এনামুল হক ॥ ২২জানুয়ারী,২০২৪॥
দেশের বৃহৎ চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজা নগরের মিলারদের সাথে চালের দর নির্ধারণে এক মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। রবিবার বিকেলে জেলা প্রশাসক এহতেশাম রেজার সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মিলাররা সম্প্রতি বর্ধিত কেজি প্রতি ৫টাকা হতে ২টাকা কমানোর অঙ্গীকার করেন মিলাররা।
ষ্টিয়ার জেলা প্রশাসন মিলারদের দেয়া প্রস্তাব মেনে নিয়ে মিল পর্যালে ৬২ টাকা এবং খুচরা বাজর দর কেজি প্রতি ৬৪ নির্ধারন এবং এই সিদ্ধান্ত মেনে চলার সতর্কতা জানিয়ে দেন। অন্যথায় বেশি দামে বিক্রি হলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। এসময় গণমাধ্যমের প্রশ্নের মুখে হট্টগোল শুরু করে দেন বাংলাদেশে চাল নিয়ে কারসাজির অন্যতম হোতা বলে খ্যাত রশিদ এগ্রোর স্বত্ত্বাধিকার আব্দুর রশিদ।
তবে এই সভায় চালের দাম কেজি প্রতি ২টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও সোমবার দিনভর কুষ্টিয়ার কোন চালের বাজারে এর কোন প্রভাব পড়েনি বলে জানাচ্ছেন ভোক্তা ও খুচরা বিক্রেতারা। কুষ্টিয়া মিউনিসিপ্যাল বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা আমিরুল জানায়, ‘গতকাল ডিসি সাহেব চালের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিলেও আমরা আজও মোকাম থেকে ওই সদ্য বর্ধিত ৬২/৬৩ টাকা দরেই কিনেতে হচ্ছে। আমরা কেজি প্রতি ১টাকা লাভ রেখে বিক্রী করছি।
বিকেল থেকে শুরু হয়ে প্রায় সন্ধা ৭টা পর্যন্ত চলা ওই সভায় অংশ নেন চালকল মালিক, আমদানীকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা। জেলা প্রশাসক বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের কাছে ধান-চাল কী দামে কেনা বেচা হয়েছে তার খোঁজখবর নেন।
সেখানে একজন ভোক্তা বলেন, কুষ্টিয়ার এমন কোন ধানের হাট নেই যেখানে ১২শ টাকার উর্দ্ধে প্রতি মন ধান বিক্রী হচ্ছে। তাহলে মিলাররা কিভাবে বলে ধানের দর উর্দ্ধগামী? এটা কার্যত: তাদেরই কারসাজি।
স্বর্ণা অটোরাইস মিলের মালিক আব্দুস সামাদ বলেন, ঘনকুয়াশা, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভোটের কারণে চালের দাম কিছুটা বাড়লেও এখন কমে যাচ্ছে। আগামীতে হয়ত আরও কিছুটা কমতে পারে।
বাংলাদেশ অটোরাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন কুষ্টিয়ার সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, সরু চালের মৌসুম থেকে ৯ মাস অতিক্রম করেছে। এই সময়ে প্রতিবছরই সরু চালের দাম বেড়ে থাকে। আমরা কমানোর চেষ্টা করছি। দেশ এগ্রোর আব্দুল খালেক বলেন, মিল মালিকদের অতিরিক্ত চাপ দিলে দাম আরও বেড়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, মাত্র ৫-৬ জন মিলার সিন্ডিকেট করে। প্রশাসনের দায়িত্ব তাদের খুঁজে বের করা।
বাংলাদেশ চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, চালের বাজার এখন প্রতিযোগিতামূলক। এখানে কেউ সিন্ডিকেট করে না। তিনিও সরকারি সংগ্রহ অভিযানের দরের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, কৃষকদের ন্যায্যমূল্য দিতে গিয়ে সরকারই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের কয়েকটি করপোরেট কোম্পানি দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এসময় সাংবাদিকরা ওইসবক কোম্পানীর নাম প্রকাশের অনুরোধ করলে আব্দুৃর রশিদ তাদের প্রকাশ না করে উল্টা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন, এমনকি তিনি সভস্থল ত্যাগ করে চলে যেতে উদ্যত হন।
সভায় কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা মিল পর্যায়ে কেজি প্রতি ৬২ থেকে ৬৩ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৬৪ থেকে ৬৫ নির্ধারণ করার প্রস্তাব দিলে সেখানে উপস্থিত ভোক্তা প্রতিনিধি, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও সাংবাদিকরা আপত্তি তোলেন। তাদের মতে বিদ্যমান বাজার দরেই ওই দাম চলমান আছে জানিয়ে বলেন, যেখান থেকে দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে পূর্বের সেই ৬১ টাকা কেজি দরে নিয়ে আসার দাবি জানান তারা। এসময় চালকল মালিকদের নেতা ওমর ফারুক ধান কেনা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে বলেন, ‘এতে বন্ধ হয়ে যাবে বাজারে চাল সরবরাহ’।
জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা বলেন, ‘গতকালের নির্ধারিত দর মিলাররা মানছেন না এমন ঘটনার সত্যতা পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সাথে মজুতদার ও ফটকা কারবারির মাধ্যমে দাম বাড়ানো হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুয়েক দিনের মধ্যেই মিল পর্যায়ে অভিযান শুরু হবে। আশা করছি দুই একদিনের মধ্যেই দাম আরও কমে আসবে।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//জানুয়ারী ২৩,২০২৪//