বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। পার হয়ে গেল তার জন্মজয়ন্তী। ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (১৮৯৯সাল) ভারতের বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন।
কাজী নজরুল ইসলামের ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম অগ্রণী কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ ও দার্শনিক। তিনি বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখযোগ্য।
দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা ও গান ছিল সমানভাবে সমাদৃত। তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ।
বাংলা মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার।
তাঁর কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে–কাজেই “বিদ্রোহী কবি”, তাঁর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে উভয় বাংলাতে প্রতি বৎসর উদযাপিত হয়ে থাকে।
ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি মূলত কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। নজরুল প্রায় ৩০০০ গান রচনা করেছেন। তিনি অধিকাংশ গানের সুরারোপ করেছেন। যেগুলো এখন নজরুল সঙ্গীত বা “নজরুল গীতি” নামে পরিচিত এবং বিশেষ জনপ্রিয়।
কবি সবসময়ই কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে ছিলেন। ধর্মীয় লিঙ্গভেদের বিরুদ্ধেও তিনি লিখেছেন। ধার্মিক মুসলিম সমাজ এবং অবহেলিত ভারতীয় জনগণের সাথে তার বিশেষ সম্পর্ক ছিল। তার সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে ভালোবাসা, মুক্তি এবং বিদ্রোহ। বাংলা কাব্যে তিনি এক নতুন ধারার জন্ম দেন। এটি হল ইসলামী সঙ্গীত তথা গজল, এর পাশাপাশি তিনি অনেক উৎকৃষ্ট শ্যামা সংগীত ও হিন্দু ভক্তিগীতিও রচনা করেন।
বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ১৯৭২ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকায় আসেন। এসময় তাঁকে বাংলাদেশের নাগরীকত্ব প্রদান করা হয়। ১২ই ভাদ্র ১৯৭৬ সালে শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কবি নজরুল।
তার রচনায় তিনি লিখেছেন- ‘মসজিদের ওই পাশে আমার কবর দিও ভাই” ঠিক সেভাবেই তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। সেখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
(লেখক- নূর মোহাম্মদ রবিউল, কবি ও সাংবাদিক, আমলাপাড়া, কুষ্টিয়া।)
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//মে ২৫,২০২৩//