বরেণ্য কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক রাহাত খানের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০২০ সালের ২৮ আগস্ট রাজধানীর নিউ ইস্কাটনের বাসায় তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিলো ৭৯ বছর।
রাহাত খান কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার জাওয়ার গ্রামে ১৯৪০ সালের ১৯ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন প্রায় ছ’শ বছরের পুরনো সম্ভ্রান্ত ও ঐতিহ্যবাহী পরিবারে সন্তান । ১৯৬৯ সালে তিনি দৈনিক ইত্তেফাকে সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন জীবন শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও পরে সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পাপলন করেছেন। ইত্তেফাকে উপ-সম্পাদকীয় কলামে সুহৃদ ছদ্ধনামে ‘চতুরঙ্গ’ কলামটিকে তিনি পাঠক প্রীয়তার শীর্ষে নিয়ে গিয়েছিলেন। সময়ের হিসেবে ষাটের দশকের লেখক রাহাত খান গদ্য রচনায় ছিলেন, অনবদ্য, ভিন্নমাত্রিক এবং অসাধারণ। তার উত্তুঙ্গস্পর্শি উচ্চতা সাহিত্যে তাকে বিশিষ্ট এবং আলাদাভাবে চিহ্নিত করে। তার শুরু গল্প লেখা দিয়ে। পরে উপন্যাস। তার গল্পগ্রন্থ অনিশ্চিত লোকালয়, ভালো মন্দের টাকা, অন্তহীন যাত্রা ইত্যাদি। উপন্যাস অমলধবল চাকরি, এক প্রিয় দর্শিনী, ছায়া দম্পতি, হে শূন্যতা, হে অনন্তের পাখি, সংঘর্ষ, মধ্য মাঠের খেলোয়াড়, হে মাত বঙ্গ, দুখিনি কমলা, হে মহা শূন্যতা, কিশোর উপন্যাস দিলুর গল্প ইত্যাদি।
রাহাত খানের ৪ ছেলে ১ মেয়ে। রাহাত খানের মৃত্যুর পরপরই আমেরিকা প্রবাসী সেজো ছেলে এবং দেশে বসবাসকারি মেজো ছেলে আকস্মিক হার্ট এটাকে’ মারা যান। একমাত্র মেয়ে আমেরিকায় অর্থনীতিবিদ, ব্যাঙ্কার। বড় ছেলে ঢাকায় ব্যবসা করেন।
রাহাত খান ছিলেন মৃদুভাষী, নিরহংকার ও নিভৃতচারী। গভীর মানবপ্রেমে উৎসারিত এক ব্যক্তি। ছিলেন আধুনিক ধারার এক অনন্য লেখক। রাহাত খান সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদানের জন্য মাত্র ৩৩ বছর বয়সে অর্জন করেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৩)। এছাড়াও রাষ্ট্রীয় একুশে পদকসহ (১৯৯৬) অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
আমরা একজন রাহাত খানকে হারিয়েছি আর বাংলা সাহিত্য হারিয়েছে এক শক্তিমান কথাশিল্পী ও ধীমান সাংবাদিককে। সৃজনশীল মানুষের মহৎ কাজের মৃত্যু নেই। রবীন্দ্রনাথের সোনার তরী গুণীজনের সৃষ্টিকে বয়ে বেড়ায় কাল থেকে কালান্তরে। রাহাত খান থাকবেন আমাদের অন্তরে আর লেখক রাহাত খান পাঠকের হৃদয়ে।
রাহাত খান ফাউন্ডেশন
–—————————
দেশ ও সমাজের বিশিষ্ট গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, প্রথিতযশা খ্যাতিমান সাংবাদিক, সাহিত্যিক এবং আমেরিকা, ইউরোপে অবস্থানরত লেখক, শিল্পী এবং রাহাত খানের অনুরাগী ও ভক্তদের সমন্বয়ে ‘রাহাত খান ফাউন্ডেশন’ বছরের শেষে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘ফাউন্ডেশনে’র কার্যক্রম ঘোষণা করবেন। রাহাত খানের সৃষ্টিগুলো বাঁচিয়ে রাখতে এবং তার স্মৃতি রক্ষার্থে ফাউন্ডেশন যথাযথ পদক্ষেপ নেবে বলে রাহাত খানের পারিবারিক সূত্র এবং ফাউন্ডেশনের অন্যতম উদ্যোক্তা, সিনিয়র সাংবাদিক, লেখক ও রাহাত খানের ভাগ্নে আলিমুজ্জামান জানিয়েছেন। আরো জানিয়েছেন যে, কতিপয় স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিবর্গ রাহাত খানকে হেয় প্রতিপন্ন করে, রাহাত খানের নাম যত্রতত্র ব্যবহার করছেন বা ভাঙাচ্ছেন। তাদের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে সতর্ক থাকতে অনুরোধও করা হয়েছে।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//আগস্ট ২৬,২০২৩//