এনামুল হক খান দোলন সোনা চোরাকারবারিদের গডফাদার হিসেবে চিহ্নিত। তাঁকে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)-এর সকল পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বাজুসের কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভায় দোলনের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরপর বাজুসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মানব সম্পদ ও প্রশাসন) তানভীর আহমেদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে বাজুস কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় বলা হয়, বাজুস কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সভাপতি এনামুল হক খান দোলনকে বাজুসের দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল পদ থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
একটি সূত্র জানিয়েছে, দোলনের সোনা চোরাচালানের বিষয়ে গত সোমবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। এরপর সোমবার (১০ এপ্রিল) সকালে একটি ফ্লাইটে তিনি ব্যাংককে পালিয়ে গেছেন। তিনি সোনা চোরচালান চক্রের ছত্রছায়ায় থাইল্যান্ডে অবস্থান করছেন। থাই পুলিশ ব্যাংককে আত্মগোপনে থাকা চোরা দোলনকে খুঁজছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে, শুল্ক গোয়েন্দাদের কড়া নজরদারির মধ্যেও শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আসছে সোনা। বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে সোনা পাচার হচ্ছে পাশ্ববর্তী দেশগুলোতে। চোরাচালানে জড়িত সোনা ব্যবসায়ী দোলনের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফলে সোনা চোরাচালানের অব্যাহত রেখেছে দোলন। তার মালিকানাধীন ডায়মন্ড অ্যান্ড ডিভার্স ও শারমিন জুয়েলার্সের আড়ালে তিনি স্বর্ণ পাচার সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সোনা চোরাচালানের মূল হোতা দোলন ধরা ছোয়ার বাইরে থাকায় কোন ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না সোনা পাচার।
শুল্ক গোয়েন্দারা মাঝে মধ্যে চোরাচালানের সোনা জব্দ করছেন। বাহকদের তুলে দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। মামলা হচ্ছে, তদন্ত হচ্ছে। কিন্তু চোরাচালানের মূলহোতা এনামুল হক খান অধরাই থেকে যাচ্ছেন। তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নজরদারিতে রয়েছেন সোনা চোরকারবারিদের গড ফাদার দোলন।
কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সুত্র জানিয়েছে, এনামুল হক খান দোলন দুবাই এবং সিঙ্গাপুর সিন্ডিকেটের সহায়তায় দুবাই এবং সিঙ্গাপুর হতে বাংলাদেশে আগমনকারী বিভিন্ন যাত্রীর মাধ্যমে সোনা ও অলংকার দেশে পাঠান। তিনি বিধি বর্হি:ভূত ভাবে মূল্য পরিশোধসহ বিদেশে অর্থ পাচার করেন।
বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে এনামুল হক খান দোলনের মানি লন্ডারিংয়ের সুনিদিষ্ট তথ্য দিয়েছে দুবাইয়ের ফিন্যান্সিয়াল ইল্টেলিজেন্স ইউনিট। তার বিরুদ্ধে দুবাই ভিত্তিক স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটে জড়িত থাকার তথ্য দিয়েছে দুবাইয়ের অর্থ পাচার প্রতিরোধ ইউনিট।
চোরাচালানের রহস্য উন্মোচনের জন্য দোলনকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মজুদ সব স্বর্ণের হিসাব নিয়েছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, দেশে-বিদেশে অন্তত অর্ধশতাধিক গডফাদার চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। এসব গডফাদারদের শনাক্ত ও পরিচয় বের করা হয়েছে। কিন্তু উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ ও অনেক গডফাদার দেশের বাহিরে থাকার কারণে তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। অবৈধ ভাবে আসা সোনার টাকা দিয়ে অস্ত্র ও মাদক কেনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সুত্র।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//এপ্রিল ১১,২০২৩//

Discussion about this post