যশোর প্রতিনিধি: সিনেমা প্রেমীদের হৃদয়ের স্পন্দন ছিল এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম সিনেমা হল হিসাবে খ্যাত মণিহার । প্রতিদিনের উপচে পড়া ভিড় এখন আর নেই , নেই সেই কোলাহল।খরচ বাঁচাতে ৪২ বছরের সিনেমা হলটি ভেঙে আবাসিক হোটেল, ভবন, মার্কেট গড়তে যাচ্ছে হল কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে , খুলনার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মরহুম সিরাজুল ইসলাম ১৯৮৩ সালের ৮ ডিসেম্বর যশোরের সিনেমা ইতিহাসে প্রথমবার পথচলা শুরু করা মণিহার হলের মোট আসন সংখ্যা ১,৪০০। কিংবদন্তি চিত্রশিল্পী এসএম সুলতান এর তত্ত্বাবধানে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে নির্মাণ ও সাজসজ্জা সম্পন্ন হয়েছিল। আজ সেই প্রাচীন বিশাল হলের শূন্য আসনগুলো যেন অতীতের গৌরব ও মধুর স্মৃতিকে চুপচাপ সংরক্ষণ করছে।
মণিহারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মিঠু বলেন, আগে প্রতি সপ্তাহে দুটি নতুন সিনেমা পেতাম, এখন মাসেও একটি পাই না। আর্ট ফিল্ম দিয়ে হলে দর্শক আনা যায় না। লোকসানে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলার চেয়ে হল বন্ধ করাই ভালো। তবে স্থাপনাটি ভেঙে ফেলার কোনো পরিকল্পনা নেই। প্রয়োজনে ভবিষ্যতে মণিহার সিনেপ্লেক্স হিসেবে চালু রাখা হবে।
লোকসানের পাল্লা ভারী হতে হতে এখন হলের খরচ চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। হলটি ভেঙে মার্কেট করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের হলের সিট সংখ্যা ১৪৩০টি। স্টাফ আছে ২৫ জন। এছাড়া কাস্টমস ভ্যাট, ট্যাক্স, বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য সব খরচ মিলে আরও মাসে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লাগে। সবকিছু মিলে প্রতি মাসে মণিহার সিনেমা হলের গড় খরচ ৭-৮ লাখ টাকা। কিন্তু গত প্রায় একবছর ধরে গড়ে প্রতি মাসে লাখ টাকার বেশি আয় হচ্ছে না। দর্শক নেই। সিনেমা হলে বসে এখন কেউ আর সিনেমা দেখতে আসে না। সবার হাতে হাতে এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন। তারা ইচ্ছামতো নাটক, সিনেমা দেখতে পারে। ফলে কেউ এখন আর হলে আসতে চাচ্ছে না।
তিনি বলেন, এ কারণে মালিক কর্তৃপক্ষ মণিহার সিনেমা হলটি ভেঙে মার্কেট ও আবাসিক হোটেল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। ইতিমধ্যে আর্কিটেকচারকে ডিজাইন করতে দেয়া হয়েছে, এরপর সেটা পাস করে পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ শুরু হবে। এটাও করতে সময় লাগবে। তার আগপর্যন্ত হয়তো আমরা এভাবেই লোকসান দিয়ে হলেও হলটি চালাবো। কবে নাগাদ হলটি ভেঙে ফেলা হবে, সেটি এখন নিশ্চিত করতে না পারলেও সিইও জানালেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ চলছে।
উল্লেখ্য, এক সময় এই মণিহার সিনেমা হলে সিনেমা দেখার জন্য জাপান, কোরিয়া, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, ইংল্যান্ড থেকে চলচ্চিত্রপ্রেমীরা ছুটে আসতেন যশোরে। যা আজ সবই স্মৃতি।