মো.আলাউদ্দীন, হাটহাজারীঃ এশিয়ার অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়ার মৌসুম চললেও পরিবেশের বৈরীভাব দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টি আর প্রচন্ড গরমের কারনে মা মাছ ডিম ছাড়া নিয়ে শংকায় রয়েছে।
বাংলা বছরের চৈত্র ও বৈশাখ মাসে প্রচন্ড বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের ফলে হালদা নদীতে ঢলের সৃষ্টি হয়ে থাকে। কিছুদিন পূর্বে বিশেষ করে চৈত্র মাসের দিকে কয়েক দিন বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলেও পরবর্তীতে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে প্রচন্ড গরম শুরু হয়। বাংলা নববর্ষের কয়েকদিন আগে থেকে এই পর্যন্ত বর্ষণের কোন লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছে না। তীব্র গরমের কারনে মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণী জগৎ হাঁসফাঁস করছে। বজ্রসহ প্রচন্ড বৃষ্টিপাত হলে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। সেই হিসেবে হালদা নদীর সাথে সংযুক্ত কর্ণফুলী সাংগু, মাথা মুহুরী ও সংযুক্ত বিভিন্ন শাখা খাল ও ছড়া থেকে ইতিমধ্যে মা মাছ নদীতে ডিম ছাড়ার জন্য আসতে শুরু করেছে। কিন্তু প্রকৃতির অনুকূল পরিবেশ না পেয়ে মাছগুলো নদীতে ছোটাছুটি করছে। ইতিমধ্যে হালদা নদীতে মা মাছের আনাগোনা দেখে ডিম আহরণকারীদের মধ্যে আসার সঞ্চার হয়েছে। কিন্তু বজ্র বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের অভাবে মাছগুলো নদীতে ডিম ছাড়ার কোনো সুযোগ পাচ্ছে না।
বাংলা বছরের এই সময়ে ডিম আহরণের জন্য ডিম সংগ্রহ কারীরা জাল নৌকা ও ডিম আহরণের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি নিয়ে নদীর পাশে অপেক্ষায় থাকলেও অনুকূল পরিবেশ তথা ডিম ছাড়ার কোনো লক্ষণ না দেখে ডিম সংগ্রহকারীদের মধ্যে এক প্রকার হতাশা কাজ করছে।
এদিকে হালদা নদীর মা মাছ রক্ষার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নদীতে রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন এবং নৌ পুলিশ সার্বক্ষণিক কাজ করছে যাতে কেউ ডিম ছাড়তে আসা মাছগুলো ধরতে না পারে। জেলা উপজেলা প্রশাসন খুবই আশাবাদী বৈশাখ মাসের যেকোনো সময় প্রবল বর্ষণসহ বজ্রপাত হতে পারে সেই সময় পাহাড়ি ঢলের প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে মা মাছের ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে।
হাটহাজারী রাউজান ও জেলা প্রশাসন ডিম থেকে রেনু ফুটানোর হ্যাচারিগুলো ইতিমধ্যে উপযুক্ত ভাবে তৈরি করে বিদ্যুৎ সংযোগ সহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে রেখেছে যাতে মা মাছ নদীতে ডিম দেওয়ার সাথে সাথে ডিম সংগ্রহকারীরা সরকারি হ্যাচারিতে নিয়ে দ্রুত সংগ্রহ করা ডিম থেকে রেনু ফুটাতে পারে।
এদিকে রেনু থেকে পোনা উৎপাদনের জন্য পুকুর/কুয়াগুলো উপযুক্তভাবে তৈরি করে রাখা হয়েছে। অমাবস্যা তিথিতে যদি বজ্রসহ প্রবল বর্ষণ হয় তাহলে মা মাছ নদীতে ডিম ছাড়তে পারে বলে ডিম আহরণকারীরা মন্তব্য করছিলেন । এবং অমাবস্যার তিথিতে যদি বজ্রসহ প্রবল বর্ষণ না হয় তাহলে আরো একপক্ষ কাল অর্থাৎ সামনের পূর্ণিমা তিথির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। পূর্ণিমা তিথির পূর্বে যদি বজ্রসহ প্রবল বর্ষণ হয় তাহলে নদীতে ঢলের প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে। এই সময় মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে আশা করছেন ডিম আহানকারীরা। সামনে পূর্ণিমার তিথিতে যদি পরিবেশ অনুকূল না হয় তাহলে পরবর্তী সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে বলেও জানান তারা।
প্রশাসনের লাগাতার অভিযান মা মাছ নিধন ও বাল উত্তোলন বন্ধ থাকলেও নদীর দূষণের কারনে ডিম ছাড়ার বিষয়ে প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে। বিগত বছর ডিম ছাড়া আর পূর্বে নদীতে বেশ কয়েকটি বড় বড় মাছ মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে সেই সাথে উদ্ধার করা হয়েছে মৃত ডলফিন । প্রচন্ড গরমের কারণে নদীতে পরিবেশের বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলেও অনেকেই মন্তব্য করেছেন।
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//

Discussion about this post