বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বরগুনার ৩১ টি মহিপুরের ১০টি ট্রলার নিখোঁজ হয়েছিল। এর মধ্যে বরগুনার ১৯টি ট্রলার উদ্ধার হয়েছে। সাগরে ডুবে গেছে ৮টি। নিখোঁজ রয়েছে ৪টি ট্রলার ও দুই শতাধিক জেলে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বরগুনার জেলার মোট ৩১ টি এবং মহিপুরের ১০টি ট্রলার নিখোঁজ হয়েছিল। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এর মধ্যে বরগুনা জেলার ১৯টি ট্রলার উদ্ধার হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে ডুবে গেছে ৮টি ট্রলার এখনো নিখোঁজ রয়েছে আরও ৪টি ট্রলার।
উদ্ধার হওয়া ১৯টি ট্রলারের মধ্য থেকে মোট ২শত জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত জেলেদের অধিকাংশই নিরাপদ আশ্রয়ে পৌছতে পেরেছে। ১৭ জেলে ভারতের দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদিপ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ২৩ জেলে রয়েছেন বুদ্ধপুর এলাকায় স্থানীয়দের আশ্রয় শিবিরে। তাদের মধ্যে অধিকাংশ জেলে বরগুনা জেলার। এছাড়া নিখোঁজ চারটি ট্রলারে স্বজনদের দিন কাটছে উদ্বেগ উৎকন্ঠায়।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবি ট্রলার মালিক সমিতির তথ্য মতে,বরগুনায় এখনো নিখোঁজ রয়েছে ৪টি ট্রলার এবং মোট ৮ টি ট্রলার ডুবে গেছে।
নিখোঁজ রয়েছে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ছগির আলমের এফবি সিরাজুল হক, চরদুয়ানী ইউনিয়নের ইউনুচ মিয়ার এফবি ভাই ভাই, বরগুনা সদর উপজেলার নলী এলাকার জাহাঙ্গীর মোল্লার এফবি ভাই ভাই, ও শানু মিয়ার একটি ট্রলার এখনো ফিরে আসেনি।
সাগরে ডুবে গেছে পাথরঘাটা উপজেলার নুর আলমের মালিকানাধীন এফবি মনোয়ারা, সুজন হাওলাদারের এফবি হওলাদার, ফারুক খানের এফবি মা বাবার দোয়া, শানু মুসুল্লীর এফবি সৈকত, বাদশা মিয়ার এফবি ভাই ভাই, বরগুনা সদর উপজেলার ছত্তার মাস্টারের এফবি আল মাহাদী, আবুল কালামের এফবি কয়া, হানিফ মিয়ার এফবি জুনায়েদ ট্রলার।
নিখোঁজ জেলে জলিল মাঝির ভাই হারুন জানান, মোর ভাই অনেক বচ্ছর ধরেই গাঙ্গে ইলিশ মাছ ধরে। কয়েকদিন আগে গাঙ্গে একটি ট্রলার লইয়া মাছ ধরতে গেছে। হেরপর থেইক্কা হের আর কোন খোঁজ পাই নাই মোরা। মোবাইলেও তারে পাওয়া যায় নাই। মোরা ধারনা করছি গাঙ্গে মোর ভাইর ট্রলার ডুইব্বা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে মোগো অনুরোধ যাতে ভাইরে খুজে পাইতে সাহায্য করেন।
বরগুনা সদর উপজেলার নলী এলাকার নিখোঁজ ট্রলার এফবি ভাই ভাই এর মালিক জাহাঙ্গীর মোল্লা বলেন, আমার ট্রলারটি গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সাগরের উদ্যেশ্যে মাছ শিকারের জন্য ঘাট থেকে ছেড়ে যায়। এর পরে বৃহস্পতিবার সাগরে নিম্নচাপ শুরু হলে সেই থেকে আজ পর্যন্ত ট্রলার মাঝি বা জেলেদের সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারিনাই। যাতে আমার জেলেদের সন্ধান পাই সেই বিষয়ে সরকারের সার্বিক সহযোগীতা কামনা করছি।
কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কেএম সাফিউল কিঞ্জল জানান, নিন্মচাপের পর থেকেই সাগরে প্রতিটি পয়েন্টে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এজন্য কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে কয়েকটি টিম গভীর সমুদ্রে জেলেদের উদ্ধার অভিযানে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী জোনের কোস্টগার্ডদের সাথে যোগাযোগ রেখে যাচ্ছি যাতে এই জোনের জেলেদের কোন দেখা পেলে সাথে সাথে আমাদেরকে জানায়।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুম মিয়া জানান, নিম্নচাপের কারনে সাগর উত্তাল হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার থেকে এ পর্যন্ত ৮ টি ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে এবং নিখোঁজ রয়েছে ৪ টি ট্রলারসহ ২ শতাধিক জেলে। ঘটনার শুরু থেকেই কোস্টগার্ডসহ সরকারী সপ্তর সমূহকে খোঁজ খবর জানাচ্ছি।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবি ট্রলার মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জেলেদের সন্ধানে বেশ কয়েকটি ট্রলার উদ্ধার অভিযানে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এরকম অবস্তা আর একবার ২০০৫ সালে হয়েছিল এরপরে আর এমন বিপদের সম্মুখিন কোন জেলে হয়নি। প্রাথমিক ভাবে ধারনা করছি, যাদের খোঁজ পাচ্ছি না তাদের মধ্যে অধিকাংশ জেলে বেঁচে নেই। তবে তাদের উদ্ধারের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//আগস্ট ২১.০৮.২০২২//

Discussion about this post