রবিবার মধ্য রাত হতে লগ্ন শুরু হয়েছে। সোমবার ভোরে সূর্য উদয়ের সময় মূলপুজো শুরু হবে। রমণীকূল নদীর স্রোতধারায় বুক পানিতে নেমে উদীয়মান সূর্যকে পুজো করবেন। নানা রংঙ্গে কুলা, ডালা, চাইলন ফল ফলাদি দিয়ে সাজিয়ে সূর্যকে ভোগ দিবেন। এসময় উলুধনি, শাঁক, ডাক ঢল বাজবে। পুরোহীত গণ মন্ত্র ও শ্লোক জপবেন।
দু’দেশের মধ্যে ধর্মীয় সম্প্রীতি বাংলাদেশের নদীর জলে চেংড়াবান্ধায় ভারতীয়দের ছট (সূর্য) পুজোর আয়োজন। নির্বিঘ্নে পুজা পালনে বিজিবি- বিএসএফ পাহারায় থাকবে। পতাকা বৈঠকে সমাঝতা হয়েছে। শতবছর ধরে একই নিয়মে চলে আসছে এই পুজো করার দৃশ্য। এটি সীমান্ত গ্রামের মানুসের কাছে ছটপুজো বা সূর্য পুজো নামে পরিচিত।
জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী সীমান্তের চেংরাবান্ধায় ধরলা নদীর পাড়ে বুক পানিতে নেমে সেমাবার ভোরে ছটপুজো বা সূর্যপুজো আয়োজন করেছে ভারত। ধরলা নদী এখানে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। একপাড় বাংলাদেশ ওপারে ভারত। নদীটির ওপার কোথাও ভারতে আবার কোথাও বাংলাদেশের সীমান্তে এঁকে বেঁকে গেছে। ছটপুজো যেখানে অনুষ্ঠিত হবে সেখানে বাংলাদেশের চেংরাবান্ধা মাষ্টার পাড়া গ্রাম ভারতের চেংরাবান্ধা গ্রাম।
শতশত বছর ধরে এখানে এই সীমান্তে ছটপুজো হয়ে আসেছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। দুই দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির নির্দশন এটি। বুড়িমারী ও চেংরাবান্ধা বৃটিশ আমল হতেই ব্যবসা বানিজ্যে সমৃদ্ধ ছিল। এই পথ দিয়ে রেলওয়ের মাধ্যমে বৃটিশরা সৈন্য রসদ পাঠাত। গুরুত্বের কারণে চেংরাবান্ধা ধরলা নদী বন্দরও এক সময় জনপ্রিয় ছিল। এই চেংরাবান্ধা নদী ও রেলওয়ে যোগাযোগের কারণে বৃটিশরা বিহার হতে পশ্চিমা নিম্নবর্ণেও হিন্দু সম্প্রদায়কে নিয়ে এসে বসতি গড়ে তুলে। তারা মুলত সূতধর, রবিদাস, হরিজন, প্রভূদাসী সম্প্রদায়ের ছিল। এখনো এখানে একটি যৌন পল্লী রয়েছে। যাকে হিন্দু ধর্মে প্রভূতি দাসী বলে।
এই সম্প্রদাসের মানুষের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ছটপুজো বা সূর্য পুজো। এরা নিজেদের সূর্যের সন্তান মনে করে। তার তারা প্রতিবছর সূর্য পুজো করে থাকে। সূর্য তাদেও দেবতা। সূর্য তাদের জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি এনে দেবে। এই ছটপুজোর লঘ্ন আজ রবিবার মধ্য রাত হতে লগ্ন শুরু হয়েছে। সোমবার ভোরে সূর্য উদয়ের সময় মূলপুজো শুরু হবে। রমণীকূল নদীর স্রোতধারায় বুক পানিতে নেমে উদীয়মানর সূর্যকে পুজো করবে। নানা রংঙ্গে কুলা, ডালা, চাইলন ফল ফলারি দিয়ে সাজিয়ে সূর্যকে ভোগ দিবেন রমণীরা। এসময় উলুধনি, শাঁক, ডাক ঢল বাজবে। পুরোহীত গণ মন্ত্র ও শ্লোক জপবেন।
