Print Date & Time : 28 July 2025 Monday 3:37 pm

বয়স ৩১, তবুও কাটছে না সমীরের শিশুকাল!

শাহীন আহমেদ, কুড়িগ্রাম:
কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার তিলাই ইউনিয়নের আজিম উদ্দিন ও আছিয়া দম্পত্তির ছেলে মোঃ আছর উদ্দিন। জাতীয় পরিচয় পত্রে নাম আছর উদ্দিন থাকলেও গ্রামের মানুষ শিশু সমীর বলে চেনেন।বর্তমানে সমীরের বয়স ৩১ বছর। দেহের গড়ন ও চলাফেরা ঠিক শিশুর মতই। বয়স বাড়লেও বাড়েনি তার উচ্চতা বিকশিত হয়নি মন মানসিকতার।

যুবক বয়স চললেও সংসারের তার কাছে এখনো অচেনা।সারাদিন ছোট ছেলে মেয়েদের সাথে খেলাধুলা করে কাটছে জীবন।যুগের পর যুগ শিশু বয়সী আচরণে বাবা মা আছেন দুঃশ্চিন্তায়। চিকিৎসা করার পরেও শরীর ও মনের পরিবর্তন না হওয়ায় সমীরকে নিয়ে পরিবার ও এলাকাবাসীর চিন্তার শেষ নেই।

জানা গেছে, সমীর উদ্দিনের জন্ম ১৯৯২ সালে।সে দিনমজুর আজিম উদ্দিন ও আছিয়া বেগমের ১ম সন্তান।সংসারে তিন ভাই বোনের মধ্যে সে বড়।ছোট ভাই বোন বিয়ে করে সংসার করছেন। অথচ সমীর এখনো শিশু। তার সমবয়সী বন্ধু বান্ধবরা বিয়ে করে সংসার করলেও সমীর পড়ে আছে শিশুবেলার ফ্রেমে।সমীরের দেহের বয়স আর মনের বয়স যেন এক ফ্রেমে বন্দী।৩১ বছর বয়সী সমীর তার ছোট কিংবা সমবয়সীরা বিয়ে শাদী করে সংসারের হাল ধরলেও সমীরের জীবন নিয়ে বাবা মা আছেন দুঃশ্চিন্তায়।

সমীর উদ্দিনের মা আছিয়া বেগম বলেন, সমীর জন্মের পর থেকে এমন।তাকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছি।ওর বয়স ৩১ বছর হলেও সে কিছু বোঝে না।সংসার বিয়ে শাদী আত্মীয় স্বজন কোন কিছু বোঝে না।সারাদিন ছোট ছেলে মেয়ের সাথে খেলাধুলা করে। রাগ উঠলে ছোট মানুষের মত আচরণ করে।অনেক চিকিৎসা করেও কোন ফল পাই নাই। আমরা মরে গেলে ওর জীবন কেমনে চলবে আল্লাহ জানে।

সমীরের খেলার সাথী সিনথিয়া বলেন,সমীর আমার চাচ্চু হয়।চাচ্চু আগে বড় ভাইদের সাথে খেলাধুলা করত। এখন আমরা একসাথে খেলাধুলা করি। ও বড়দের সাথে খেলাধুলা করে না।তার সাথে দৌড়াদৌড়ি,মেলা মেলা,বউ বউ খেলাই।আমাদের সাথে ভালো ব্যবহার করে।কোন মারামারি করে না।

সমীরের প্রতিবেশী আকবর আলী বলেন, সমীররের বয়স যখন পাঁচ বছর তখন থেকে দেখি সমীরের শরীরে কোন পরিবর্তন নেই।ওর ছোট ভাই বিয়ে শাদী করে কর্মজীবন শুরু করছেন। সমীরের তো কিছু হলো না।তার বাবা মা গরীব। একটা ঘরের মধ্যে বাবা মা সবাইকে নিয়ে থাকেন।গ্রামের মানুষ আমরা যতটা পারি সাহায্য করি সরকারি ভাবে কোন সহযোগিতা করলে হয়তো সমীর ভালো থাকতে পারবে।

কুড়িগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন এস এম আমিনুল ইসলাম বলেন,এটি মুলত খর্বাকৃতির বাচ্চা।যাকে স্ট্যানডিং বেবি বলা হয়।মুলত পুষ্টির অভাবের কারনে জন্মগতভাবে এমন সন্তানের জন্ম হয়।জন্মের পর থেকে যদি আমরা সন্তানটির সঠিক চিকিৎসা করতে পারি তাহলে কিছুটা পরিবর্তন আনা সম্ভব।বিশেষ করে গর্ভবতী মা ও শিশুর সঠিক পরিচর্যা,আয়োডিনযুক্ত ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো হলে খর্বাকৃতি বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে।

দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//