চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চট্টগ্রামে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, অধ্যাপক ও প্রফেসরের সিরিয়াল পাওয়া যেন সোনার হরিণ।
এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা নিতে যে ফিস গুণতে হয় তার থেকে পাঁচ গুণ টাকা গুণতে হয় সিরিয়ালের জন্য। এ যেন বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়।
চাহিদাসম্পন্ন ডাক্তারদের তালিকায় রয়েছেন নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হাসানুজ্জামান, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এমএ হাছান চৌধুরী ও গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ডা. শামীম বকস্ ও প্রফেসর জমিস উদ্দীন, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ সহকারি অধ্যাপক ডা. ইব্রাহিম চৌধুরীসহ অনেকেই।
অনেকেরই অভিযোগ, সিরিয়াল পেতে এসব ডাক্তারের এটেনডেন্ট বা সহকারীদের ঘুষ দিতে হয়। তবেই মেলে কাঙ্ক্ষিত সিরিয়াল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন অনেক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন, ডা. শামীম বকসের এটেনডেন্ট বাবলুকে ঘুষ না দিলে কখনোই সিরিয়াল মেলে না। তারা বলছেন, সেই ঘুষের পরিমাণ ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্তও ওঠে। অথচ ডা. শামীম বকসের ফিই ১ হাজার টাকা।
অনেকে আবার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এমএ হাছান চৌধুরীর এটেনডেন্টের বিরুদ্ধেও তুলেছেন ঘুষ নেওয়ার নালিশ। যদিও এর সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে কেউ কেউ বলেছেন, এমএ হাছানের সিরিয়াল নিতে সচরাচর টাকা দিতে হয় না।
মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) ফেসবুকভিত্তিক একটি জনপ্রিয় গ্রুপে এমএ খান নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করে লিখেন ‘মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. শামীম বকসের সিরিয়াল নিতে কম্পাউন্ডারকে ১৫০০ টাকা ঘুষ দিতে হবে। কিন্তু ডক্টরের ফি ১০০০ টাকা। এবং ডা. এমএ হাসানের সিরিয়ালের জন্য কম্পাউন্ডারকে ১০০০ টাকা ঘুষ দিতে হবে।’
তিনি আরও জানান, ‘সিএসসিআরে (হাসপাতাল) কিছু ডাক্তারের সিরিয়াল নেওয়ার জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়। টাকা ছাড়া তাদের সিরিয়াল মিলে না। ফোন নাম্বার একটা দিয়ে থাকে, যাতে হাজার বার ফোন দিলে কেউ রিসিভ করে না বা ফোন সংযোগ যায় না।’
নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে আরেফিন আবির মিনহাজ লিখেছেন, ‘ডা. শামিম বক্স এবং এমএ হাছানকে ৬ থেকে ৮ বার দেখিয়েছি। এজন্য ৮ থেকে ১০হাজার টাকা এসিস্ট্যান্টকে ঘুষ দিতে হয়েছে। প্রতিবার ডাক্তারের সাক্ষাতের সময় এসিস্ট্যান্ট ও ডাক্তারকে উভয়কে ফি দিতে হয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়ে ডা. শামীম বকসের এটেনডেন্ট বাবলুকে মুঠোফোনে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে সিরিয়াল দেয়ার অভিযোগ বানোয়াট। স্যারের সুনাম ক্ষুণ্ন ও আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটা চক্র এটি করছে।’
জানা গেছে, ডা. এমএ হাছান চৌধুরী প্রতিদিন তিনি তার চেম্বারে ৩০ জন রোগী দেখেন নতুন ও পুরাতন মিলে। কিন্তু এর বাইরে আরও প্রচুর রোগী সিরিয়ালের জন্য অপেক্ষায় থাকেন প্রতিদিনই। অপেক্ষায় থাকলেও অনেকেরই শেষপর্যন্ত তাকে দেখানোর সুযোগ হয় না।
এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে ডা. এমএ হাছান চৌধুরী বলেন, ‘আমি সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চেম্বারে রোগী দেখি। এর আগের সময়গুলোতে আমার বিভিন্ন জায়গায় ক্লাশ নিতে হয়। এর ফাঁকে আমি অন কলে রোগী দেখতে যাই। কিন্তু রোগীরা আমার সিরিয়াল না পেয়ে প্রাইভেট ক্লিনিক কিংবা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আমাকে দেখাবে— এটা রোগীদের বিষয়। সেখানে আমি কী বলতে পারি?’
অন্যদিকে নিজের চেম্বারে ডা. শামীম বকসের রোগী দেখার কথা ২০ জন। তবে সিরিয়াল থাকে ৩০ জনের মতো। বাকি আরও ২০ জন রেফারেল হয়। সবমিলিয়ে বৃহস্পতি ও শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন ৫০ জনেরও বেশি রোগী দেখে থাকেন তিনি।
শামীম বকস্ বলেন, ‘লন্ডনে বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসক দেখাতে চাইলে ৮ থেকে ৯ মাস আগে সিরিয়াল পাওয়া যায় না। কিন্তু আমাদের দেশে সামান্য জ্বর-সর্দি-কাশিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে খুঁজি। আর এজন্যই গুরুতর রোগী সিরিয়াল পায় না।’
আর//দৈনিক দেশতথ্য//২ সেপ্টেম্বর-২০২২

Discussion about this post