ভোরের আলো ফুটিয়ে উঠতে না উঠতে মিলন মেলায় পরিণিত হয়ে যাবে নদী পাড়ে। চেংবাবান্ধা মাষ্টার পাড়া ও ভারতে চেংরাবন্ধার মানুষ একেবাওে একাকার হয়ে যাবে। এই প্রতিবেশী গ্রামটিতে ভৌগলিক কারণে হিন্দু সম্প্রদায় বেশী বসবাস করে আসছে। বৃটিশ শাসন আমলে দেশ একটি ছিল। ১৯৪৭ সালে দুইটি দেশ হয়ে যায়। ভারত ও পাকিস্তান। এখন বাংলাদেশ নামের স্বাধীন রাষ্টে পড়েছে চেংরাবান্ধা মাষ্টার পাড়া গ্রাম। ১৯৭১ সালে মহানমুক্তিযুদ্ধেও মাধ্যমে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।
এদিকে ভারতীয় সূত্রে জানা গেছে, চেংরাবান্ধা ছটপুজোয় বাংলাদেশী দূর্বৃত্তদের হামলার আশংকা রয়েছে। তাই এসএফ- ভারতীয় পুলিশের ছটপুজো উপলক্ষ্যে চেংরাবান্ধা সীমান্তে টহল জোরদার করেছে। ভারতীয় পত্র পত্রিকা দৈনিক উত্তরবঙ্গ সংবাদ) মাধ্যমে জানা গেছে, বাংলাদেশি দুর্বৃত্তের হামলা রুখতে চ্যাংরাবান্ধা সীমান্তের ছটপুজোর ঘাটে পুলিশ ও বিএসএফের কড়া নজরদারি থাকছে । পুলিশ ও বিএসএফের প্রহরার মধ্য দিয়েই সীমান্তের ধরলা নদীতে এবারও ছটপুজোর (সূর্যপুজোয়) আনন্দে মেতে উঠবেন সীমান্তবাসী।
বিএসএফের জলপাইগুড়ি সেক্টরের ডিআইজি ব্রিগেডিয়ার বিজয় মেহতার নির্দেশে নিরাপত্তা বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শনিবার সীমান্তের ওই ছটপুজো ঘাট পরিদর্শন করেন স্থানীয় বিএসএফ কর্তারা। ডিআইজি জানিয়েছেন, এবারও ছটপুজোয় চ্যাংরাবান্ধা সীমান্তে বিএসএফের বিশেষ নজরদারি থাকছে।
রবিবার সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ছটপুজোর ঘাট সংস্কার ও সাজানোর কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। নদী ঘাট ঘুরে গেছে মেখলিগঞ্জ পুলিশের এসডিপিও অরিজিৎ পাল চৌধুরী, সিআই পূরণ রাই, ওসি রাহুল তালুকদার, বিডিও অরুণ কুমার সামন্ত। যেহেতু জায়গাটি একেবারে বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা তার উপর নেই কোনও কাঁটাতারের বেড়া। তাই প্রশাসনের তরফে নিরাপত্তার দিকটি গুরুত্ব দিয়েছে। যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকবে আইনশৃংখলাবাহিনী। এমন কী বিষয়টি জানিছে বাংলাদেশের উচ্চ মহলে। তারাও নিরাপত্তার বিষয়টি দেখবেন। সেই সাথে পুজো অনুষ্ঠানে সহায়তা করবেন। বিএসএফের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে যে, সর্বদাই সীমান্ত এলাকায় কঠোর সতর্কতা জারি থাকে। ছটপুজোর কথা মাথায় রেখে বাড়তি সতর্কতা থাকছে।
এদিকে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষি বাহিনীর ৬১ তিস্তা বিজিবির বুড়িমারী কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার খায়রুল ইসলাম জানান, ছট পুজো বা সূর্যপুজোর বিষয়টি দুই দেশের সীমান্ত বাহিনী জানে। সমঝোতার ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশের মাষ্টার পাড়া ও ভারতের চেংরাবান্ধা ঘেঁষা সীমান্তে। পুজোর স্থান ভারতেই পড়েছে কিন্তু নদীর পানি বাংলাদেশ হতে গড়িয়ে সেখানে যাচ্ছে। বিজিবিও শর্তক রয়েছে। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না বলে আশা প্রকাশ করেছেন। সেখানে বিজিবির টহল পার্টি জোরদার করা হয়েছে।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//অক্টোবর ৩১,২০২২//

Discussion about this post