পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের প্রায় ২২ হাজার মানুষ রয়েছে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে। এ ইউনিয়ন গঠিত হয়েছে ১১টি চর নিয়ে। এখানের অধিকাংশ পরিবার জেলে। নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বহ করেন। এইসকল মানুষের জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে এখানে কোন স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মিত হয়নি এখনো । অসুস্থ হলে তাদেরকে চিকিৎসার জন্য উত্তাল তেঁতুলিয়া নদী পাড়ি দিয়ে বাউফল সদরে আসতে হয়।
স্থানীয়রা জানান, একটি ইউনিয়নে তিনটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক থাকার কথা থাকলে এ ইউনিয়নে রয়েছে মাত্র একটি ক্লিনিক। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ ক্লিনিকটি বর্তমানে জরাজীর্ণ। একজন প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) একজন স্বাস্থ্য সহকারী দিয়ে কোন রকম চলছে স্বাস্থ্য সেবা। নিয়ম অনুযায়ী ওই কমিউনিটি ক্লিনিকে সপ্তাহে দুইদিন একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ও তিনদিন পর পর একজন পরিবার কল্যাণ সহকারীর (এফ ডবিøউ এ) স্বাস্থ্য সেবা দেয়া কথা থাকলেও ওই এলাকার মানুষ তাদের আজ পর্যন্ত দেখা পায়নি । বিধি অনুযায়ি একটি ইউনিয়নে ৬ হাজার মানুষের জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিক থাকার কথা। সেই হিসাবে এ ইউনিয়ে ৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক থাকার কথা থাকলেও সেখানে ২২ হাজার মানুষের জন্য ১টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এ ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সেবার জন্য প্রতি দুই পর পর ১কিট ঔষধ সামগ্রী দেওয়া হয় । যা দিয়ে এই বিশাল জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।
সরেজমিনে চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চর ওয়াডেল কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা গেছে, জ্বর,সর্দি-কাশি ও এলার্জি ও চর্মরোগসহসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন ওই ক্লিনিকে ৪৫/৫০ জন মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন। যাদের অধিকাংশ বৃদ্ধ, গর্ভবতী মা ও শিশু। ক্লিনিকের সিএইচসিপি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা পরামর্শ ও বিনামূল্য কিছু ওষুধ দিচ্ছেন। বিপুল সংখ্যক রোগীকে একা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। এছাড়া ঔষধ সংকটও রয়েছে।
কথা হয় মাতৃত্বকালীন সেবা নিতে আসা দিয়ারা কচুয়া গ্রামের আসমা বেগম (৩৯), রায়সাহেবের রাবেয়া বেগম (২৯) ও চর ওয়াডেলের ঝুমুর বেগম (২৫)সহ অনেকের সঙ্গে। তাঁরা সবাই অভিন্ন সুরে বলেন, প্রায় ৫-৬ কিলোমিটার পথ হেঁটে চিকিৎসা নিতে এই ক্লিনিকে আসতে হয়। এ ইউনিয়নে আরো কয়েকটি ক্লিনিক খাকলে এতো দুর্ভোগ পোহাতে হত না।
এ বিষয়ে চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চরওয়াডেল কমিউনিটি ক্লিনিকের কমউনিটি হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) মোঃ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, একটি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ও তিনটি কমউনিটি ক্লিনিকের বিপরীতে মাত্র একটি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এই ক্লিনিকে বিশাল জনগোষ্ঠির চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব নয়।’
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য,০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

Discussion about this post