শেখ সুদীপ্ত শাহীন, লালমনিরহাট, ২৮ ফেব্রæয়ারি \
তিস্তার চরে বাঘ আতস্ক । বাঘে শিয়াল ধরে ধরে খাচ্ছে। বেশ কয়েকটি অর্ধ খাওয়া শিয়ালের নারী ভুড়ি, চামড়া ভুট্টাখেতে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছে। এই বাঘ আতস্কের কারণে চরের জমিতে ভুট্টা, গম, তামাক সহ নানা ফসলের পরিচর্যায় গ্রামবাসী ও কৃষি দিনমজুর কাজে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। আতঙ্কে কাটছে গ্রামবাসীর দিন।
জানা গেছে, দুইদিন আগে জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের মধ্যধুবনী গ্রামের জনৈক জিয়ারুলের স্ত্রী কয়েকজন কৃষিক শ্রমিক নিয়ে পিঁয়াজ উত্তোলন করতে যায়। সেখানে তারা ভুট্টাখেত হতে বাঘের মত দুইটি প্রাণী চরে ঘুরে বেড়াতে দেখেন।
এসময় তারা ভয়ে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাড়ি চলে আসে। পরের দিন গ্রামটির দুই কিশোর তিস্তা নদীতে মাছ ধরতে যায়। এসময় বাঘের মত, আবার কেউ বলছে হায়নার মত দুইটি প্রাণী ঘুরতে দেখে। প্রাণী দুইটি কিশোরদের ধাওয়া করে। তারা নদীতে লাপিয়ে পড়ে প্রাণে রক্ষা পায়। পরে অন্যান্য মৎস্য শিকারীদের সহায়তায় বাড়ি ফিরে আসে। এখবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে চরের গ্রামটিতে আতস্ক ছড়িয়ে পড়ে।
গ্রামবাসীরা চরে প্রাণীটির খোঁজ করতে থাকে। তারা দেখতে পায় বাঘের থাবারমত বেশকিছু পায়ের চিহ্নি। আবার কয়েকটি শিয়ালকে মৃত ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখে। কোন কোন শিয়ালের নাড়ি ভুড়ি চামড়া পড়ে আছে। চরের বাসিন্ধা রমজান আলী(৪৫) বলেন, এই প্রথম চরে মৃত শিয়াল ও অর্ধ খুবলে খাওয়া মৃত শিয়াল চরের ভুট্টা খেতে পড়ে থাকতে দেখেছি। ধারণা করা হচ্ছে হিংস্র কোন প্রাণী শিয়াল গুলোকে ধরে ধরে খাচ্ছে ও মেরে ফেলছে।
এসব ঘটনায় তিস্তা নদীর চর ও উপকূলের গ্রাম গুলোতে শতশত পরিবারের নির্ঘূম রাত আটছে। তারা বাঘ আতংকে তিস্তা চরের ভুট্টাখেত ও অন্যান্য ফসলের মাঠ পরিচর্যায় যেতে ভয় পাচ্ছে। এমন কি কোন কৃষিশ্রমিক চরে কাজ করতে যেতে সাহস করছে না। তিস্তার চরে বাঘ বাহির হওয়ার ঘটনা এবারেই প্রথম নয়। এর আগেও বেশ কয়েক বার গ্রামবাসী বাঘের অস্তিত্ব পেয়ে ছিল। এমন কি গ্রামবাসী সেই বাঘ গুলোকে পিটিয়ে হত্যা করে ফেলে। সরকারি ভাবে বাঘের আক্রমণ হতে রক্ষায় কেউ না আসায় গ্রামবাসীরা সেই সব বাঘের প্রতিনিষ্ঠুর আচরণ করে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। মেরে ফেলা বাঘ গুলোছিল চিতাবাঘ, মেছো বাঘ, বারবিড়াল। এসব বাঘ তিস্তা নদীর ওপারে ভারতীয় জঙ্গল হতে নদী পাড়ি দিয়ে এসে থাকতে পারে।
২০১১ সালের ৮ অক্টোবর জেলার পাটগ্রাম উপজেলার জগতবেড় ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রাম মোহাম্মদপুরে ভারত থেকে আসা চিতা বাঘের আক্রমণে কমপক্ষে ২০ ব্যক্তি আহত হয়ে ছিল। ২জনের অবস্থা আশংকাজনক ছিল। এদের মধ্যে একজন পাটগ্রাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কাজী আসাদকে(৩৪) । বাঘটিকে পিটিয়ে হত্যা করে জনতা। ২০১৪ সালের ৬ ডিসেম্বর শনিবার জেলার আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মহিষাশহর গ্রামের ৬ জন বাঘের বাচ্চার আক্রমণে আহত হয়। পরে গ্রামবাসী বাঘের বাচ্চাটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। ২০১৯ সালের ১৯ জুন জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার দক্ষিণ পারুলিয়া গ্রামে বাঘের আক্রমণে দুই ভাই আহত হয়েছিল এরা হয়েন, শফিকুল (৩৫) ও মজিদুল(৩৩) এরা ওই গ্রামের মামুন মিয়ার ছেলে।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//ফেব্রুয়ারী ২৮,২০২৪//

Discussion about this post