১০-১২ টি স্পটে বাংলা ড্রেজার বসিয়ে বালি উত্তোলন করে আসছে। এ ছাড়া এই চক্রটি বংশাই নদীতে বাংলা ড্রেজারে পাশাপাশি বিভিন্ন স্পটে ভ্যেকু বসিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে। ভুক্তভোগিরা অভিযোগ স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও এর সহযোগি সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতা এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তাদের সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতা। চক্রটি সিন্ডিকেট করে অবৈধ এই বালি উত্তোলন করে রাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলনরে ফলে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট হুমকির মুখে।
ফতেপুর ইউনিয়নের হিলড়া আদাবাড়ি মোকছেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইব্রাহীম মিয়াসহ একাধিক অভিযোগ করেন, এই ইউনিয়নে প্রতি বছরই বংশাই নদীতে ভাঙ্গন শুরু হয়। অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলনের পলে তার বিদ্যালয় ও আশপাশের বাজার এবং কয়েকটি রাস্তা হুমকির মুখে। নদী ভাঙ্গনে ফতেপুর বাজার সংলগ্ন পাকা রাস্তা বিলিন হয়ে মির্জাপুর উপজেলার সঙ্গে বাসাইল উপজেলার সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। হাট ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, মসজিদ. হাট ফতেপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদ, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র, ইউনিয়ন ভুমি অফিস, মির্জাপুর-বাসাইল রাস্তা, ফতেপুর-মহেড়া-মির্জাপুর রাস্তাসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান এবং হাট ফতেপুর হাট ও বাজার এখন হুমকির মুখে।
একই কথা বললেন ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফরিদ হোসেন। তিনি অভিযোগ করেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৫-১৬শ শিক্ষার্থী চরম বিপাকে পরেছেন। নদী ভাঙ্গন থেকে থেকে রক্ষার জন্য শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসি ইতিপুর্বে মানব বন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসুচী পালন করেছে। বাংলা ড্রেজার বসিয়ে বালি উত্তোলনের ফলে বংশাই নদীর ভাঙ্গনের ফলে ফতেপুর, থলপাড়া, বৈল্যানপুর, হিলড়া আদাবাড়ি বাজার, গোড়াইল, গাড়াইল, পুষ্টকামুরী পুর্বপাড়া, বাওয়ার কুমারজানি, ত্রিমোহন, বান্দরমারা, যুগিরকোপা, রশিদ দেওহাটা চাকলেশ^রসহ বিভিন্ন গ্রামের রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
অফর দিকে লৌহজং নদীর মাঝালিয়া, গুনটিয়া, চুকুরিয়া, বরাটি, পুষ্টকামুরী, দেওহাটা, কোর্ট বহুরিয়া, বহুরিয়া, কামারপাড়া, নাগরপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন এবং ভ্যেকু বসিয়ে মাটি নেওয়ার ফলে নদী ভাঙ্গনে বহু পরিবার দিশেহারা হয়ে পরেছেন। ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তা-ঘাট, হাট বাজারসহ ফসলি জমি। এছাড়া বংশাই নদীর থলপাড়া ব্রিজ, ত্রিমোহন এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা একাব্বর হোসেন ব্রিজ, কোদালিয়া এলাকায় লতিফপুর ব্রিজ, হাটুভাঙ্গা ব্রিজ, লৌহজং নদীর উপর নির্মিত গুনটিয়া ব্রিজ, বরাটি এলাকায় বাবু দুঃখীরাম রাজবংশী ব্রিজ, পুষ্টকামুরী ব্রিজ, পাহাড়পুর ব্রিজ, বহুরিয়া এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম নুরু ব্রিজ এবং ওয়ার্শি ব্রিজ হুমকির মুখে বলে ভুক্তভোগি এলাকাবাসি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাত হোসেন জানিয়েছেন, মির্জাপুরে বেশ কয়েকটি এলাকায় নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধের জন্য ইতিপুর্বে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। বেশি ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মানের জন্য প্রকল্প তৈরী করে মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। অর্থ বরাদ্ধ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া রাস্তাঘাট ও ব্রিজকালভার্টের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে এলজিইডি।
এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিলা বিনতে মতিন বলেন, যারা নদীতে অবৈধ ভাবে বাংলা ড্রেজার বসিয়ে বালি উত্তোলন এবং ভ্যেকু দিয়ে মাটি কেটে নিচ্ছে তাদের কোন অবস্থায় ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। অভৈধ মাটি কাটা এবং নদীতে বালি উত্তোলন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলমান থাকবে।
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//

Discussion about this post